দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রিসাইকেলিং অর্থ্যাৎ পুরাতন বা নষ্ট হয়ে যাওয়া পণ্যকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলার বিষয়টা আমাদের দেশে ততটা জনপ্রিয় না হলেও পশ্চিমা দেশ সহ আমাদের পাশের দেশ ভারতেও রিসাইকেলিং কনসেপ্টটা অনেক আগে থেকেই বেশ জনপ্রিয়। একবার ভাবুন তো, অনেক ক্ষুদ্র ও অপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে সৃজনশীল চিন্তা এবং পরিবেশের কথা মাথায় রেখে সৌন্দর্য-বর্ধনকারী অনেক ক্রিয়েটিভ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্র তৈরি হচ্ছে, নিশ্চয় বিষয়টা অনেক আনন্দদায়ক এবং সাশ্রয়ী বিষয়। আজকে এই বিষয়েই আলোকপাত করা যাক।
দেখা গেছে, অনেক উপাদান যা ফেলে দেওয়া হবে বা নষ্ট করে ফেলা হবে বিশেষ করে কম্পিউটারের যন্ত্রপাতি, এগুলো নষ্ট হওয়ার পরও কর্মক্ষম থাকে। সে সবকে সৃজনশীল চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে অন্য পণ্য রুপান্তর করা সম্ভব। কম্পিউটারের মাদারবোর্ড দিয়ে তৈরি করা সম্ভব কোস্টার, মোটর সাইকেলের হেডলাইট দিয়ে টেবিল ল্যাম্প, ফ্রিজ এর দরজা দিয়ে টেবিল। এইসব কাল্পনিক চিন্তা নয় বরং নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিস গুলোকে উদ্ভাবণী পদ্ধতিতে আরো আকর্ষণীয় এবং চমকপ্রদ জিনিস তৈরি করা যাকে রিসাইকেলিং পদ্ধতি বলা হয়।
রিসাইকেলিং করা যায় দুই পদ্ধতিতে : ডাউনসাইকেলিং ও আপসাইকেলিং। কোন পণ্য হতে রিসাইকেলিং পদ্ধতিতে একই রকমের নিম্নমূল্য এবং নিম্নমানের পণ্য তৈরি করা পদ্ধতি হচ্ছে ডাউনসাইকেলিং। আর আপসাইকেলিং হচ্ছে কোন বর্জ্য বা ফেলে দেওয়া বস্তু হতে আকর্ষণীয় এবং ব্যবহার-বান্ধব নতুন পণ্য তৈরির পদ্ধতি।

ট্রে, ফটোফ্রেম, জিনিসপত্র রাখার স্ট্যান্ড, কলমদানী, ঝাড়বাতি, কার্ড হোল্ডার, টিস্যু বক্স, বাতিদানী, আয়না এবং অফিসের কাজের বিভিন্ন ছোট ছোট প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরণের পণ্য ভারতের WorkshopQ নামের একটি প্রতিষ্ঠান নতুনত্বের সাথে তৈরি করতে সক্ষম যার মূল্য ৫০ – ৭০০০ রুপি এর মধ্যে।
Swechha নামের একটা এনজিওভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যাদের লক্ষ্য পরিবেশগত এবং সামাজিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখা, এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ভিমলেন্দু ঝা। ঝা’র নতুন অফিসের পার্টিশন অথবা গুদামঘরে অভিনব পন্য – বাতি ব্যবহার করা হয়েছে যা খুব সুন্দর একটা আলো আঁধারির পরিবেশ এনে দিয়েছে যেসব তৈরি করা হয়েছে পুরাতন জিনিস দিয়ে।
ভারতে এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রিসাইকেলিং পদ্ধতি ব্যবহার করে নতুন চমকপ্রদ পণ্য তৈরি ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার তাদের অর্থনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এইসব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। প্রত্যেকের উচিত নিজেদের নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিসপত্র যেখানে সেখানে ফেলে না দিয়ে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে রিসাইকেলিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে নিজ উদ্দ্যোগে যোগাযোগ করা এবং নিজের বাড়িতে বসেই স্বল্প খরচে এবং অল্প পরিশ্রমে পুরাতন পণ্য এবং নষ্ট জিনিসের সর্বোচ্চ সদব্যবহার করা। যেমন বিভিন্ন পানীয়ের পেট বোতল, ভাঙ্গা বোতল/কাঁচ, ধাতব পদার্থ থেকে পুনরায় নতুন গ্লাস, কাঁচ তৈরি করা হয় এমনকি বলপয়েন্ট কলমও রিসাইকেলিং হয়। পুরাতন ঝুরঝুরে আসবাব জ্বালানী কাঠ হিসেবে বিক্রি হয়। পুরাতন কাগজ, বই থেকে রিসাইকেলিং করে তৈরি করা হয় নিউজপ্রিন্ট কাগজ।
প্লাস্টিক রিসাইকেলিং করে তৈরি করা সম্ভব শো-পিস, সি-ডি/ডিবিডি এর কাভার, বিভিন্ন আই টি রিলেটেড পণ্যের কাভার, চায়ের কাপ, প্লেট, পেয়ালা, জগ, ঝুড়ি, চিরুনি ইত্যাদি চমকপ্রদ পণ্য। এক্ষেত্রে চায়ের কাপ, প্লেট, পেয়ালা হবে বিশেষ আকর্ষণীয় নকশার।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, পরিবেশকে সবুজ এবং দূষণ মুক্ত রাখতে রিসাইকেলিং পদ্ধতি ব্যবহার খুবই ফলপ্রসূ এবং একইসাথে ব্যবহারবান্ধব ও লাভজনক কাজ। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এখনই নিজেদের বদলাতে হবে, সচেতন হতে হবে, পরিবেশ দূষণ রোধে, একটা সবুজ আবাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তুলতে।
তথ্যসূত্রঃ ইন্ডিয়া টাইমস

