দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ওজনের কম-বেশি ধরার জন্য এতোদিন বিএমআই (BMI) পদ্ধতিতে মাপা হতো। তবে এই পদ্ধতি অবশ্য নিখুঁত নয়। তাই বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিআরএই (BRI) পদ্ধতিটি।
আপনার ওজন বেশি বা কম রয়েছে নাকি স্বাভাবিক রয়েছে, এই বিষয়টি জানার জন্য সাধারণত বিএমআই কিংবা বডি মাস্ক ইনডেক্সের সাহায্য নেওয়া হয়। এইক্ষেত্রে ব্যক্তির ওজন ও উচ্চতার উপর ভিত্তি করে অঙ্ক করা হয়। এখানেই বড়সড় ফাঁক থেকেই যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষায়, এই পদ্ধতিতে শুধু ওজন ও উচ্চতাই বিবেচ্য। অন্যকিছুই দেখা হয় না। যে কারণে ওজনের ঠিকঠাক মূল্যায়নও সম্ভব নয়। যে কারণে বিজ্ঞানীরা অনেক ভেবে এনেছেন বিআরআই পদ্ধতিটি। এই পদ্ধতির সাহায্য নিলে কোনও ব্যক্তির ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ঠিক কতোটা রয়েছে, সেটি জানা সম্ভব।
বিএমআই-এর সমস্যাটা কোথায়?
একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। মনে করুন একজন ব্যক্তির বিএমআই স্বাভাবিক। সেই হিসাবে দেখতে গেলে তার প্রেশার, সুগার, কোলেস্টেরলের মতো জটিল রোগের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কাও কম। তবে এই ভাবনাতেও ফাঁক রয়েছে। কারণ হলো, বিএমআই-এর ক্ষেত্রে সারা শরীরে ফ্যাটের হিসাব করা হয়। ভুঁড়ির মাপ পৃথক করে দেখা হয় না। বেশির ভাগ সময়ই পেটের ফ্যাটের জন্য এইসব ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে। তাই বিএমআই-এর হিসাব করে তেমন একটা লাভই হয় না।
বিআরআই’তে হবে সমস্যার সমাধান
বিআরআই কিংবা বডি রাউন্ড ইনডেক্স বিএমআই-এর থেকে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিআরআই-এর সাহায্যে এটা খুব সহজেই বলে দেওয়া যাবে যে কোনও ব্যক্তির ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল কিংবা হাইপারটেনশনের মতো লাইফস্টাইল ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও ঠিক কতোটা। তাই ধীরে ধীরে বিএমআই’কে ছাপিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই বিআরআই।
পেটের মেদই কী সমস্যার কারণ
এই পদ্ধতিতে শুধু ব্যক্তির উচ্চতা ও ওজনকে মাথায় রাখা হয় না। সেইসঙ্গে তার ভুঁড়ির মাপও বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যে কারণে টোটাল ফ্যাট ও ভিসেরাল ফ্যাটের মধ্যে তফাতও করা যায়। আসলে ভিসেরাল ফ্যাট কিংবা অ্যাবডোমিনাল ফ্যাট হলো সব থেকেই ক্ষতিকর ফ্যাট। এই ফ্যাট পেটের অন্দরে উপস্থিত সব অঙ্গকেই চারদিক থেকে ঘিরে রাখে। যে কারণে একাধিক রোগের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কাও তখন বাড়ে।
এবিএসআই মাথায় রাখতে হবে
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়ারোমেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ জানিয়েছে যে, শুধু বিআরআই নয়, সেইসঙ্গে বডি শেপ ইনডেক্স কিংবা এবিএসআই’ও মাথায় রাখা দরকার। এই দুইয়ের ফলাফলই যদি ঊর্ধ্বমুখী হয়, তাহলে বুঝতে হবে ব্যক্তির ভিসেরাল ফ্যাট অনেকটা বেশি। যে কারণে একাধিক জটিল ক্রনিক অসুখও তখন নিতে পারে পিছু। তাই এই বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই সাবধান হতে হবে।
বিআরআই-এর সূত্র কী?
BRI = 365.2 − 365.5 × √(1 − (((wc/2π)2)/[(0.5 × height)]^2))- এটি হলো বিআরআই-এর সূত্র। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সকলের পক্ষেই বিআরআই-এর অঙ্ক কষা কিন্তু সম্ভব নয়। তাই চেষ্টা করুন কোনও বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে এই অঙ্কটি করার। এরপর বিআরআই স্কোর যদি বেশি বের হয়, তাহলেই সাবধান হয়ে যান। পেটের ফ্যাট কমানোর কাজে লেগে পড়তে হবে। অন্যথায় শরীর এবং স্বাস্থ্যের হাল বিগড়ে যেতেও তখন সময় লাগবে না- তাই সময় থাকতে সাবধান হতে হবে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org