দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ছোট্ট একটি খবর আর তা হলো প্রাণীরা নাকি ভূমিকম্পের আগাম সংকেত পায়! বিষয়টি কতোখানি সত্যি তা আমাদের পুরোপুরি জানা নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচারও হয়েছে।
খবরে বলা হয়, আঁচ করার মতো সুপার পাওয়ার কিংবা যাকে বলে‘ সিক্সথ সেন্স’ প্রাণীদের রয়েছে বলে প্রমাণ পাননি গবেষকরা; বরং শব্দটা এমন হতে পারে ‘বুঝতে পারে’। তবে বিষয়টি পরিষ্কার হবে ভূমিকম্পের পরিসংখ্যান দেখলে।
প্রতিবছর অন্ততপক্ষে ৫ লাখের মতো ভূমিকম্প হয়। মানুষ মানুষ বুঝতে পারে ১ লাখ কম্পন। আর ক্ষতিসাধিত হয় ১০০ কম্পনে। এগুলো বিচার করেই গবেষকরা বলেছেন, কোনো কোনো কম্পন হয়তো প্রাণীরা বুঝতে পারে, যেগুলো মানুষ কখনও বুঝতে পারে না। কিংবা এমন হতে পারে প্রাণীরা বড়জোর মানুষের থেকে মিনিট কয়েক আগে বুঝতে পারে।
এই কথাটির প্রচলন আছে খ্রিস্টপূর্ব ৩৭৩ অব্দ হতে। গ্রিসের শহর হেলিসের একটি ঘটনা। ঐতিহাসিকরা বলে গেছেন যে, ইঁদুর, সাপের মতো প্রাণী হেলিস ভূমিকম্পের দিনকয় পূর্বে জায়গা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। লোকেরা আরও বলেছে যে, ভূমিকম্প হবে আঁচ করতে পেরেই শিংমাছ নাকি পাগলের মতো ছোটাছুটি করে, মুরগি ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়।
আবার কুকুর, বিড়ালও অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। কথাগুলো আমলে নিয়ে সত্তরের দশকে বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রকল্প চালায় ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস)। তবে প্রাণীদের ভূমিকম্প বুঝতে পারার সপক্ষে কোনো দলিল হাজির করা সম্ভব হয়নি। ইউএসজিএসের অ্যান্ডি মাইকেল বলেছেন যে, ‘লোকমুখে ফেরা গল্পগুলো আমরা আমলে নিয়েছি। প্রাণীদের চোখে চোখ রেখেছিলাম; তবে বলার মতো কিছু অবশ্য পাইনি। ’ জানা যায় যে, ২০১১ সালে ভার্জিনিয়ায় ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল।
স্মিথসোনিয়ানস ন্যাশনাল জুওলজিক্যাল পার্কের কর্মীরা প্রাণিকুলের মধ্যে পৃথক বিশেষ কোনো আচরণ খেয়াল করেছেন বলে মনে করতে পারেননি। শুধু কয়েক মিনিট পূর্বে বানররা গাছে চড়ে বসেছিল বলে তারা জানিয়েছেন। প্রাণীদের পক্ষে একটি ঘটনার উদাহরণ টানেন অনেকেই। যেটি ঘটেছিল ১৯৭৫ সালে চীনের হাইচ্যাংয়ে। সেইবার ব্যাঙের জলাভূমি ছেড়ে রাস্তায় জড়ো হওয়ার বিষয়টি খেয়াল করেই নাকি ভূমিকম্পের আগে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল; তবে পরের বছরই চীনের আরেকটি শহর ট্যাংশ্যানে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। সেইবার আড়াই লাখ লোক মারা যায়। ভূকম্পবিদরা ভূমিকম্পের পূর্বে শহরটিতে পর্যবেক্ষণে ছিলেন। তবে পূর্বাভাস দেওয়ার মতো কোনো লক্ষণ তারা দেখতে পাননি। গবেষকরা বলেছেন, ব্যাঙ জলাভূমি ছেড়েছিল পানিতে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটার কারণেই। এই ক্ষেত্রে আদতেও ব্যাঙের সিক্সথ সেন্স বলে কিছু কাজই করেনি। অর্থাৎ প্রাণীকুলের আগাম বুঝতে পারার বিষয়টি টেকে না বলা যায়।