দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কাতার নির্মাণ খাতে বাংলাদেশ হতে ৬ হাজার কর্মী নেবে। এই আওতায় যারা যাবেন তাদের কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না। কি প্রক্রিয়ায় কাতার যাওয়া যাবে জেনে নিন।
জানা গেছে, এই প্রক্রিয়ায় যাতায়াত ভাতা হতে শুরু করে থাকা-খাওয়া সবই দেবে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। কাতারে যাওয়ার পর ওই কর্মীরা কাজ পাবেন ইতালির বিখ্যাত স্যালিনি ইমপ্রিগিলো নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। ওই কোম্পানিটি কাতারের একটি স্টেডিয়াম তৈরির কাজ পেয়েছে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের বিশ্বকাপ উপলক্ষে আল খোরে বিশাল ওই স্টেডিয়ামটি তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আল ইসলাম ওভারসিজ এইসব কর্মীদের কাতারে পাঠাচ্ছে। বিনা খরচে কর্মী পাঠানোর এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
সংবাদ মাধ্যমকে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সেলিম রেজা বলেন, ‘বাংলাদেশ হতে নারী কর্মীদের বর্তমানে বিদেশে যেতে খরচ হয় না। তবে পুরুষ কর্মীদের বিদেশে যেতে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে আল ইসলাম ওভারসিজ বিনা খরচে কর্মীদের কাতারে পাঠাচ্ছে।
বাংলাদেশ হতে এই প্রক্রিয়ায় যারা যাচ্ছে, তারা স্যালিনি ইমপ্রিগিলোতে কাজ পাবে। বিনা খরচে কর্মী পাঠানোর এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। অন্য ব্যবসায়ীরাও এটি দেখে শিখতে পারেন।
পৃথিবীর ৫০টা দেশে কাজ করছে স্যালিনি ইমপ্রিগিলোর। ৩৫ হাজার কর্মী তাদের অধীনে কাজ করছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কাতারের আল খোরে আল বায়াত স্টেডিয়াম বানাবে।
দোহা হতে ৫০ কিলোমিটার উত্তরে এই স্টেডিয়ামটি নির্মিত হচ্ছে। এতে ৭০ হাজার দর্শক বসতে পারবেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে এর কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হবে ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট। স্টেডিয়াম ছাড়াও কাতারের একটি আবাসিক এলাকা নির্মাণের কাজ পেয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে কাতার হলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় শীর্ষ শ্রমবাজার। ২০১৫ সালে ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৬ জন বাংলাদেশের কর্মী নিয়েছে কাতার। চলতি বছর (২০১৬) ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত কাতার গেছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬৩৪ জন। প্রতি মাসেই কাতার হতে ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আসছে বাংলাদেশে।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আল ইসলাম ওভারসিজের মাধ্যমে মূলত দক্ষ নির্মাণশ্রমিকরা কাতারে যাবে।
কাতারের নিয়োগকর্তারা এসে প্রার্থীদের পরীক্ষা নিচ্ছেন। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিমানভাড়া সবই দিবে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া কাতারে গিয়ে তারা থাকা-খাওয়ার খরচও পাবেন। এসব শ্রমিকদের মূল বেতন হবে ৯০০ রিয়াল।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, নতুন করে আনা এসব কর্মীর থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে। দুই বছরের নবায়নযোগ্য চুক্তিতে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করবেন শ্রমিকরা।
৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে সেটি ওভারটাইম হিসেবে বিবেচনা করা হবে, তবে কাতারের শ্রম আইন অনুযায়ী। কাতারের শ্রম আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের চিকিৎসা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হবে।
শ্রমিকদের ক্ষেত্রে দুই বছর পর দেশে আসা-যাওয়ার টিকিট, ছুটিকালীন বেতনসহ বিভিন্ন সুযোগও দেওয়া হবে।
বিনা খরচে এভাবে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে আল ইসলাম ওভারসিজের মালিক জয়নাল আবেদিন জাফর বলেছেন, ‘আমরা যেভাবে চুক্তি করেছি, তাতে কাতারে কর্মী পাঠাতে কোনো খরচ করতে হবে না। যারা লোক নেবে, তারাই সব খরচ বহন করবে। আমি মনে করি, দক্ষ কর্মী পাঠাতে পারলে এভাবে বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশীকে কাতার পাঠানো সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যাদের পাঠাই, তাদের থাকা-খাওয়া হতে শুরু করে চিকিৎসা, বিমা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয় কাতারের সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। দুই বছর পর দেশে আসা-যাওয়ার টিকিটও দেওয়া হয় তাদের। আমরা এভাবে আরও লোক পাঠাতে চাই কাতারে।’