দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মুসলিমদের মতো দেখাতে হওয়ার কারণে নাকি নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে ব্রিটেনে! সে কারণে তারা শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হচ্ছেন বলে খবরে প্রকাশ।
(ছবিটি কেবলমাত্র নমুনা হিসেবে ব্যবহৃত হলো)
মুসলিমদের মতো দেখা হওয়ার কারণে অনেক বৃটিশ নাগরিক নাকি নির্যাতিত হচ্ছেন। তাদেরকে করা হচ্ছে অবমাননা। এমনকি তাদের গায়ের রং এবং মুখে দাড়ি থাকায় তাদেরকে সন্ত্রাসীও বলা হচ্ছে! বলা হচ্ছে যে, আইসিসের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রয়েছে।
তারা মৌখিক এসব আপত্তিকর মন্তব্য শোনা ছাড়াও শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনেরও শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে!
লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর এক খবরে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যেই ওই গবেষণা রিপোর্টটি জমা দেওয়া হয়েছে বৃটিশ পার্লামেন্টের হাউজ অব কমন্সে। তাতে বলা হয়েছে, এমন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের বাসার সামনে স্থাপিত মেইলবক্সে কিংবা তাদের মালিকানাধীন দোকানের জানালা ভেঙে ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে পশুর মল!
খবরে বলা হয়েছে, অমুসলিম অথচ মুসলমানের মতো দেখা যায় বলেই এসব মানুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। গবেষণা চালাতে গিয়ে এমন বেশ কিছু মানুষের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যায় যে, ব্রেক্সিট গণভোট এবং লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলার পর এই বিদ্বেষমূলক আচরণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা গেছে, হাউজ অব কমন্সে হেট ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস উইক চলাকালেই এই গবেষণা রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে অমুসলিমরা কিভাবে ইসলামবিরোধিতার শিকারে পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সে বিষয়ে বক্তব্যও তুলে ধরেন ড. ইমরান আওয়ান এবং ড. আরিন জেমপি।
সরকারি এক জরিপ এবং প্রাতিষ্ঠানিক জরিপে এইসব তথ্য উঠে এসেছে। বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটির অপরাধ বিষয়ক সহযোগী প্রফেসর ড. আওয়ান বলেছেন যে, যদিও এসব ঘটনা ঘটছে মানুষকে চিনতে না পারার কারণেই, তাই বলে এই ইসলামবিরোধিতাকে প্রশ্রয় দেওয়া মোটেও উচিত হবে না।
তিনি বলেছেন, গবেষণাই বলে দিচ্ছে, কিভাবে মানুষ ঘৃণাপ্রসূত অপরাধের শিকার হচ্ছেন। ওই গবেষণায় ১৯ হতে ৫৯ বছর বয়সী ২০ জন অমুসলিমের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এরা অনেকেই কৃষ্ণাঙ্গ। আবার কেওবা শ্বেতাঙ্গ। কেও এশিয়ান, শিখ, খ্রিস্টান, হিন্দু, নাস্তিকও রয়েছে এদের মধ্যে। তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে যাতে তাদেরকে কেও চিনতে না পারেন।
এদের মধ্যে একজন বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমে তাকে একটি ম্যাসেজ দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে যে, ভোট আউট, কিক আউট দ্য মুসলিম। ব্রেক্সিট ভোটের পর আরেকজনকে বলা হয়েছিল, আজ এমন একটি দিন যেদিন তোমার মতো মানুষের কাছ থেকে আমরা মুক্ত।
অন্যরা বলেছেন যে, বিশ্বজুড়ে ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের সন্ত্রাসী হামলার পর এই হয়রানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর একজন বলেছেন, যখনই বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয় ঠিক তখনই, প্রতিবার আমি এবং আমার পরিবারের প্রচণ্ড ঘৃণাপ্রসূত অপরাধের শিকার হয়ে থাকি।
সাক্ষাৎকারে আরও একজন বলেছেন, সব মিলিয়ে সার্বিক পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। যেসব এশিয়ানকে দেখতে মুসলিমদের মতো তাদের ওপর ইসলাম বিরোধিতার প্রভাবটা অনেক বেশি করে পড়ছে। এভাবে খুব বেশি ছড়িয়ে পড়ছে ইসলামবিরোধী অপরাধগুলো।
অপরদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাদের অনুসন্ধানে যে নতুন তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যায়, গত বছরে বৃটেনে ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ বেড়েছে এক তৃতীয়াংশ। কেও কেও যুক্তি দিয়ে বলছেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এবং তার অবস্থানের কারণে মুসলিম বিরোধিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মুসলিমবিরোধী সেন্টিমেন্টকে উসকে দেওয়া হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারে জনৈক ব্যক্তি বলেছেন, আমি লক্ষ্য করেছি- ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সামাজিক মিডিয়ায় এমন অবমাননা ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই কঠোর। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে চান। এমনটা আপনি ৫ বছর পূর্বে ভাবতে পারতেন না।
এমন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা বলেছেন যে, তারা এতে বিষণ্নতায়, শারীরিক এবং মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। প্রতিদিন আমাদেরকে আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। আমাদেরকে প্রতিদিনই কোনো না কোনো অবমাননার মুখে পড়তে হচ্ছে। আমাদের ভীতি প্রদর্শন করা হয়। এই অবস্থা তো চলতে দেওয়া যায় না। এই অবস্থায় তাদেরকে সাহায্য করার জন্য কেও এগিয়ে আসছে না বলে তিনি দাবি করেছেন।