দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো ফুসফুস। এটি আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে জীবনধারাকে সচল রাখে।

তবে ধূমপান, দূষিত পরিবেশ, অনিয়মিত জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। ফলে হাঁপানি, নিউমোনিয়া, সিওপিডি (COPD), ক্যানসারসহ নানা ধরনের জটিল রোগ দেখা দেয়। তাই সুস্থ জীবনযাপনের জন্য ফুসফুসের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিচে ফুসফুস ভালো রাখার কিছু কার্যকর উপায় উল্লেখ করা হলো।
ধূমপান পরিহার
ধূমপান পরিহার করা ফুসফুস রক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সিগারেটের ধোঁয়ায় প্রায় ৭ হাজারেরও বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যার মধ্যে বহু পদার্থ ক্যানসার সৃষ্টি করে। শুধু ধূমপায়ী নয়, পরোক্ষ ধূমপানও ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই নিজে ধূমপান না করার পাশাপাশি ধূমপায়ীর সংস্পর্শ থেকেও দূরে থাকা প্রয়োজন।
পরিষ্কার বাতাস
পরিষ্কার বাতাসে শ্বাস নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। শহরাঞ্চলের বায়ু দূষণ ফুসফুসের বড় শত্রু। তাই সম্ভব হলে সকালে খোলা জায়গায়, গাছপালায় ভরা এলাকায় কিছু সময় হাঁটলে ফুসফুসে বিশুদ্ধ অক্সিজেন প্রবেশ করে। বাসা বা অফিসের জানালা খুলে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখা উচিত। তা ছাড়াও ঘরে ধুলাবালি জমতে না দেওয়াও জরুরি, কারণ ধুলিকণাও ফুসফুসে জ্বালাভাব সৃষ্টি করে।
শারীরিক ব্যায়াম
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার, যোগব্যায়াম বা প্রণায়াম- এসব ব্যায়াম ফুসফুসে অক্সিজেন গ্রহণ ও নিঃসরণের প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে। বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের ব্যায়াম যেমন “ডিপ ব্রিদিং” বা গভীর শ্বাস নেওয়া ফুসফুসের পেশি শক্তিশালী করে।
সুষম খাদ্যাভ্যাস
সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা উচিত। ভিটামিন সি, ই, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ফলমূল যেমন কমলা, পেয়ারা, আপেল, ব্রোকলি, গাজর এবং রসুন ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পানি পান ফুসফুসের টিস্যু আর্দ্র রাখে, যা শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করে। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া বা প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো শরীরে টক্সিন বাড়ায়।
বিশ্রাম ও ঘুম
পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুম ফুসফুসকে পুনরুজ্জীবিত করে। দীর্ঘ সময় ঘুমের ঘাটতি বা মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়, যার ফলে ফুসফুস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যাদের দীর্ঘদিন কাশি, শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা থাকে, তাদের অবশ্যই ফুসফুসের পরীক্ষা করানো উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসা সহজ হয় এবং ফুসফুস সুস্থ রাখা যায়।
তাই বলা যায়, ফুসফুস ভালো রাখতে প্রয়োজন সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। ধূমপান পরিহার, বিশুদ্ধ বায়ু গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্য ও মানসিক প্রশান্তিই হতে পারে সুস্থ ফুসফুসের মূল চাবিকাঠি। ফুসফুস ভালো থাকলে শরীর এবং মন- দুটোই থাকবে সতেজ ও প্রাণবন্ত।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org