দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রিন্সেস ডায়না সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি। তবে এই জানার মধ্যেও রয়েছে অনেক কিছু। আজ আপনাদের জন্য রয়েছে স্কুল শিক্ষিকা হতে বিশ্ব ব্যক্তিত্ব এবং প্রিন্সেস হয়ে ওঠা এক ডায়নার গল্প!
তবে এটি সকলকেই শিকার করতেই হবে ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স চার্লসের স্ত্রী নিজের গুণেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়েছিলেন। ফ্যাশন, দাতব্য কর্মকাণ্ড, মানবতার পক্ষে আন্দোলন নানা সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড তাকে এনে দিয়েছিল আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায়। তবে প্রণয়-ঘটিত ব্যাপারেও তিনি বারংবার সংবাদ-মাধ্যমের শিরোনামে পরিণত হয়েছেন।
প্রিন্সেস ডায়নার পুরো নাম হলো ডায়না ফ্রান্সেস স্পেন্সার। বিয়ের পর অবশ্য তার নাম বদলে হয়েছে ‘ডায়না, প্রিন্সেস অব ওয়েলস’। ১৯৬১ সালের ১ জুলাই ইংল্যান্ডের এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ডায়না । তিনি ছাত্রী হিসেবে খুব একটা ভালো ছিলেন না। ও লেভেলে দুইবার ফেল করেন তিনি। তবুও তিনি মনোবল হারাননি এতোটুকু। ডায়না বিশ্বাস করতেন তার জীবনে ভালো কিছুই আসবেই।
বিয়ের পূর্বে ডায়না একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে খণ্ডকালীন শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। লন্ডনের পিমলিকো জেলার এই স্কুলে কাজ করার সময় তিনজন মিলে ফ্ল্যাট ভাগাভাগি করে থাকতেন ডায়না।
ব্রিটিশ যুবরাজের সঙ্গে যখন ডায়নার প্রথম পরিচয় হয় তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। আর মজার বিষয় হলো, সেসময় প্রিন্স চার্লস ডায়নার বড় বোনের সঙ্গে প্রেম করতেন! তখন তাদের প্রেমের ৩ বছরও পেরোয়নি এমন সময় ডায়না বালমোরাল ক্যাসলে পোলো খেলা অবস্থায় প্রথমবারের মতো চার্লসকে দেখেন। আর সেই দেখা হতেই একে অপরের প্রতি মুগ্ধতার শুরু হয়।
এক তথ্যে জানা যায়, প্রিন্স চার্লস ও ডায়না বিয়ের পূর্বে মাত্র ১৩ বার দেখা করেছিলেন। যখন তাদের প্রেম চলছিলো, সেসময় চার্লসকে পরিবারের পক্ষ হতে বিয়ে করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। প্রিন্স চার্লস ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ডায়নাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ডায়না সানন্দে তা গ্রহণও করেন। এরপর রূপকথার মতো এক বিয়ের আয়োজন হয়। সারাবিশ্বের গণমাধ্যম সেসময় যেনো হামলে পড়ে। বিশ্বের ৭৫০ মিলিয়ন মানুষ তাদের এই বিয়ে উপভোগও করেন। সেসময় তাদের বিয়েতে খরচ করা হয় ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার!
বিয়ের পরের বছরই এই দম্পতির ঘরে জন্ম নেন প্রিন্স উইলিয়াম, তিনি বর্তমানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের দ্বিতীয় উত্তরাধিকারী। এর ঠিক দুই বছর পর ডায়না এবং চার্লসের ঘরে জন্ম নেন প্রিন্স হ্যারি।
প্রিন্স চার্লসের অফিশিয়াল ভ্রমণে স্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার সুবাদে ডায়না আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়ার পাশাপাশি তাদের সংসারেও এক সময় ফাঁটল ধরে। তারা দুজনেই এক সময় বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। প্রিন্স চার্লস তার বর্তমান স্ত্রী ক্যামিলি পার্কার বোওলেসের সঙ্গে গোপনে দেখা করতেন। ডায়নাকে বিয়ে করার পূর্ব হতেই পার্কারের সঙ্গে চার্লসের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
১৯৯২ সালে এই দম্পতি পৃথক থাকতে শুরু করেন। প্রিন্সেস ডায়নাই এই খবর সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। অবশেষে ১৯৯৬ সালে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে।
বিবাহ বিচ্ছেদের পূর্বেও ডায়না নানা রকম সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। বিবাহ বিচ্ছেদের পর এইসব কাজে তিনি আরও সময় বাড়িয়ে দেন। তিনি এইডস রোগীদের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টির জন্য ব্যাপকভাবে জন-সচেতনতা সৃষ্টি করেন। ভূমি মাইনের ব্যবহার বন্ধ করতে কাজ করেন এবং ক্যান্সারের রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর কারণে বিশ্বে ডায়নার এক পজিটিভ ইমেজ তৈরি হয়। বিশ্বে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
ডায়নাও বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৫ সালে ডায়না পাকিস্তানী হার্ট সার্জন হাসনাত খানের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯৭ সালে তাদের এই সম্পর্কে ভাঙন দেখা দিলে ডায়না ডোডি আল ফায়েদের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়ান। ডোডি আল ফায়েদ ছিলেন এক মিশরীয় ধনকুবেরের ছেলে। ১৯৯৭ সালে এই প্রেমিক ডোডির সঙ্গে থাকা অবস্থায় প্যারিসে এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রিন্সেস ডায়না নিহত হন।
সামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রসারের কারণে প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যুতে সারাবিশ্ব স্তব্দ হয়ে পড়ে। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও ডায়নাকে জনগণের প্রিন্সেস বলেই অভিহিত করেন। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসের রিজ হোটেল হতে বের হওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রিন্সেস ডায়না।