দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের খুদে উদ্ভাবক আরমানুলের উড়োজাহাজ এবার আকাশে উড়লো। খুদে উদ্ভাবকদের উদ্ভাবন আমাদের দেশের মানুষের জন্য ব্যাপক কাজে আসবে।
উন্নত দেশগুলোর মতো আমরাও পারি আধুনিক প্রযুক্তির মনুষ্যবিহীন ড্রোন ও প্লেন বানাতে। সেই সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, যানজট নিরসনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং এমনকি কৃষিকাজেও। তবে সেজন্য প্রয়োজন সকলের সহযোগিতা- বলেছেন খুদে উদ্ভাবক আরমানুল ইসলাম।
এমনই এক উদ্ভাবক আমাদের উপহার দিলেন তাঁর নতুন এক প্রযুক্তি। গোপালগঞ্জের এই খুদে উদ্ভাবক আরমানুল ইসলামের বাড়ি কাশিয়ানী উপজেলার পুইশুর ইউনিয়নের সীতারামপুর গ্রামে। কলেজপড়ুয়া এই কিশোর সম্প্রতি উড়োজাহাজ তৈরি করে এলাকার মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
বাগেরহাটের মোংলায় ব্র্যাক এনজিওতে ক্রেডিট প্রোগ্রামে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত হাফিজুর রহমান সমাদ্দারের একমাত্র সন্তান আরমানুল ইসলাম কাশিয়ানীর রামদিয়া এসকে কলেজের একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আরমানুল খুব ছোটবেলা হতেই ঝোঁক ছিলো বৈজ্ঞানিক নানা উদ্ভাবনীর দিকে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে নানামুখী উদ্ভাবনী কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো সারাক্ষণ। এই খুদে উদ্ভাবক সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল প্লেন বানাবো। তাই তখন থেকেই সোলা (পাঠখড়ি) দিয়ে ছোট ছোট প্লেন বানিয়ে উড়ানোর চেষ্টা করেছি আমি। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় হতেই সত্যিকারের একটি প্লেন বানাবো বলে মনস্থির করে ফেলি। তবে অর্থ সংকটের কারণে তা হয়ে ওঠেনি।’
আরমানুল বলেন, ‘কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আমার আগ্রহ দেখে পরিবার আমাকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়েছিলো। এই টাকার বড় অংশই দেন আমার দাদি হাফিজা বেগম। বাকি টাকা দেন বাবা ও আমার উদ্ভাবন-সহযোগী সিতারামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জাসিয়া আকতারের বাবা এনামুল হক। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে আমি কাজ শুরু করি। অবশেষে জানুয়ারি মাসের ৮ তারিখে পরীক্ষামূলকভাবে আকাশে ওড়লো আমার তৈরি প্লেন। এই প্লেনটি প্রায় ১৫ মিনিট আকাশে ওড়ে।’
আরমানুল আরও জানায়, ‘তার তৈরি প্লেনটির ওজন ৮০০ গ্রাম, দৈর্ঘ্য ৩৬ ইঞ্চি ও এর পাখা ৫০ ইঞ্চি। এই প্লেনটিতে ব্র্যাশ লেস ডিসি মোটর ব্যবহার করা হয়েছে। মোটরের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ইলেকট্রিক স্পিড কন্ট্রোলের সঙ্গে আরো ৪টি সার্বো মোটর লাগানো হয়। ইলেকট্রিক স্পিড কন্ট্রোলই মূল মোটরকে নিয়ন্ত্রণ করে। সার্বো মোটর এলোরন এলিভেটর এবং রাডার কন্ট্রোল করে। প্লেনটিতে সিক্স চ্যানেলের একটি প্রোগ্রামেবল রিমোট সংযোজন করা হয়েছে। এটি বর্তমানে দেড় কিলোমিটার রেঞ্জ পর্যন্ত চলতে পারে। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর রেঞ্জ আরও বাড়ানো সম্ভব।’
আরমানুলের উদ্ভাবন-সহযোগী জাসিয়া আকতার বলেছে, ‘আরমানুল ভাইয়ার ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে আমি তার কাজে অনেক সহায়তা করেছি। সবশেষে প্লেন আকাশে ওড়ার পর আমার এখন খুব ভালো লাগছে।’
আরমানুলের মা রেহানা পারভীন বলেছেন, ‘নিত্যনতুন কিছু তৈরি করার ব্যাপারে ছোটবেলা হতেই তার ছেলের ঝোঁক রয়েছে। স্কুল জীবনে সে বিভিন্ন সময় বিজ্ঞানমেলায় প্লেনসহ নানা কিছু উদ্ভাবন হাজির করতো। তাতে পুরস্কারও পেয়েছে বহুবার। গত নভেম্বর মাসে ঢাকা হতে প্লেন বানানোর বিভিন্ন জিনিস কিনে আনে সে। পরে বাড়িতে বসে প্লেনটি বানিয়েছে। এখন সরকারের তরফ হতে এগিয়ে এলে ওর উদ্ভাবনী শক্তি দেশের কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান নিত্যানন্দ রায় এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা যখন জানতে পারলাম ছেলেটি একটি প্লেন বানাতে চায়, তখন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে কলেজের পক্ষ হতে সম্ভব সব সহযোগিতা করা হয়। ওর এই উদ্ভাবনে আমরা সত্যিই গর্বিত।’