দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ টাকা ছাড়া সিনেমা হলে বিনামূল্যে ছবি দেখানোর বিষয়টি হয়তো এই প্রথম। আর এই উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত ৪টি ছবি প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের সব প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিযুদ্ধের ছবি প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। গতমাসে অর্থাৎ ১৪ নভেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পরিমল সরকারের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এমনটিই জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মহান বিজয় উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশের সকল সিনেমা হলে ‘বিনামূল্যে’ ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ নির্ভর ৪টি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের অনুরোধ করা হয়েছে। ছবি ৪টির নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো, চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’, তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘জয়যাত্রা’, হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘আগুনের পরশমণি’ এবং নাসির উদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’।’
গত ২৬ নভেম্বর উপসচিব পরিমল সরকারের ওই স্বাক্ষরের বিজ্ঞতিতে ৪টি চলচ্চিত্র পরিবেশনায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দেশের শীর্ষ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়াকে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আবদুল আজিজ বলেছেন, ‘বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধের ছবি প্রদর্শনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। বিনামূল্যে ছবিগুলো প্রদর্শনের ফলে তরুণ প্রজন্ম এবং শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো দেখার কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উৎসাহিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বছর বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কোনো ছবি মুক্তি পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ হতে এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। যেসব হলে এই ছবিগুলো চলবে সেখানেও ফ্রিতে ছবিগুলো চানালো হবে।’
সিনেমা হল মালিক সমিতির সভাপতি ইফতেখার আহমেদ নওশাদ বলেছেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৬ ডিসেম্বর মর্নিং শোতে দেশের সব সিনেমাহলে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যে ৪টি চলচ্চিত্র প্রদর্শনে কথা বলা হয়েছে তার যেকোনো একটি চালাতে বাধ্য থাকবে হলগুলো। এই বিষয়ে দেশের সব হলের মালিকদের জানানো হয়েছে।’
ওরা ১১ জন
‘ওরা ১১ জন’ হলো ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত, স্বাধীনতায়োত্তর এটিই প্রথম চলচ্চিত্র। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বাধীনতার ডাক দেন, এই ছবির গল্পে সেই ঐতিহাসিক ভাষণের কিছু অংশও দেখানো হয়েছে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন বিখ্যাত পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। এই ছবিতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাও অভিনয় করেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খসরু, মুরাদ, হেলাল এবং নান্টু। এছাড়াও ছবির প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, হাসান ইমাম, আলতাফ, নান্টু, মুরাদ, বেবী, আবু, খলিলসহ অনেকেই।
আগুনের পরশমণি
‘আগুনের পরশমণি’ চলচ্চিত্রটি ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হুমায়ূন আহমেদের একটি উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত বাংলাদেশী বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর, বিপাশা হায়াত, আবুল হায়াত, শিলা আহমেদ, ডলি জহুরসহ অনেকেই।
জয়যাত্রা
‘জয়যাত্রা’ চলচ্চিত্রটি ২০০৪ সালে মুক্তি পায়। বাংলাদেশের বিখ্যাত সম্পাদক, কাহিনীকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক আমজাদ হোসেনের কাহিনী নিয়ে সংলাপ, চিত্রনাট্য এবং পরিচালনা করেছেন তৌকীর আহমেদ। এটি তারই পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ভিত্তিক এই চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা ও পরিবেশনা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম।
‘জয়যাত্রা’ চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন একদল মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, মৃত্যু এবং বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্প নিয়ে নির্মিত। এই চলচ্চিত্রটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত, আজিজুল হাকিম, মাহফুজ আহমেদ, হুমায়ুন ফরীদি, তারিক আনাম খান, আবুল হায়াত প্রমুখ।
গেরিলা
‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত হয়েছে। সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করা হয় এই চলচ্চিত্রটি। এটির চিত্রনাট্য করেছেন যৌথভাবে নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং এবাদুর রহমান। গেরিলা ছবিটিতে অভিনয় করেছেন সহস্রাধিক শিল্পী। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, ফেরদৌস, এটিএম শামসুজ্জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শম্পা রেজা, শতাব্দী ওয়াদুদ, গাজী রাকায়েতসহ প্রমুখ শিল্পীবৃন্দ।