দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর নিধনযজ্ঞের কারণে দেশটির সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারপরও নাকি মার্কিন নৌ মহড়ায় অংশ নেবে মিয়ানমার!
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, আগামী সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে দেশগুলোর সামরিক মহড়া দক্ষিণ চীন সাগরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে তাতে মিয়ানমারের অংশ গ্রহণের কথা।
আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌ মহড়ায় মিয়ানমার বাহিনীর অংশগ্রহণের বিষয়টি গত বুধবার সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করেছেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনী প্রধানের কার্যালয়ের মুখপাত্র জ মিন তুন। এই খবর দিয়েছে চ্যানেল নিউজ এশিয়া।
সিঙ্গাপুর ভিত্তিক এ সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, দুই বছর পূর্বে ৭ লাখ ৪০ হাজার (প্রকৃত সংখ্যা হবে প্রায় ১২ লাখ) রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার পর মিয়ানমারের সেনা প্রধান এবং তিন জ্যেস্ঠ সিনিয়র কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিলো। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে যে, ওই নিধনযজ্ঞকালে প্রধান ভূমিকা মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখলেও এতে যুক্ত ছিল মিয়ানমারের নৌবাহিনীও।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশ নিয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক জোট হলো এই আসিয়ান (অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান ন্যাশনস)। সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ হতে থাইল্যান্ড উপসাগরে এই জোটের নৌমহড়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অংশ নিতে চলেছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে যখন নিষেধাজ্ঞার জালে রাখা হচ্ছে ঠিক সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন মহড়ায় মিয়ানমারকে তাদের দলে নিবেন কিনা এমনটি ভাবছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। এ প্র সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটসের মুখপাত্র জন কুইনলে বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হলো আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে জবাবদিহিতার জন্য মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখা। তাদের সঙ্গে সামরিক মহড়ায় অবশ্যই অংশ নেওয়া নয়।’
এই মহড়াকে ‘অত্যন্ত বেদনার’ বলে মন্তব্য করেছেন রোহিঙ্গা বিষয়ক মানবাধিকার কর্মী তুন কিন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন যে, ‘মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর প্রধানকে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত করার এক সপ্তাহ পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে মহড়া করছে।’ তবে মিয়ানমারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা আসিয়ানভুক্ত দেশ হওয়ার কারণে এই মহড়ায় অংশগ্রহণের প্রস্তাব পেয়েছে। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রও এই মহড়াকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রঅঞ্চলে যৌথ নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ বলেই অভিহিত করেছে। দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বলা হয়েছে যে, আসিয়ানের ১০টি দেশ নিয়ে আয়োজিত এই মহড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্র অঞ্চলে জরুরি নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করার একটি সুযোগ রয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনায় দেশটির সরকারের ওপর শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। গত সোমবার নতুন করে শীর্ষস্থানীয় একাধিক মার্কিন আইনপ্রণেতা এক বিবৃতিতে এমন একটি আইনের প্রস্তাব করেছেন যে, যাতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্মম সহিংসতার জন্য মিয়ানমার সরকারকে নতুন নিষেধাজ্ঞার চাপে ফেলা সম্ভব হয়।