দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পুরান ঢাকার নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আজ তিন বছর। ২০১০ সালের আজকের এই দিনে নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১২৫ জন মানুষ। পঙ্গুত্ববরণ করেন অনেকেই। কিন্তু এখনও অরক্ষিত রয়েছে নিমতলী।
পৃথিবীতে এক একটা ঘটনা ঘটে। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় মানুষ হতবিহল হয়ে পড়েন। কিন্তু কোন এক সময় দেখা যায়, সেই ঘটনা তিনি ভুলেও গেছেন। এমন বাস্তবতা এই সমাজে, এই লোকালয়ে আমরা সব সময় দেখে থাকি। তিন বছর আগে নিমতলীতে যে ঘটনা ঘটেছিল সেই ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেটিই ছিল সকলের কামনা। কিন্তু সেই নিমতলীর ঘটনার পর তিন বছর পার হলেও এখনও কোন উন্নতি ঘটেনি। এখনও সেখানে চলছে অবৈধসব ব্যবসা। এখনও সেখানে রাসায়নিক পদার্থ সেভাবেই রাখা হচ্ছে। আবাসিক এলাকায় এধরনের ব্যবসা বন্ধে এখন পর্যন্ত কার্যকরি তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
সম্প্রতি খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারটি থেকে সেদিন বিস্ফোরণ ঘটে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল সেটিতে এখনো শর্ট সার্কিট হয়। গত মে মাসের ১১ তারিখ রাতে ট্রান্সফরমারটি থেকে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট লেগে তার ছিঁড়ে যায়। এ ছাড়াও নিমতলী দুর্ঘটনার পর বেশ কয়েকবার এ ট্রান্সফরমারটি থেকে বৈদ্যুতিক গোলযোগ দেখা দিয়েছে। ট্রান্সফরমারটিতে প্রায়ই স্ফুলিঙ্গ ও ধোঁয়া দেখা দেয়। এ সময় স্থানীয়রা বিশেষ করে শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এদিকে নবাব কাটরার ৪৩ নম্বর বাড়ির একটি কারখানায় রাখা রাসায়নিক পদার্থ ট্রান্সফরমারের স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে এসে সেদিন আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সে থেকে নিরাপত্তার জন্য আবাসিক এলাকায় কারখানা স্থাপন বা রাসায়নিক পদার্থ রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও তা মানা হচ্ছে না। নিয়ম ভঙ্গ করে নবাব কাটরা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ব্যবসায়ীরা আবাসিক এলাকার ভেতরেই অসংখ্য কারখানা গড়ে তুলেছেন। যার মধ্যে জুতার সলিউশন তৈরির আঠাসহ অন্যান্য দাহ্য পদার্থ রয়েছে। এ অবস্থায় অরক্ষিতভাবে জীবন ঝুঁকির মধ্যে রেখেই নিমতলীর বাসিন্দারা সেখানে বসবাস করছেন।
সেই তিন কন্যা এখন ভালো আছেন
নিমতলী ট্র্যাজেডিতে মা-বাবা ও স্বজনদের হারিয়েছেন রত্না, রুনা ও আসমা নামের নবাব কাটরার তিন বাসিন্দা। সে সময় বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রত্না ও আসমা। কিন্তু দুর্ঘটনায় অভিভাবকহারা এ মেয়েদের দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মা হয়ে নিজ দায়িত্বে রত্না-রুনা ও আসমার বিয়ে দেন সুমন, জামিল ও আলমগীরের সঙ্গে। বর্তমানে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন এই তিন কন্যা।
সময় গড়ালেও আপনজন ও ঘরবাড়ি হারানো মানুষগুলো এখনো সে দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারেননি। আশঙ্কার বিষয় এই যে, সতর্ক না হলে আবারও নিমতলীবাসী তিন বছর আগের পুরনো সেই যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে পারেন। ঘটনার পর কিছু অভিযান হয়েছে। কিছু কারখানা বন্ধও করা হয়েছে কিন্তু তারপরও থেমে থাকেনি ওই সব অবৈধ কারখানার কাজ। এতো বড় ঘটনা সেদিন নিমতলীতে ঘটেছিল। কিন্তু তারপরও যেনো কারও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। ঘটনার আগে সজাগ হওয়ার জ্ঞান কবে হবে আমাদের?
Bengali 
English