দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এতোদিন আমরা প্রাণী হতে মাংস সংগ্রহ করতাম। অর্থাৎ পশু জবাই করে মাংস পেতাম। কিন্তু এবার গবেষকরা বলছেন এক ভিন্ন কথা। তারা বলেছেন, এবার মাংস দেবে গবেষণাগার!
আপনি এমনই এক বিশ্বের কথা কল্পনা করুন, আপনি মাংস খাচ্ছেন অথচ সেই মাংস যেখান থেকে আসছে অর্থাৎ কোনো পশু আপনি নিধন করছেন না! মাংস খেলেও প্রাণিকুলের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। অর্থাৎ কোনো জীবনহানি ঘটছে না। ভাবছেন এমন ঘটনা কীভাবে সম্ভব? আমরা জানি মাংস খেতে চাইলে তো জীব হত্যা করতেই হবে। হত্যা ছাড়া মাংস খাওয়া যাবে না সেটিই স্বাভাবিক নিয়ম! অথচ এবার এর ব্যত্যয় ঘটতে চলেছে। অন্তত গবেষকরা এমন কথায় বলছেন।
বিজ্ঞান মানুষকে অনেক কিছুই দিয়েছে। এই বিজ্ঞানের বদৌলতেই ওপরের দৃশ্যকল্পটা এখন বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে! প্রাণিজ আমিষ পেতে এখন থেকে আর পশু-প্রাণীর মাংসের ওপর নির্ভর করতে হবে না। গবেষণাগারে প্রাণিদেহের কোষ হতে শতভাগ টাটকা মাংস তৈরির পন্থা বের করে ফেলেছেন গবেষকরা। তাই একসময় নিরামিষাশীদের কাছে মাংস খাওয়া মানেই ‘প্রাণী হত্যা’র ধারণাটি অতীত হতে চলেছে।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা গেছে, সানফ্রান্সিসকোর খাবার প্রযুক্তি ঘর ‘মেম্ফিস মিট’ এই বৈপ্লবিক পদ্ধতিটি নিয়ে কাজ শুরু করছেন। কোষ প্রকৌশলবিদ্যা কাজে লাগিয়ে তারা বের করেছেন প্রাণিদেহের বাইরে মাংস তৈরির কৌশলটি। গরু, মুরগি বা হাঁসের মাংস উৎপাদনে তাদের পশুপাখি পালতে হয় না বা প্রাণী হত্যার দরকারও পড়ে না। এই প্রতিষ্ঠানটির গবেষণাগারে তৈরি করা হচ্ছে শতভাগ টাটকা মাংস, যার স্বাদ-গন্ধ অবিকল প্রাণিদেহের মাংসের মতোই হবে। অর্থাৎ খাঁটি মাংস যাকে বলে!
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’-তে গড়ে প্রায় ৫ কোটি টার্কি (একধরনের পাখি) হত্যা করা হয়ে থাকে। টার্কির মাংস মার্কিনীদের ভীষণ প্রিয়। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপ বা অন্যান্য দেশেও মাংসভোজী মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রাণিকুল উজাড় না করেই মানুষের মাংসের চাহিদা মেটানো এই প্রযুক্তি বৈপ্লবিক অবদান রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রযুক্তির বদৌলতে গবেষণাগারে উৎপাদিত এই মাংসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্লিন মিট’। এটি অদূর ভবিষ্যতে বাজারজাত করা হবে। ‘মেম্ফিস মিট’-এর পাশাপাশি এই ধরনের মাংস উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।
জানানো হয়েছে, প্রাণিদেহের যে কোষগুলো শরীরের বাইরে পুনর্বিকশিত হতে পারে, সেইসব কোষের কিছু নমুনা একটি বড় স্টিলের ট্যাংকে রেখে বিকাশ ঘটানো হয়েছে। প্রাণিদেহ হতে প্রাপ্ত মাংসে প্রচুর ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকে। তবে ‘ক্লিন মিট’ প্রায় শতভাগ ব্যাকটেরিয়ামুক্ত। মাংস উৎপাদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গৃহপালিত পশু-পাখি পালনে যে পরিমাণ জমি এবং পানির প্রয়োজন হচ্ছে, ‘মেম্ফিস মিট’-এ সে তুলনায় পানি লাগছে শতকরা ১০ ভাগের ১ ভাগ ও জমি লাগছে ১০০ ভাগের মাত্র ১ ভাগ!
বিজ্ঞানের এই বৈপ্লবিক প্রযুক্তিকে ইতিমধ্যেই জীববৈচিত্র্য অধিকার রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থাগুলো সাদরে গ্রহণও করেছেন। পিপল ফর এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট ফর অ্যানিমেলস (পিইটিএ) নামে সংস্থাটি প্রযুক্তিটির প্রশংসা করে বলেছে যে, এতে প্রতিবছর কয়েক’শ কোটি প্রাণীর জীবন রক্ষা পাবে। বিল গেটস ও ব্রানসনের মতো ব্যক্তিত্ব ছাড়াও ‘মেম্ফিস মিট’-এ অর্থ লগ্নি করেছে বিশ্বের অন্যতম বড় কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কারগিল ইনকরপোরেশনও। এই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে ব্লুমবার্গকে ব্রানসনের ভাষ্য হলো, ‘আমি বিশ্বাস করি, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে আমাদের আর প্রাণী হত্যার কোনো প্রয়োজন হবে না। সব ধরনের মাংস “ক্লিন” বা “উদ্ভিজ্জ” পদ্ধতিতে তৈরি করা হবে, যেটার স্বাদ অবিকল একই রকম থাকবে ও স্বাস্থ্যকরও হবে।’