ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ র্যাবের ক্রস ফায়ার বা এন কাউন্টার বা বিচার বহির্ভূত হত্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে বিতর্ক। বিশেষ করে নিরীহ মানুষ যখন মারা যায় তখন এ প্রশ্নটি আরও বড় আকারে উঠে আসে। এ সপ্তাহে নরসিংদীর ঘটনার পর আবারও এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ সেখানে যে ৬ জন মারাগেছে র্যাবের গুলিতে। তার মধ্যে ২ জন এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এমন ছাত্র ছিল। তারা কিভাবে এমন একটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিএনপি তথা চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এই র্যাব গঠন করা হয়। প্রথম থেকেই র্যাবের ক্রস ফায়ার নিয়ে বিতর্ক ছিল। তবে সে সময় তালিকাভূক্ত অনেক ক্রিমিনাল এভাবে ক্রস ফায়ারে মারা যাওয়ার কারণে সবাই তেমনভাবে প্রতিবাদ করেনি। শুধু মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগা গোড়ায় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করে আসছে। তবে মাঝে মধ্যেই দুএকটি রাজনৈতিক কর্মী হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বরাবরই। সে সময় থেকেই আওয়ামীলীগ র্যাব গঠনের নিন্দা করে আসছিল। নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা ক্ষমতায় গেলে র্যাবের এই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড তারা বন্ধ করবে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর এর কোন পরিবর্তন ঘটেনি। মাঝে মধ্যেই ঘটছে ক্রসফায়ারের ঘটনা। তবে যখন নিরীহ মানুষকে প্রাণ দিতে হচ্ছে তখন এ প্রশ্ন আরও বড় করে দেখা দিচ্ছে।
নরসিংদীর ঘটনাও তেমনই একটি ঘটনা। নিহত ৬ জনের মধ্যে দু’জনই এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তাদের পরিবার বলছে, এরা একেবারেই নির্দোশ। এমনকি ওই এলাকার মানুষও তাই বলছে। এই দুজন নির্দোশ, কেনো তাদের অকারণে বলি হতে হলো।
আসলে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোন দেশেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে আমাদের দেশে কিছু সমস্যা রয়েছে তা আমরা সবাই জানি। কারণ একজন দোষি ব্যক্তি পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তাকে কোর্টে প্রেরণ করা হলে সে কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসে। অনেক বড় বড় এবং অনেকগুলো মার্ডার কেসের আসামীও জামিন নিয়ে চলে আসে এবং আবার এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়। এই আলোকে র্যাব গঠনের প্রথম দিকে যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছিল। বিশেষ করে সর্বহারা বা তালিকাভূক্ত আসামীদের যারা ক্রস ফায়ারে মারা গেছে, তাদের নিয়ে তেমন একটা প্রতিবাদ হয়নি। শুধুমাত্র মানবাধিকার সংগঠন গুলো বরাবরই এ ধরনের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করে আসছে।
বাংলা ভাইয়ের মতো ক্রিমিনালকে র্যাব গ্রেফতার করে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কিন্তু দু’একটি ঘটনার জন্য পুরো বিষয়টিই আজ বিতর্কিত হয়ে যাচ্ছে বার বার।
আমরাও চাই দেশে মানবাধিকার সমুন্নত থাকুক। কোন নির্দোশ ব্যক্তিকে যেনো আর বলি হতে না হয় সেদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কঠোর দৃষ্টি দেবে বলে আমরা আশাবাদি। কারণ এ ধরনের ঘটনা শুধু দেশে নয়, বর্হিবিশ্বের কাছেও দেশের সুনাম ক্ষুন্ন হবে। তাছাড়া বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় যেহেতু এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না বলে কথা দিয়েছিল, সে কথাও ঠিক রাখা বর্তমান সরকারের একটি নৈতিক দায়িত্বও বটে। এতে শুধু দেশের নয়, সরকারের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে।