দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময়ের ছোট পর্দা ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয় মুখ তাসনিয়া ফারিণ। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের চলন্ত সিঁড়িতে উঠে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। ওই দুর্ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ফারিণ।
দুর্ঘটনায় চলন্ত অবস্থায় সিঁড়ির একটি রড বের হয়ে ফারিণের পায়ের মাংসে ঢুকে পড়ে। প্রচুর রক্তক্ষরণও হয়েছে। তাৎক্ষণাত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগে তার চিকিৎসা দেওয়া হয়।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিউচার পার্কের দুর্ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন তাসনিয়া ফারিণ। তার স্ট্যাটাসটি ছিলো এমন-
গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার আশেপাশে যমুনা ফিউচার পার্কের ফার্স্ট ফ্লোর হতে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নামার সময় গেট দিয়ে ঢুকেই যে মেইন এস্কেলেটর (অর্থাৎ চলন্ত সিঁড়ি), সেটিতে আমার দুর্ঘটনা ঘটে। সিঁড়ির নিচে যে এলুমিনিয়ামের নাকি স্টিলের সেটা জানি না, সে পাত খুলে বের হয়ে ধারালো কোনা তখন আমার পায়ে আঘাত করে। আমি সিঁড়ির ডানপাশেই ছিলাম। ওটা ছিল ঊর্ধমুখী। আমার পরনের প্যান্ট ছিঁড়ে যায় অনেকটুকু ও পায়ের বিভিন্ন স্থানে ছিলে যায় এবং ডিপ কাট হয়, যেটা পরবর্তীতে টের পাই।
তবে ওই মুহূর্তে শুধু একটা ইমেজ (চিত্র) আমার মাথায় ঘুরে ফিরে বারবার আসছে তা হলো, কিছু বোঝার আগে সবাই গগনবিদারী চিৎকার করে উঠলো আর আমি দেখলাম ডান পা স্ক্র্যাচ করে পায়ের পাশ দিয়ে মাঝখান হয়ে বাম পায়ের উপরের দিকে একটা পাত ঢুকে যাচ্ছে ও চলন্ত সিঁড়িটিও আমাকে আরও সেদিকেই ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল যদি সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে আমাকে আমার ভাই পেছন থেকে টান দিয়ে না সরাত কিংবা আমার বাবা যদি আমাদের দুইজনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে না দিতো, আমি জানি না আজকে এই স্ট্যাটাস লেখার জন্য আমি বেঁচে থাকতাম কিনা। হয়তো থাকতাম, তবে আমার পা থাকতো না বা আমি কখনও মা হতে পারতাম না। সে পরিস্থিতির ভয়াবহতা হয়তো লিখে বা বলে বোঝানো সম্ভব না। আমি নিচে নেমে দাঁড়ানোর কয়েক সেকেন্ডের কোনো কিছুই আমার মনে নেই। সমব্বেত ফেরার পর দেখি, আমার হাঁটুর উপর থেকে প্যান্ট ছেড়া ও পুরো পা ঝা ঝা করছে। ততোক্ষণে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে।
একটি বিষয় হলো, আমার এই ঘটনাটিকে আমি এক্সিডেন্ট মানতে নারাজ। কারণ, আমার এই ঘটনা ঘটার কমপক্ষে ১৫ মিনিট আগে আরেক ব্যক্তির সঙ্গে একই ঘটনা ঘটে। তার পায়ের মাংস ভেদ করে ওই পাতের কোনা ঢুকে যায়। তিনি নিজেই অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে লোকজনকে নাকি সাবধান করছিলেন ও দায়িত্ববান কাওকে খুঁজছিলেন। শেষে কাওকে না পেয়ে হেল্প ডেস্কে যান ও এরমধ্যে আমার এই ঘটনা ঘটে। সঙ্গে আরও একজন ভুক্তভুগীকে খুঁজে পাই।
আমার চিৎকার চেঁচামেচির পর ফাইনালি একজন স্টাফ আসে এবং অনেকবার বলার পর ম্যানেজারকে কল করে সে। ততোক্ষণে প্রচুর মানুষ জড়ো হয়ে যাচ্ছে আর ব্যথার চেয়ে বেশি ফিল হচ্ছিল হিউমিলিয়েশন। ওখানে কোনো সিনক্রিয়েট করার চেয়ে আমার মনে হয়েছে ঠাণ্ডা মাথায় এটার সমাধান করা দরকার। তাই আমি বলার পর দুইজন কর্মচারী আমাদের ৩ জন আহত ব্যক্তি এবং তাদের সঙ্গে যারা ছিল সবাইকে বেসমেন্ট ১-এ নিয়ে যায়। আমাদের ধারণা ছিল, নিশ্চয়ই দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। আশ্চর্য বিষয় হলো, এতোবড় মলে কোনো এ্যাম্বুলেন্স বা ফার্স্ট রেসপন্ডার তো দূরে থাক একটা ফার্স্ট এইড বক্সও নেই!
পনেরো-বিশ মিনিট তারা শুধু এই ফার্মেসি সেই ফার্মেসি ফোন করলো। কেও নাকি দোকান ছেড়ে আসতে পারবে না। অবশেষে আধাঘন্টা পর একজন আসে এবং ওই দুই ব্যক্তির চিকিৎসা করে। তবে ফিমেল ডক্টর ছাড়া আমার চিকিৎসা সম্ভব ছিল না। যারমধ্যে আমার ভাইকে পাঠালাম একটা ট্রাউজার কিনে আনার জন্য।
যমুনা ফিউচার পার্কের কর্তৃপক্ষের মতে, এই দূর্ঘটনা নাকি বেশি লোক ওঠার কারণে হয়েছে! তার মানে কী আপনারা আগে থেকেই জানতেন? নাকি ধারণ ক্ষমতার বেশি লোড নিয়ে আগে থেকেই এই অবস্থায় ছিল তা আপনারা বুঝতেই পাননি? একজনের সঙ্গে এটা হওয়ার পরও কেনো কোনো একশন নেননি আপনারা? এস্কেলেটরের দায়িত্বে থাকা কাওকে ডাকতে বললেই বলে, সে আসেনি। আর আমার এমন পরিস্থিতিতে তারা আমাকে চা কফি অফার করে, যেখানে আমার বসার মতো পরিস্থিতিও নেই।
যা হোক কাপড় বদলে আমাদের গাড়ি করে এভারকেয়ারের ইমার্জেন্সিতে গেলাম। ড্রেসিং, স্টিচিং, এক্সরে, ইনজেকশনের পর রাত ১২টায় ছাড়া পেলাম। তাদের একজন কর্মকর্তা হসপিটাল পর্যন্ত আসে, তাও আমরা বলার কারণে। বিলের প্রসঙ্গ উঠতেই বলে, ‘আমি কেনো দিবো?’ আপনাদের দুই-চার টাকার আমার দরকারও নাই, বাট মানবিকতাও কী নাই? যেখানে আপনারা নিজে দোষ স্বীকার করেছেন ও আপনার কাছে কোনো ক্ষতিপূরণও আমি চাইনি। একটা সামান্য ইমার্জেন্সির বিল দেওয়ার মানসিকতাও আপনাদের নেই? তাদের মতে, এটার বিচার হচ্ছে। তারা অভ্যন্তরীণভাবে সুষ্ঠ (!) তদন্তও করবেন। তথ্যসূত্র: ভোরের কাগজ।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।