দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাধারণ দেখা যায় মসজিদে মেয়েদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা থাকে। তবে শুধু মেয়েদের জন্য চীনে রয়েছে শত বছরের পুরোনো মসজিদ। আজ ওই মসজিদ সম্পর্কে জানুন।
চীনের অনেক স্থানে দেখা যায় রোজা করার উপর নিষেধাজ্ঞা বা মহিলাদের হিজাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তাই চীনকে অনেকেই বিধর্মী রাষ্ট্র হিসেবে মনে করে থাকে।
তবে এবার বেরিয়ে এসেছে চীনের মতো একটি স্থানে রয়েছে নারীদের জন্য পৃথক মসজিদ! শুধু তাই নয়, শত শত বছর আগেই নির্মিত হয়েছে এইসব মসজিদটি।
গোটা বিশ্বে মুসলিমদের সকলের ধর্মাচরণও ঠিক একই রকমের নয়। এক এক দেশে এক এক ভাবে পালিত হয় ধর্ম-কর্ম। এই বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে এবার দেখা গেলো এক নতুন দৃষ্টান্ত। আর সেটি হলো চীনে। সেখানে শুধু মহিলাদের জন্য পৃথক মসজিদ নির্মিত হয়েছে, বহু বছর আগে অর্থাৎ শত শত বছরে আগে!
মহিলাদের জন্য এমনই মসজিদ রয়েছে চীনের হেনান প্রদেশের কাইফেং শহরে। ইয়েলো রিভার বা পীত নদীর অববাহিকার ঠিক মাঝখানে অবস্থিত এই মসজিদটি।
ইতিহাস হতে জানা যায়, চীনের এই কাইফেং প্রদেশটি ছিল সং রাজবংশের প্রাচীন রাজধানী। এক হাজার বছর পূর্বে বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর অন্যতম ছিল এই কাইফেং। নানা ধর্মের বসবাস ছিল এই ঐতিহ্যবাহী নগরীতে।
ইসলাম এবং খ্রীষ্টধর্ম এই দুটি ধর্মই কাইফেংয়ে পা রাখে সপ্তম শতাব্দীতে। ওই শহরের ওল্ড সিটির সরু গলিগুলোর মাঝে আজও রয়েছে খ্রীষ্টানদের গীর্জা, মুসলিমদের বহু মসজিদ, বৌদ্ধ এবং দাওয়িস্টদের মন্দির।
শুধু তাই নয়, এমন কী সেখানে চীনের হাতে গোনা কিছু ইহুদী সম্প্রদায়েরে লোকজনও রয়েছেন, আর রয়েছে তাদের উপাসনালয়ও।
তবে কাইফেংয়ের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো শুধু নারীদের জন্য পৃথক একটি মসজিদ। সেই মসজিদের ইমামও একজন মহিলা। কাইফেং শহরে মহিলা মসজিদ সম্পর্কে বিবিসি একটি খবর প্রকাশ করে।
শহরে পুরুষদের জন্য যে প্রধান মসজিদটি রয়েছে, তার উল্টোদিকের গলিতেই রয়েছে মেয়েদের এই মসজিদ। আশেপাশে বহু খাবারের দোকানও রয়েছে সেখানে।
চীনের কাইফেংয়ের নারীদের ওই মসজিদের ইমামের নাম গুয়ো জিংফাং। তাঁর বাবা ছিলেন পুরুষদের মসজিদের ইমাম, তাঁর কাছেই তিনি শিখেছেন ইমামতি।
শুধুমাত্র নারীদের জন্য কাইফেংয়ে যে সব মসজিদ রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো এই ‘ওয়াংজিয়া গলির মসজিদ’। এটি নির্মিত হয়েছিল প্রায় দুশো বছর পূর্বে ১৮২০তে।
ইমাম গুয়ো জিংফাং বলেছেন, নারীদের জন্য মসজিদ চীনের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। তবে হেনান প্রদেশে এই ধরনের মসজিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
কাইফেং শহরে যেমন মেয়েদের জন্য মসজিদ রয়েছে মোট ১৬টি। আশেপাশের গ্রামীণ এলাকায় আরও প্রচুর রয়েছে। ইয়ুনান বা ঝেংজোউ-তেও রয়েছে শুধু মেয়েদের জন্য পৃথক অনেক মসজিদ।
তবে চীনের যেটি একমাত্র মুসলিম প্রদেশ, সেই শিনজিয়াংয়ে এমন কোনও মসজিদ নেই। তারা সেখানে সুন্নি ইসলামেরই একটি মধ্য এশিয়া-ঘেঁষা ধারা তারা অনুসরণ করে থাকেন।
বিবিসির ওই প্রতিবেদক গবেষক মাইকেল উড বলেছেন, ষোড়শ শতাব্দীতে চীনের মুসলিম সমাজের মধ্যে এই উপলব্ধিটা ক্রমশ বাড়তে থাকে যে তাদের ধর্মবিশ্বাসকে টিঁকিয়ে রাখতে হলে মেয়েদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
চীনের মুসলিমদের মধ্যে তখন হতেই মেয়েদের পড়াশুনো করানোর ওপরও বিশেষ জোর দেওয়া হতো।
কাইফেংয়ে গুয়ো জিংফাং এবং তার বন্ধুরা বলছিলেন, প্রথমে মেয়েদের কোরআন এবং ধর্মশিক্ষা দেওয়ার জন্য নানা স্কুল গড়ে তোলা হয়। তারপর সেগুলোই অষ্টাদশ শতাব্দীতে এসে পুরোদস্তুর মসজিদের রূপ নেয়।
সেখানকার এক মুসলিম মহিলা বলেছেন, ‘‘আমাদের মায়েরা যখন ছোট ছিলেন তখন গরিব মুসলিম মেয়েদের পড়াশুনোর একমাত্র সুযোগ ছিল এই মসজিদগুলোতেই। মূলত মেয়েরাই তখন মেয়েদের দেখেছে’’।
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি জানি মুসলিম দুনিয়ার অনেক স্থানেই মেয়েদের জন্য পৃথক মসজিদের কোনও অনুমতি নেই। তবে আমাদের এখানে এটা একটা খুব ভালো ব্যাপার বলেই আমরা মনে করি’’।
উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সাল হতে চীনে মুসলিম মেয়েদের মর্যাদা অনেক বেড়েছে। শুধু মেয়েদের জন্য এই মসজিদগুলো সেই প্রক্রিয়ারই এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করছেন কাইফেংয়ের মুসলিম নারী ও স্থানীয় মুসলিমরা।