এম. এইচ. সোহেল ॥ জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার মাধ্যমে আবারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রমাণ করলেন তিনি ধর্মবিদ্বেষী। বিশেষ করে মুসলিম ধর্মের প্রতি তিনি বেশি বিদ্বেষী।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুসলমানদের উপর নানা ধরনের অত্যাচার-নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি মুসলমানদের তার দেশে প্রবেশের উপর নানা শর্ত আরোপ করেন। নিরাপত্তার অজুহাতে এইসব কাজ করছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত সব দেশই করে থাকে। মার্কিন মুলুকে বর্তমানে বহু মুসলমান বসবাস করছেন। তারা নিরাপত্তার বিষয়টিকে কখনও খাটো করে দেখেন না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি রাষ্ট্রের প্রধানতম কাজ। কিন্তু তাই বলে নিরাপত্তার নামে মানুষকে হয়রানি করার মতো কাজ কখনও যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। যেমন শাহরুখ খান বা বলিউডের অনেক মুসলিম অভিনেতা মার্কিন মুলুকে গিয়ে হয়েছেন নাজেহাল। তাঁদেরকে কে চেনে না? তাদের দেখার পর কী তাদের কাগজপত্র যাচাই করার প্রয়োজন পড়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে? এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা বিশ্বের অনেককেই বিস্মিত করেছে। তবে দেশটির আদালত বার বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডকে থামিয়ে দিয়েছেন।
এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে। তিনি হঠাৎ করেই ঘোষণা করলেন জেরুজালেন ইসরাইলের রাজধানী! ইতিহাস বোঝেন না এমন রাষ্ট্রপ্রধান বোধহয় আমরা দেখিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ইতিহাস জানেন না বা বোঝেন না সেটিও প্রমাণ করেছেন। কারণ ফিলিস্তিনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিবাদ রয়েছে জেরুজালেমকে নিয়ে। আল-আকসা মসজিদ নিয়ে বহু বিতর্ক এবং রক্তপাতের মতো ঘটনা আমাদের সকলের জানা।
আল-আকসা মসজিদটি তালাবদ্ধ করে রেখে বহু কাণ্ড করে এসেছেন ইসরাইল নামক ইহুদি রাষ্ট্র। ফিলিস্তিনিসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের প্রতিবাদের মুখে মসজিদটি আবার খুলে দেওয়া হয় শেষ পর্যন্ত। আর সেই রাষ্ট্রের ‘দালালি’ করতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যা করলেন তা দেখে বিশ্ববাসি সত্যিই হতভম্ব না হয়ে পারেনি। কারণ মুসলমান পুন্যস্থান হলো এই জেরুজালেম। এর ইতিহাসও আজকের নয়।
জেরুজালেমের এই আল-আকসা মসজিদ ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ। ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল এই ঐতিহাসিক মসজিদটি দখল করে রেখেছে। ১৯৬৯ সালে তারা একবার আল আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছিলো।
এই পবিত্র মসজিদ হতেই রাসূল (সা.) উর্ধাকাশে তথা মেরাজ গমন করেছিলেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই সম্পর্কে আল কোরআনে বলেছেন, “সকল মহীমা তাঁর যিনি তাঁর বান্দাকে এক রাতে মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন; যার চতুর্পার্শ্বকেই আমি বরকতময় করেছি। এই (উর্ধাকাশে) ভ্রমণ করানোর উদ্দেশ্য হলো, যাতে আমি আমার নিদর্শন তাঁকে প্রদর্শন করি।” (সুরা বনী ইসরাইল: আয়াত ১)
এই মসজিদের ইতিহাসও রয়েছে অনেক। হযরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবা গৃহ নির্মাণের ৪০ বছর পর হযরত ইয়াকুব (আ.) এই আল-আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ১০০৪ সালে হযরত সুলাইমান (আ.) এই মসজিদটির পূণর্নির্মাণ করেন। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে সমগ্র বায়তুল মোকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের দখলে আসার পর মুসলমান শাসকরা কয়েকবার এই মসজিদটি সংস্কার করেছেন।
১০৯৬ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখল করে নেওয়ার পর আল-আকসা মসজিদের ব্যাপক পরিবর্তন করে এটিকে গীর্জায় পরিণত করে! তারা মসজিদের গম্বুজের উপরে ক্রুশ স্থাপন করে নাম রাখে ‘সুলাইমানি উপাসনালয়’।
১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবী জেরুজালেম অধিকার করার পর পূর্বের নকশা অনুযায়ী আল-আকসা মসজিদ পুণর্নির্মাণ করেন। ঐতিহাসিক এই মসজিদটির আয়তন সাড়ে ৩ হাজার বর্গমিটার। এই মসজিদে ৫ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। অথচ যুগে যুগে এই মসজিদটি নিয়ে ইসরাইল নানা ধরনের রাজনীতি করে আসছে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
তাই মুসলমানদের পবিত্রতম স্থান হলো এই জেরুজালেম। এই জেরুজালেমকে নিয়ে ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসছে। ফিলিস্তিনের সঙ্গে যুদ্ধ ও নানা অত্যাচার করে আসছে ইসরাইল। তবে ইসরাইলের এইসব কর্মকাণ্ডকে বরাবরই সমর্থন দিয়ে আসছে বিশ্বের ‘বাবা রাষ্ট্র’ হিসেবে খ্যাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এবার বর্তমান ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেনো আরেকধাপ এগিয়ে গিয়ে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণা যেমন মুসলিম কোনো রাষ্ট্র মানেনি, তেমনি জাতিসংঘসহ বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রও মানেনি। বরং অমুসলিম রাষ্ট্রও এর তীব্র প্রতিবাদ করেছেন।
তাই নির্দিধায় এবং এক বাক্যে বলা যায়, জেরুজালেম হলো মুসলমানদের পবিত্রতম একটি স্থান। এখানে ইহুদিদের রাজধানী কখনও হতে পারে না।