দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কেও চিন্তাও করিনি যে একজন রোগির পেট থেকে এমন কিছু বের হতে পারে। কিন্তু তাই ঘটেছে। অপারেশন করে পেটে থেকে উদ্ধার হলো ৬৩৯টি পেরেক! সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজে।
পেরেক পাওয়া যায় হার্ডওয়ারের দোকানে। কিন্তু রোগির পেট থেকে যে পরিমাণ পেরেক বের হলো তাতে দেখে মনে হবে এটি যেনো একটি হার্ডওয়্যারের দোকান! অস্ত্রপচারের সময় পাকস্থলী ‘ওপেন’ করে চিকিৎসকরা দেখতে পান, চর্তুদিকে নানা আকারের শতশত পেরেক আটকে আছে। এক এক করে বের করে আনা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। অবশেষে চুম্বকের সাহায্যে রোগীর পেট পরিষ্কার করে পেরেকগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। গুণে দেখা যায় ৬৩৯টি পেরেক বের করা হয়েছে ওই ৪৮ বছর বয়সী ব্যক্তির পাকস্থলী হতে। সেইসঙ্গে বের হলো বেশ কিছু মাটিও!
কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা যায়, উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার বাসিন্দা প্রদীপ বাবু ছিলেন স্কিৎজোফ্রেনিয়ার রোগী। বাড়ির লোকের সঙ্গে তেমন কোনো কথাবার্তা বলতেন না তিনি। একা একা নিজের মনে বিড়বিড় করতেন সব সময়। চিকিৎসকরা বলে দিয়েছিলেন ওকে জ্বালাতন না করার জন্য। তাই বাড়ির লোকও ওকে তেমন একটা ঘাঁটাতেন না। রাতের খাবার উঠোনে বসে একা একাই খেতেন। তিনি বেশিরভাগ সময় মাটিতে উবু হয়ে বসে থাকতেন।
প্রদীপ বাবুর এক জ্যাঠাতো ভাই বিশ্বনাথ বলেন,“ও মাটি হতে নানা উলটোপালটা জিনিসও তুলে মুখে দিতো। তাকে সবসময় চোখে চোখে রাখা যেতো না।”
গত দু’মাস ধরে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা। বাড়ির লোকজন প্রথমে ভেবেছিলেন সাধারণ পেট খারাপ হয়েছে। তবে সাধারণ ওষুধে কমেনি। পুজোর পর অবস্থা ক্রমেই কঠিন হয়ে ওঠায় স্থানীয় নার্সিংহোমে তাকে দেখেন কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সার্জন ডা: সিদ্ধার্থ বিশ্বাস। তিনি এক্স-রে করিয়ে দেখতে পান যে প্রদীপবাবুর পেটের মধ্যে কালো কালো কিছু রয়েছে। এন্ডোস্কপি করা পর ধরা পড়ে ধাতব বস্তুর অস্তিত্ব। বাধ্য হয়ে অপারেশনের সিদ্ধান্ত জানান তিনি। সম্প্রতি প্রদীপবাবুকে কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর শুরু হয় অপারেশন। পেটে ছুরি চালিয়ে চোখ কপালে ওঠে চিকিৎসকদের।
সার্জন ডা: সিদ্ধার্থ বাবু জানান, “পাকস্থলী কাটতে গিয়ে আমরা চমকে যাই। সেখানে অগণিত পেরেক।” প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার অংশ কেটে সমস্ত পেরেক বের করা হয়। গুনে দেখা গেছে সবমিলিয়ে ৬৩৯টি পেরেক ছিলো তার পেটের মধ্যে!
সার্জন ডাঃ সিদ্ধার্থ বাবু আরও জানান, শুধু পেরেকই নয়, পাকস্থলীর মধ্যে হতে বেশ খানিকটা মাটিও পেয়েছেন তাঁরা। ডা: সিদ্ধার্থ বিশ্বাস জানিয়েছেন, রোগী স্কিৎজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত। মাটি হতে কুড়িয়ে এটা সেটা মুখে দিতো সে। এভাবেই পেরেক ঢুকে গেছে তার পাকস্থলীতে। সে পেরেক যে শ্বাসনালীতে চলে যায়নি বলে রক্ষা। বর্তমানে সুস্থ রয়েছে রোগী। তবে পুরনো লোহার পেরেক মরচে ধরার কারণে সাধারণত এই সমস্ত ক্ষেত্রে পেরেক বের করলেও পাকস্থলীতে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।