দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীতে নানা রকম বিয়ের খবর আমরা দেখে থাকি। সেসব বিয়ের থাকে নানা রকম ঐতিহ্য। তবে কিছু কিছু বিয়ে আবার একেবারেই ব্যতিক্রমি। ঠিক তেমনই এক বিয়ের খবর আজ উঠে এসেছে। বলা যায়, এটি বিয়ে তো নয়, যেনো জাঁকজমকের প্রদর্শনী!
আদি কাল থেকেই বিয়ের অনুষ্ঠান আড়ম্বরপূর্ণ হয়ে থাকে। এর কারণ হলো বিয়ে মানুষের জীবনে একবারই আসে। আর জীবনের এই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনকে স্মরণীয় করতে চেষ্টা করে রাখতে চেষ্টা করেন যে যার মতো করে। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু বিয়ের আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন করা হয়েছিলো যা কয়েকমাস পার হলেও মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে এখনও। এমন এক রাজ পরিবারের বিয়ের খবর রয়েছে আজ পাঠকদের জন্য।
বিয়ের ক্ষেত্রে ২১ শতকে নতুন এক মাত্রায় দেখা গেছে ব্রুনেইতে। দেশটির সুলতান বিশ্বের অন্যতম ধনী। তাঁর ছেলের বিয়ে কী সাধারণভাবে হতে পারে? ক্রিস্টাল-খচিত জুতা, কোয়েলের ডিম আকৃতির পান্না, রত্নপাথর, পুষ্পস্তবকে ফুটে ওঠেছিল জাঁকজমকের যেনো এক প্রদর্শনী।
বর প্রিন্স আবদুল মালিক, বয়স ৩১। সুলতান হাসান আল বলকিয়াহ এবং রানি সালেহার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। সুলতান হওয়ার দৌড়ে এই প্রিন্সের অবস্থান দ্বিতীয়তে।
কণে দায়াঙকু রাবিয়াতুল আদাবিয়াহ পেনজিরান হাজি বলকিয়াহ। তার বয়স ২২। তিনি একসময় ডাটা এনালিস্ট ও আইটি ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করতেন।
আড়ম্বরপূর্ণ এই বিয়ের অনুষ্ঠানটা হয় রাজধানী বন্দর সেরি বেগাবনে সুলতানের রাজপ্রাসাদ ইতসানা নুরুল ইমানে। এটিই বিশ্বে বৃহত্তম প্রাসাদগুলোর মধ্যে একটি। এই প্রাসাদে রয়েছে ১,৭৮৮টি কক্ষ, ৫টি সুইমিং পুল, ২৫৭টি বাথরুম এবং ১১০টি গাড়ি রাখার মতো গ্যারেজ। আর অতিথিকক্ষে একসেঙ্গ ৫ হাজার অতিথি বসতে পারেন!
যাকে বলা যায় এক রাজকীয় বিয়ে। তাই অতিথিদের সংখ্যাও একেবারে কম ছিল না। অনুষ্ঠানে তাদেরও জৌলুসময় উপস্থিতি দেখা গেছে। ব্রুানেই টাইমসের ধারণা মতে, বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে মালয়েশিয়ার ৭টি রাজ্যের শাসক, সৌদি আরবের এক গভর্নরও ছিলেন।
বিয়ের উৎসব হয় ১১ দিন ধরে। তবে তারা জনসম্মুখে উপস্থিত হন একেবারে শেষের দিন। আর এটিই ছিল পুরো উৎসবের মূল আকর্ষণ।
ওই অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল স্থানীয় একটি প্রথা দিয়ে। এই সময় বরের এক প্রতিনিধি কণের পরিবারে গিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেন। তারা তাতে সম্মতি দিলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের কাজ শুরু হয়। প্রথম পর্বে হয় পরিশুদ্ধ করার পর্যায়। এতে উভয় পরিবারের সদস্যরা বর-কণেকে বিভিন্ন পাউডার এবং তেল মেখে গোসল করান। তারপর শুরু হয় উপহার পর্ব।
মূল অনুষ্ঠান দেখে মনে হয়েছিলো খলিফা হারুন অর রশিদের সেই বাগদাদই যেনো নেমে এসেছিল ব্রুনেইয়ের রাজধানীতে! বর-কণের পরনে স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে মূল্যবান পোশাক। তাদের বসার জন্য যে চেয়ার দুটি ছিল সেগুলোকেও সিংসাহসন আদলে তৈরি করা হয়েছিলো। নববধূ রাবিয়াতুলের হাতে যে তোড়াটি ছিল, সেটিও ফুলের নয়, রত্নপাথরের। হীরার তৈরি তার নেকলেসটির ঠিক মাঝখানে আঙুর আকৃতির ৩টি পান্না শোভা পাচ্ছিল। এরসঙ্গে মানানসই করে তৈরি করা হীরার ব্রোচে ডিম আকৃতির দুটি পান্নাও শোভা পাচ্ছিল!
সবকিছুই ছিলো ব্যতিক্রমী। ব্জুতা হতে শুরু করে পোশাকের প্রতিটি অনুষঙ্গই ছিল বিশেষভাবে তৈরি। মণি-মানিক্যের ব্যবহার কোথাও কম দেখা যায়নি সেখানে, বরং অনেক ক্ষেত্রে জৌলুষ উপচে পড়েছে। অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে রাজকীয় প্রহরীরা আনুষ্ঠানিক ঢাল এবং বর্সা নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন।
দোওয়া অনুষ্ঠানে নবদম্পতি পাশাপাশি বসেন। নববধূর জন্য বিশেষভাবে দোওয়া করার সময় একপর্যায়ে সুলতান তার হাত ছেলের হাতে রেখে তাকে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ছিল বিলাসবহুল এক ভোজ। তারপর শুকরিয়া নামাজ দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
সুলতান বিয়ে করেছেন মোট ৩টি। তা থেকে তার মোট সন্তান রয়েছে ১২টি। তাদের মধ্যে ৫টি ছেলে, ৭টি মেয়ে। প্রিন্স আবদুল মালিক হলেন সুলতান এবং তার বর্তমান স্ত্রী রানি সালেহার (তাদের বিয়ে হয় ১৯৬৫ সালে) ষষ্ঠ সন্তান।
ব্রুনেইয়ের অবস্থান পূর্ব এশিয়ার বর্নিও উপকূলে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার নিকটে অবস্থিত দেশটির আয়তন খুবই কম। তবে তেল ও গ্যাসের বিপুল মজুত রয়েছে এই দেশটিতে। অধিবাসীদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই হলো মালয় মুসলিম। ১৫শ’ শতক হতেই দেশটির অস্তিত্ব। ১৯৮৪ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে তারা স্বাধীনতা পেয়েছিলো। তারপর থেকে ব্রুনেই একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র।