দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রতিদিন ভোর হলেই নিজের গিটার কেস, বাঁশি, নোটবুক নিয়ে অন্ধ্রভবনের দিকে হাঁটতে দেখা যায় এই ব্যক্তিকে। বেশির ভাগ দিনই থাকেন খালি পায়ে। তিনি গিটার, বাঁশি শেখান।
তিনি যেনো নিজেই ছটফট করতে থাকেন। কারণ অপেক্ষা করছেন তাঁর ছাত্রছাত্রীরা। ফুটপাথেই ক্লাস নেন তিনি, আবার কখনও মাঠে বসে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে রয়েছে এক টাকার একটি করে কয়েন। কেনো? প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের থেকে এই এক টাকাই গুরুদক্ষিণা হিসেবে নিয়ে থাকেন তিনি। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী তাঁকে এক নামেই চেনে। তিনি হলেন গিটার রাও।
প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ২০০ শিক্ষার্থী আসেন তাঁর কাছে। তবে নাম গিটার রাও হলেও বাঁশিতেও সমান দক্ষ পঞ্চান্ন বছর বয়সী যশবীর রাও।
মুখে প্রায় সাদা চাপ দাড়ি, পাঞ্জাবি বা সুতির জামা পরা, ছোট একটা ঝুপড়িতে থাকা এক্কেবারে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মতোই জীবনযাপন করেন তিনি। তিনি ২০০৯ সাল পর্যন্ত বহুজাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পেশায় তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর ভালো লাগতো না কর্পোরেট চাকরি। অবসাদে ভুগছিলেন তিনি।
কলেজ জীবনে শেখা গানকে ফিরিয়ে আনতে চাকরি ছাড়ার পর আস্তে আস্তে বাজারে তার ঋণ হতে শুরু করে। পরিবারের থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন এক সময়। অবসাদ তাঁর জীবনে আরও বাড়তে থাকে। রাওয়ের এক ঘনিষ্ঠের কথায়, তিনি একবার তিরুপতি মন্দিরে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়েই প্রথম গিটার ও বাঁশি শেখানোর ভাবনা আসে।
তারপর দিল্লিতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছে আবেদন করেন যে, ভারতবাসীর মধ্যে যে সঙ্গীত প্রেম রয়েছে, তা আরও বাড়িয়ে তুলতে প্রতিটি স্কুলেই ছোট থেকে পাঠ্যক্রমে সঙ্গীত অন্তর্ভুক্ত করার কথা। ভেবেছেন এই প্রকল্পটির নাম হবে ‘সঙ্গীত ভারত ক্যাম্পেন’।
জাত ধর্ম নির্বিশেষে মানুষরা ছুটে আসেন তাঁর কাছে গিটার শিখতে। রাওয় দাবি করেছেন, তাঁর কাছে সুর শিখতে আসেন সামরিক অফিসার ও আমলারা। সাক্ষাৎকার নিতে এসে কেও আবার শিখে গিয়েছেন গিটারের প্রাথমিক পাঠ, এমনও হয়েছে।
সময়ও তিনি নির্ধারণ করে রেখেছেন। দিল্লির অন্ধ্র ভবনে ভোর ৬টা হতে ৯টা, বিজয় চকে দুপুর ২টা হতে ৬টা এবং ইন্ডিয়া গেটে সন্ধ্যা ৬টা হতে রাত ৯টা ক্লাস নেন রাওয়। রাওয়ের মতে, মন ভালো রাখাটাই তার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ বেশির ভাগ মানুষের কাছেই অর্থ থাকে। তবুও তাদের মন ভালো থাকে না। এই ভাবনা হতেই সুরকে বেছে নেওয়া তাঁর।
রাও তেলঙ্গানা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সঙ্গীতে স্নাতক স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এখন তার ইচ্ছে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করা। তিনি গিটার, বাঁশি এবং আরও বাজাতে পারেন বেহালা ও কি বোর্ড।