দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাভার ট্র্যাজেডির সেই গার্মেন্টস কর্মী রেশমা বেগম (১৯) আজ বৃহস্পতিবার পাঁচ তারকা হোটেল ঢাকা ওয়েস্টিনে যোগ দিচ্ছেন। তার পদ হচ্ছে পাবলিক এরিয়া অ্যাম্বাসিডর। বেতন ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে যাতায়াতের জন্য তিনি পাচ্ছেন পরিবহন সুবিধা।
জানা গেছে, রেশমা এখনো সাভার সিএমএইচে আছেন। আজ সকালে চিকিৎসকরা রেশমাকে ছাড়পত্র দিয়ে ছেড়ে দেবেন। পরে সেখান থেকে গুলশান ২ নম্বরে অবস্থিত ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেলে যোগ দিবেন। ইতোমধ্যে হোটেল কর্তৃপক্ষ রেশমাকে নিয়োগের সব ব্যবস্থা পাকা করেছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে বেতন ছাড়াও থাকছে ঈদ বোনাস, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা। আজ বিকালে হোটেল কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের ব্যবস্থা করবেন। এর আগে সাভার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রেশমার হাতে ছাড়পত্র তুলে দেবেন। রেশমা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।
উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল সাভার রানা প্লাজা ধসে পড়ে। রেশমা ওই ভবনের তৃতীয় তলার নিউওয়েভ বটমস কারখানার সুইং অপারেটর ছিলেন। অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে সে ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েন। ৪০৮ ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকার পর ১০ মে বিকালে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল রেশমাকে উদ্ধার করে। তাকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় সাভার সিএমএইচে। রেশমা এ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কর্নেল আজিজুর রহমানের অধীনে ভর্তি হন। একটি মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী রেশমার চিকিৎসা চলছিল। রেশমা ১৭ দিন ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকার পর দুর্বিষহ অবস্থার বর্ণনা দেন। না খেয়ে ধ্বংসস্তূপে ঘোর অন্ধকারে ১৭ দিন এ অবস্থায় থাকার পর দেহের ক্ষতস্থানে ইনফেকশনসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। রেশমা ছিল রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধারকৃত শেষ ব্যক্তি। ধ্বংসস্তূপ থেকে ২৪৩৮ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মারা যায় ১১২৪ জন। ১৭ দিন ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকার পর জীবিত রেশমাকে উদ্ধার হওয়ার ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিশ্ব মিডিয়াও রেশমা বেঁচে থাকা ও উদ্ধারের সংবাদ ফলাও করে প্রকাশ করে।
দেড় বছর ধরে রানা প্লাজার তৃতীয় তলায় রেশমা চাকরি করে আসছিল। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার মগলিশপুর গ্রামের আনসার আলীর কন্যা রেশমা। তার পিতা ১০/১২ বছর আগে মারা যাওয়ার পর ওই গ্রামের বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে একই উপজেলার কশিগাড়ী গ্রামে রেশমার মা জোবেদা বেওয়া দুইপুত্র ও দুই কন্যাকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। চরম আর্থিক কষ্টে তাদের দিন কাটে। এ অভাবের তাড়না সহ্য করতে না পেরে জোবেদা বেওয়া দুই কন্যা আসমা ও রেশমাকে গার্মেন্টসে চাকরির জন্য ঢাকায় পাঠান। আসমা অন্য গার্মেন্টসে ও রেশমা রানা প্লাজার গার্মেন্টসে যোগ দেয়।
আজ একটি পাঁচ তারকা হোটেলে চাকরি পাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্তত একজন রেশমা প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছেন। হয়তো একদিন আসবে যেদিন বাংলাদেশে আর কোন অসহায় মানুষ থাকবে না- অন্তত আমরা কায়মতোবাক্যে সেই প্রার্থনা করি।