দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ১০ কারণে দেশের আন্তঃজেলা মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও জেলা কানেকটিং রোডগুলোয় প্রায়ই ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে ঈদের সময় হলে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব।
হাইওয়ে পুলিশ, যানবাহন চালক ও ভুক্তভোগী মানুষের দৃষ্টিতে চিহ্নিত কারণগুলো হলো রাস্তার ওপর যানবাহন বিকল হওয়া, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি ও ধ্বংসাবশেষ দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা না করা, মহাসড়কের ওপর অবৈধ হাটবাজার বসানো, যত্রতত্র লিংক রোড, বাইপাস রোড বানানো, বাড়তি গাড়ির চাপ, চালকদের ইচ্ছামতো ওভারটেকিং, এলোপাতাড়ি চালিয়ে আগে যাওয়ার প্রবণতা, মাঝরাস্তায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোসহ ভাঙাচোরা রাস্তায় বিপজ্জনক খানাখন্দই মহাসড়কগুলোয় প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি করছে।
ব্যস্ততম মহাসড়কগুলোয় ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজির দৌরাত্যের কারণেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি আটকে পড়ার নানা নজির রয়েছে। চিহ্নিত এসব কারণে মাঝেমধ্যেই সড়ক-মহাসড়কে ৭০-৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট বাধে, রাত-দিন দুর্ভোগ পোহান হাজার হাজার যাত্রী। তবু অব্যবস্থাপনা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে। ঈদ ছুটি শেষে ঢাকা অভিমুখে আসা গাড়িগুলো বিভিন্ন মহাসড়কে তিন দিন ধরে অসহনীয় যানজটের কবলে পড়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের একটানা প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে থেমে থেমে ৫০-৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। যে কারণে রেলের ওপর পড়েছে বাড়তি চাপ। ট্রেনের ছাদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে গত তিনদিন ধরে।
হাইওয়ে পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টি, সড়ক দুর্ঘটনা আর পণ্যবাহী ট্রাকের বিশৃঙ্খলার কারণে রাজধানীর সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ জনপদের সংযোগকারী দুই মহাসড়কেই তীব্র যানজট বেধেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক পুলিশের গোড়াই থানার ওসি জোবায়দুল আলম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে যানবাহন চলাচল এমনিতেই বিঘ্নিত হচ্ছিল। রাত ১১টার পর থেকেই পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। এর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে গাড়ি বিকল হওয়ায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত যানবাহন চলছে খুবই ধীরগতিতে। পাশাপাশি ঈদ ছুটি ও হরতাল শেষে গাড়ির চাপও ছিল মাত্রাতিরিক্ত। ফলে যানজটের ধকল সামাল দেওয়া ক্রমেই অসাধ্য হয়ে পড়ে।’
ঢাকা থেকে যমুনা সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গে চলাচলকারী বিভিন্ন গাড়ির চালকরা জানান, মির্জাপুর উপজেলার ধেরুয়া রেলক্রসিংয়ে এমনিতেই ট্রেন চলাচলের কারণে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ট্রেন পৌঁছানোর বেশ কয়েক মিনিট আগে থেকে ট্রেন চলে যাওয়ার পরেও কয়েক মিনিট ধরে রেলগেট ফেলে রাখা হয়। সেখানে রেললাইনের ওপর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল মারাত্মক ব্যাহত হয়। মাসের পর মাস বিপজ্জনক এই গর্তের কারণে গাড়ি চলাচলের ব্যাপক সমস্যা দেখেন সবাই, কিন্তু তা দূর করার উদ্যোগ নিচ্ছেন না কেও।
দায় এড়িয়ে যান দু’পক্ষই!
মির্জাপুরের সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, রেললাইনের ওপর গর্ত মেরামতের দায়িত্ব রেল বিভাগের। কিন্তু রেলওয়ে পূর্ব জোনের একজন প্রকৌশলী জানান, ওই গর্তের কারণে রেল চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটে না তাই সেখানে পিচঢালা রাস্তা মেরামতের ব্যাপারে রেলওয়ের কোনো দায়দায়িত্বও নেই। অথচ রেললাইনের গর্তের কারণেই মির্জাপুরের শুভুল্যা থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার সড়কে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে কালিয়াকৈর উপজেলাসহ আশপাশের তিন শতাধিক শিল্প কারখানার হাজার হাজার শ্রমিকের যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে চন্দ্রা ত্রিমোড় ব্যবহৃত হয়। ফলে সেখানে হামেশা যানজট আর জনজট লেগেই থাকে। কোনাবাড়িতে মহাসড়ক বৃষ্টি হলেই কোনাবাড়ি, মৌচাক ও চন্দ্রাসহ কয়েকটি স্থানে রাস্তা চষা জমির আকার ধারণ করে। ভাঙাচোরা, খানাখন্দে ভরা রাস্তাটুকু পেরোতে গাড়িগুলোকে অতিসাবধানে ধীরে ধীরে চলাচল করতে হয়। অন্যথায় কাদা-পানিতে পিচ্ছিল হয়ে ওঠা রাস্তায় গাড়ির চাকা ফেঁসে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড়, চান্দনা-চৌরাস্তা ও টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায়ও থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও প্রায়ই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। মহাসড়কে যানজটের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহান ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে চলাচলকারী যাত্রীরা। প্রায়ই এ রোডের যাত্রীরা ৫০-৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের মুখোমুখি হন। মহাসড়কটির কোনো স্থানে একটি গাড়ি বিকল হলেও এর জন্য ৪০-৫০ কিলোমিটার যানজট বাধার নজির রয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের ভুলতা থানার একজন কর্মকর্তা জানান, মূলত সড়কে গাড়ি বিকল হলে বা দুর্ঘটনার শিকার হলে সেই গাড়ি দ্রুত সড়ক থেকে অপসারণের মতো কোনো ক্রেন সহসা পাওয়া যায় না। গাড়ি সরাতে বিলম্ব ঘটলেই দীর্ঘ যানজটের সূত্রপাত ঘটে।
ওই এলাকার ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের আরও সচেষ্ট হতে হবে। যাতে কোন দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দীর্ঘ সময় রাস্তার ওপর না থাকতে পারে সেদিকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। তাছাড়া লিঙ্ক রোড পয়েন্টগুলো স্বল্পদৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভার বানানোসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ সবাই জানেন প্রতিবছর ঈদ এলে এই এলাকায় জ্যামের সৃষ্টি হয়। কিন্তু তারপরও কেনো বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না সেটিই জনগণের প্রশ্ন।