দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেক সময় দেখা যায় কেও কেও ঘুম থেকে উঠেই মোবাইলের ব্যবহার করেন। এতে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। চোখের ক্ষতি হচ্ছে, আবার শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি, অস্থিরতাও বহু গুণে বেড়ে যাচ্ছে। মনে নেতিবাচক চিন্তাভাবনাও বাসা বাঁধছে।
অনেকেই সকালে চোখ খুলেই বালিশের পাশে রাখা মুঠোফোনটিকে আগে হাতে তুলে নেন? মোবাইল ডেটা অন করলেই আপনার ফোনে একে একে ঢুকতে থাকে হোয়াট্সঅ্যাপ, অফিসের মেইল, নেটমাধ্যমের নোটিফিকেশন। একটির পর একটি অ্যাপে তখন স্ক্রল করতে থাকেন। সেইসঙ্গে গুগলে জরুরি জিনিস খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। শপিং সাইটগুলোতে নতুন কী আপডেট এলো তাও জানার জন্য কৌতুহল থাকেন অনেকেই। অর্থাৎ, সকালে ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল ফোনের নীল রশ্মি আপনার চোখের দফারফা করে। এর প্রভাব যে কতোটা সুদূরপ্রসারী, তা বুঝতেও পারেন না বেশির ভাগ মানুষ। চোখের ক্ষতিই কেবল নয়, সকাল বেলায় মোবাইল ঘাঁটার এই অভ্যাস শরীর এবং মনের উপরেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।
সকালে উঠে মোবাইল ঘাঁটার অভ্যাস কী কী ক্ষতি করতে পারে?
মানসিক চাপ
মানসিক চাপ মারাত্মকভাবে বেড়েও যেতে পারে। নেটমাধ্যমের পাতায় ক্রমাগত আসতে থাকা ছবি, ভিডিও কিংবা ব্যক্তিগত বার্তালাপের ধারাবাহিক প্রবাহ- যা মস্তিষ্কে চাপও সৃষ্টি করতে পারে। যে কারণে ‘স্ট্রেস হরমোন’-এর ক্ষরণ অনেকটা বেড়ে যেতে পারে। শরীরের সঙ্গে মানসিক ক্লান্তিও বাড়বে।
ঘটতে পারে ঘুমের ব্যাঘাত
স্মার্টফোন ব্যবহার করলে ফোনটির নীল আলো মস্তিষ্কে ‘মেলাটোনিন’ নামক হরমোনের নিঃসরণেও বাধা দেয়। এই হরমন ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যে কারণে বেশি মোবাইল ঘাঁটলে ঘুমের সমস্যাও দেখা দেবে। উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা এতোটাই বেড়ে যাবে যে, অনিদ্রাজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কাজে অমনোযোগী
সকাল বেলায় মোবাইলে ব্যস্ত থাকলে গোটা দিনের সমস্ত কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মনোযোগ তলানিতেও এসে ঠেকতে পারে। তারপর যখন কাজের জায়গায় যাবেন, তখন কাজে উৎসাহ আরও কমবে। নেটমাধ্যমে নানা নেতিবাচক মন্তব্য কিংবা সমালোচনা এতোটাই প্রভাব ফেলবে মস্তিষ্কে যে, অস্থিরতা বহু গুণে বেড়েও যেতে পারে। কোনও একটি কাজ মন দিয়ে করতে পারবেন না। প্রতিদিনই কাজে একাগ্রতাও কমবে।
চোখের ক্ষতি হবে
চোখের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ারও আশঙ্কাও রয়ে যায়। এই অভ্যাসের কারণে ‘ড্রাই আইজ়’-এর সমস্যাও ক্রমশ বাড়তে পারে। ছোট থেকে বড়, সকলেই এই রোগের শিকারও হয়ে থাকেন। অভ্যাসে রাশ টানা ছাড়া এই সমস্যা প্রতিরোধের কোনও উপায়ও নেই। তাই মোবাইলের ব্যবহার কমাতে হবে। কেবলমাত্র তা হলেই চোখ সুরক্ষিত থাকবে।
বাস্তব জগতের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্নতা
ঘুম চোখ খুলেই নেটমাধ্যমের পাতায় চোখ রাখলে মনের অস্থিরতাও বাড়তে বাধ্য। এই বিষয়ে মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মত হলো, নেটমাধ্যমের নেশাকে ‘আচরণগত আসক্তি’ও বলা হয়। দেখা গেছে, যারা বেশি সময় নেটমাধ্যমে কাটান, তারা আশপাশের সম্পর্কগুলোকে তেমনভাবে গুরুত্বও দিতে চান না। এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়- তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এটি দেখা যায়। ভার্চুয়াল বন্ধুর দামি গাড়ি কিংবা সাজানো বাড়ির ছবি মনে ঈর্ষা জাগাতেই পারে, স্নায়ুজনিত উত্তেজনা তৈরি করতে পারে। অন্যের সঙ্গে তুলনা টানতে টানতে কাছের সম্পর্কগুলোও অনেক দূরে চলে যেতে পারে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org