দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এক কথায় বলা হয়, সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের বাংলাদেশ। ছোটবেলা হতেই নিজ দেশ সম্পর্কে আমরা এভাবেই দেখে বড় হয়েছি। আজ জেনে নিন কয়েকটি ভ্রমণের স্থান সম্পর্কে।
বালুময় মরুভূমি ও বরফ ছাড়া প্রকৃতির প্রায় সব রকম সৌন্দর্য নিয়ে সবুজে ঘেরা গাঁও দিয়ে সারা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সুন্দর জায়গাগুলো যেনো এক ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন সাজে আমাদের হাতছানি দেয় সব সময়। সেই ডাককে অগ্রাহ্য করা এক কথায় প্রায় অসম্ভব। বিশেষ করে শীতকালের মতো ছুটির মৌসুমে ঘরের ওম ছেড়ে দেশের পর্যটন আকর্ষণ স্থানগুলোকে পরিবার-বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছুঁয়ে দেখতে মন চায়। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক শীতকালে বেড়ানোর কয়েকটি জনপ্রিয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পরিচয় এক অন্যতম পরিবাহক হলো পৃথিবীর দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। শীতকালে সমুদ্র তীরে বছরের সবচেয়ে লোক সমাগম দেখা যায়। এখানে সামুদ্রিক আবহাওয়ার জন্য ঠাণ্ডার প্রকোপ তুলনামূলক কম থাকে। সাগরের ঢেউয়ের বিশালতায় হারিয়ে যেতে চাইলে শীতকালে কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়ার কোনো জুড়ি নেই। এছাড়া মেরিন ড্রাইভের সুবিশাল রাস্তা কক্সবাজারে যোগ করেছে ভ্রমণের জন্য বাড়তি এক আকর্ষণ। লাবনী বীচ ও সুগন্ধা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও মেরিন ড্রাইভের রাস্তা ধরে টেকনাফের দিকে এগিয়ে গেলে দেখা পাওয়া যাবে হিমছড়ি, ইনানি, শামলাপুর ও হাজামপাড়ার মতো সৌন্দর্যপূর্ণ স্থান। সিএনজি বা লোকাল গাড়ি ভাড়া করে কক্সবাজারের পাশের থানা রামুতে গেলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সুন্দর কিছু প্যাগোডা কিংবা মন্দির দেখতে পাওয়া যাবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হলো এই সেন্টমার্টিন। শীতকালে ভ্রমণের জন্য একটি আদর্শ স্থান এটি। স্থানীয়ভাবে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত এই দ্বীপের পরিবহন ব্যবস্থা এবং সমুদ্রপথ শীতকালে ভ্রমণ অনুকূলে থাকে বলে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ এখানে ছুটে আসেন। মেরিন ড্রাইভ দিয়ে টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের কোলে সেন্টমার্টিনের অবস্থিত। মাত্র ১৬ বর্গ কিলোমিটারের দ্বীপটিতে যেনো নীল রঙের নতুন এক সংজ্ঞা হিসেবে দেখা হয়। সৈকতের কোল ঘেঁষে সারি সারি নারিকেলের গাছ, নীল আকাশের দিগন্তে নীল জলরাশির মিশেল ও প্রবাল পাথরের অপরূপ দৃশ্য বাংলাদেশের অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যাবে না। পুরো দ্বীপটি বৈচিত্র্যতার এক খনি বলা যায়। জেলেপাড়া, শুটকিপাড়া এবং এলাকার নানা দিনযাপনের কাজ পর্যবেক্ষণ ভ্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
বন পাহাড় ঘুরে যদি মন সাগরের পানে ছুটে যেতে চায় তবে সাগরকন্যা কুয়াকাটা রয়েছে আপনারই অপেক্ষায়। কুয়াকাটা এমন এক বিশেষ স্থান যার একই জায়গা হতে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। এছাড়াও শুটকি পল্লী, ফাতরার বন, গঙ্গামতির জংগল এবং লাল কাঁকড়ার দ্বীপ কুয়াকাটার একটি অন্যতম আকর্ষণ। পরিচ্ছন্ন বেলাভূমি, অনিন্দ্য সুন্দর এক সমুদ্র সৈকত, দিগন্তজোড়া সুনীল আকাশ ও ম্যানগ্রুভ বন কুয়াকাটাকে দিয়েছে ভিন্ন এক মাত্রা। প্রায় সারা বছর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। সৈকতে চাইলে মটর সাইকেল এবং ঘোড়া ভাড়াও করতে পারেন। আশে পাশে ঘুরতে পারেন অনায়াসে।
শ্রীমঙ্গল
শীতকালে সিলেটের পানিবেষ্টিত স্থানগুলো খুব একটা আকর্ষণীয় মনে না হলেও চায়ের শহর হিসেবে খ্যাত শ্রীমঙ্গল শীতকালে ভ্রমণের জন্য দারুণ একটি স্থান সেটি হলফ করে বলা যায়। চা বাগানের বাংলোতে বসে চা গাছে ঘিরে থাকা পরিবেশে শীতের হিম হাওয়া মেখে গরম চায়ের পেয়ালা হাতে বসে থাকা সত্যিই এক অদ্ভুত রোমাঞ্চের জন্ম দেয়। বনপ্রেমিদেরও হতাস হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাইক্কা বিলের পাখির অভয়াশ্রম বা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে জীববৈচিত্র দেখতে দেখতে কখন যে আপনার জীবনের ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যাবে তা আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন না।
কুতুবদিয়া দ্বীপ
কুতুবদিয়া দ্বীপ। সত্যিই এক অন্য রকম অনুভূমি। বিদেশি পোস্টকার্ডে বাতিঘরের ছবি দেখে দীর্ঘশ্বাস না ফেলে কক্সবাজার জেলার ছোট্ট উপজেলা কুতুবদিয়ায় গেলে প্রাচীন একটি বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যাবে। দ্বীপের উত্তরপ্রান্তে অবস্থিত এই লাইট হাউসটি সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজের নাবিকদের পথ দেখাতে দেখাতে নিজেই কবে পরিত্যাক্ত হয়ে গেছে তা জানাই যায়নি।
এখনও ভাটার সময় পানি নেমে গেলে বাতিঘরের অবশিষ্ট জেগে উঠে যেনো পুরনো ইতিহাসের গল্প বলে দেওয়ার জন্যই! ২১৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এই দ্বীপে প্রাচীন বাতিঘর ছাড়াও রয়েছে একান্ত সময় কাটানোর জন্য নির্জন সমুদ্র সৈকতও। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র, প্রাকৃতিক ভাবে লবণ চাষের স্থান ও কুতুব আউলিয়ার মাজার। দ্বীপটিতে পৌঁছাতে হলে চকোরিয়ার মাগনামা ঘাট হতে কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিতে হবে। ঝাউগাছের ঘেরা দ্বীপের সৈকত এলাকা নীরবতা প্রিয় পর্যটকদের কাছে ভীষণ আকর্ষণীয় লাগবে।
শীতে বেড়ানোর আরও কিছু স্থান
উপরের জায়গা গুলো ছাড়াও শীতকালে বেড়ানোর উপযুক্ত স্থান গুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন চর ও দ্বীপ অঞ্চল যেমন; মনপুরা দ্বীপ এবং নিঝুম দ্বীপ। শীতকালেই অতিথি পাখির আগমন ঘটে আমাদের দেশে তাই শীতকালে যেতে পারেন হাওর অঞ্চলে যেমন; টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর ইত্যাদি স্থানে। এছাড়া শীতের আমেজ পেতে প্রকৃতির খুব কাছ থেকে পেতে বেড়িয়ে আসতে পারেন মৌলভীবাজার কিংবা গাজীপুরের মতো জায়গার ইকো রিসোর্টগুলোতেও।
তথ্যসূত্র: https://vromonguide.com