দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রকৃতির কোলে বেড়ে উঠা এক গ্রাম। সবুজ-শ্যামল তার প্রকৃতি। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে আলেবুলা নদী। এমনই এক গ্রামের খবর পাওয়া গেছে, যে গ্রামের ছবি তুললেই হবে জরিমানা!
এই গ্রামে রয়েছে বিস্তীর্ণ পাহাড়ের সারি। ঝর্ণার ছিপছিপ শব্দ, ভ্রমণ পিপাসুদের মুগ্ধ না করেই পারে না। দেখলে যে কারো চোখ ধাঁধিয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই। এমন সুন্দর দৃশ্য যা দেখে মন চায় ফ্রেমবন্দি করে রাখতে। তবে গ্রামটিকে ছবি তোলায় রয়েছে বিধিনিষেধ। শুধু নিষেধই নয়, জরিমানাও করা হয় ছবি তুললে। এটি হলো সুইজারল্যান্ডের একটি ছোট্ট গ্রাম। এই গ্রামের নাম ব্র্যাভুয়াঁ। ৫৬ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই গ্রামটিতে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে।
এক তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই গ্রামটির মোট জনসংখ্যা মাত্র ৫৩০ জন। সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে সাজানো এই নান্দনিক গ্রামটিতে রয়েছে প্রাচীন রোমান সভ্যতার নিদর্শন একটি চার্চও। এখানকার ঘোড়দৌড়ের মাঠটি সুইজারল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী মাঠ হিসেবে প্রসিদ্ধ। বোটিং এবং রিভার রাফটিংয়ের জন্য আলেবুলা নদী তো আছেই। যারা পাহাড়ে হাইকিং করতে চান, তাদের জন্য আলেবুলা উপত্যকা যেনো এক অপার নৈসর্গিক দৃশ্য নিয়ে অপেক্ষা করছে।
আজ নয়, সেই ১৯৪৫ সালে নির্মিত ‘কুরহাস বারগুন’ হলো এই গ্রামের একমাত্র হোটেল, যা গ্রাম থেকে বেশ খানিকটা দূরে। বর্তমানে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গ্রামবাসীরা টাকার বিনিময়ে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করে থাকেন।
আলেবুলা রেলওয়ে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে ২০০৮ সালে। এই রেলওয়ের সঙ্গে রয়েছে একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জাদুঘর। এই জাদুঘরে গ্রামটির ঐতিহ্যের নানা ইতিহাস সংরক্ষিত আছে।
ব্র্যাভুয়াঁ নামে সুইজারল্যান্ডের এই ছোট্ট গ্রামটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হতে যেনো চোখ ফেরানো দায়। এতো সুন্দর কী কখনও কোনো কিছু হতে পারে? এমন প্রশ্ন আসবে আপনার মনেও। আপনার মনে হবে যেনো আপনি স্বপ্নের ঘোরে রয়েছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কী এতো সুন্দর হতে পারে? এমনটিই মনে হতে পারে আপনার। যারা সেখানে গেছেন, গ্রামটির সৌন্দর্যে প্রত্যেকেই অবাক ও বিস্মিত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেসব ছবি শেয়ার করে জুটেছে বন্ধুদের নানা আক্ষেপ। তবে তাই বলে সেই স্মৃতিগুলো ছবির ফ্রেমে আপনি আটকে রাখবেন, অন্যদের সেসব দৃশ্য দেখিয়ে দুঃখ দেবেন, তা কিন্তু কখনই হবে না।
সেকারণে গ্রামের পর্যটন দফতর গ্রামটিতে ছবি তোলা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। যদি এই নির্দেশ কোনো পর্যটক অমান্য করে এবং ছবি তোলার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে, তাহলে তাকে ৫ ফ্রাঙ্ক জরিমানা গুণতে হবে!
এই বিষয়ে ব্র্যাভুয়াঁ পর্যটন অফিসের ওয়েবসাইটের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অন্যকে দুঃখ দেওয়ার অধিকার কারও নেই। যেসব ব্যক্তির ওই গ্রামে যাওয়ার আর্থিক ক্ষমতা নেই বা কোনো কারণবশত যেতে পারছেন না, সেসব ব্যক্তি মানসিকভাবে ব্যথিত হবেন – সেটা কখনই ব্র্যাভুয়াঁবাসীর কাম্য হতে পারে না। সে কারণেই ছবি তোলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাতে ছবি দেখে কেও দু:খ না পান।
বিশ্বের মানুষের সুখের বিষয়টাও ভাবেন ব্র্যাভুয়াঁর গ্রামের লোকজন। তারা চান না যে, তাদের কারণে পৃথিবীর মানুষ কোনোরকম দু:খ-কষ্ট পান, তাদের হৃদয়ে কষ্ট অনুভব করেন।
উল্লেখ্য, শুধু নিষেধাজ্ঞায় নয়, ব্র্যাভুয়াঁর পর্যটন ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতে তাদের আপলোড করা সব ছবিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যাতে সেখান থেকে কেও ছবিগুলো না নিতে পারে।