দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশে ফোর-জি সার্ভিস চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের গ্রাহকরা আগের থেকে অনেক দ্রুত গতিতে ইন্টারনেটে তথ্য-আদান প্রদান করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশে ফোর-জি সার্ভিস চালু হয়েছে। বাংলাদেশের গ্রাহকরা আগের থেকে অনেক দ্রুত গতিতে ইন্টারনেটে তথ্য-আদান প্রদান করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন বিটিআরসি এমনটিই আশা প্রকাশ করেছে। তবে ফোর-জি`র পুরো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে গেলে যে ধরণের অবকাঠামো ও মোবাইল ফোনের হ্যান্ডসেট থাকা প্রয়োজন, তার ঘাটতি থাকার বিষয়টিও দৃষ্টিতে এসেছে।
উল্লেখ্য, বিটিআরসি গত সপ্তাহে ঢাকায় এক উন্মুক্ত নিলামে ফোর-জি ফ্রিকোয়েন্সী বা তরঙ্গ বিক্রি করেছে। বাংলাদেশের দুটি বড় মোবাইল অপারেটর গ্রামীন ফোন ও বাংলা লিংক এই নিলামে অংশ নেয়। নিলাম হতে বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে ৫ হাজার ২শ ৬৮ কোটি টাকা আসে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহাজাহান মাহমুদ।
পূর্ব প্রজন্মের প্রযুক্তি ছিল টু-জি ও থ্রী-জি। টু-জিতে কেবল ফোন কল করা ও টেক্সট মেসেজ পাঠানো যেতো। থ্রী-জি প্রযুক্তিতে মোবাইল ফোন হতে ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ভিডিও কল করা এমনকি মিউজিক ও ভিডিও ডাউনলোড করার সুযোগও তৈরি হয়। থ্রী-জি`তে যা যা করা সম্ভব, তার সবকিছু ফোর-জি`তেও করা যাবে, তবে দ্রুতগতিতে ও ভালোভাবে করা যাবে সেসব কাজ।
বাংলাদেশে থ্রী-জি সেবার মান নিয়েও গ্রাহকদের অনেক অভিযোগ রয়েছে যা আমরা গতকালকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। দেশের মোবাইল ফোন অপারেটররা যেখানে থ্রী-জি সেবা ঠিকমত দিতে পারেনি বা পারছে না, সেখানে এই নতুন সেবা কতোটা দিতে পারবে, তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।
তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফোর-জি চালু হওয়ার পর দেশের অভ্যন্তরে ডিজিটাল বিভক্তি আরও বাড়বে। কারণ হলো বড় বড় শহরের মানুষরা এই সুবিধা পেলেও দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষগুলো এই সুবিধা হতে আগের মতোই বঞ্চিত হবে।
এর যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয় যে, গ্রাহকরা স্পিড পাবে না, পাবে ভলিউম। তার ওপর গ্রাহকদের কাছ থেকে আবার টাকা নেওয়া হচ্ছে তার সিমটি ফোর জি তে আপগ্রেড করার জন্য। কোনো ধরনের চার্জ নেওয়া এই পর্যায়ে একেবারেই অনৈতিক। এই অর্থ নেওয়ার অধিকার তাদের নেই। টু-জি হতে যখন থ্রি-জিতে এসেছিলো তখন কিন্তু কোনো চার্জ নেওয়া হয়নি। তবে এই পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো অপারেটরই গ্রাহকদের মানসম্পন্ন থ্রী-জি সেবা দিতে পারেননি। ফোর জি সেবা কিভাবে দেবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে। এখন দেখা যাক, সময়ই সবকিছু বলে দেবে।
ফোরজি সেবা পেতে হলে ব্যবহারকারীকে যা করতে হবে:
ফোরজি সেবা পেতে হলে সিমকার্ড এবং হ্যান্ডসেটটি এই প্রযুক্তির উপযোগী হতে হবে। সিমটি ফোরজি কি না, সেটি বিনা মূল্যে জানার সুযোগও রয়েছে।
গ্রামীণফোন ব্যবহারকারীরা মোবাইল ফোন হতে *১২১*৩২৩২# ডায়াল করলে ফিরতি ম্যাসেজে সিমটি ফোরজি কি না, তা জানতে পারবেন।
রবির গ্রাহকদের জানতে হলে ডায়াল করতে হবে *১২৩*৪৪#।
বাংলালিংকের গ্রাহকরা মোবাইল ফোন হতে 4G লিখে ৫০০০ নম্বরে খুদে বার্তা পাঠালেই ফিরতি ম্যাসেজে ফোরজি সিমের বিষয়ে তথ্য পাবেন। তবে টেলিটক তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য এখনও এই ধরনের কোনো সেবা চালু করেনি।
সিমটি যদি ফোরজি না হয়, তাহলে তা সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন অপারেটরের গ্রাহকসেবা কেন্দ্র হতে পরিবর্তন করে ৪জি সিম নিতে হবে। এ জন্য মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক) খরচ পড়বে ১১৫ টাকা। সিম পরিবর্তন করতে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ছবি এবং আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন) দিতে হবে। তবে বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। ২জি থেকে যখন ৩জি রূপান্তর হয়, তখন কোনো সিম পাল্টানো লাগেনি। তাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। হয়তো মোবাইল অপারেটররা বিকল্প ব্যবস্থাও করতে পারেন।
আপনার ব্যবহৃত হ্যান্ডসেটটি ফোরজি উপযোগী কি না, সেটিও আপনি নিজেই জানতে পারবেন। এ জন্য প্রথমে আপনাকে মোবাইল ফোনের ‘সেটিংস’ অপশনে যেতে হবে। সেখানে নেটওয়ার্ক অথবা ‘ওয়্যারলেস অ্যান্ড নেটওয়ার্কস’-এ গেলেই দেখা যাবে ফোনটি ফোরজি প্রযুক্তির কি না। মোবাইল ফোন অপারেটরের সেবাকেন্দ্র ও বিভিন্ন স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্র থেকেও ফোরজি হ্যান্ডসেটের তথ্য জেনে নিতে পারেন।