দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রাস্তায় পথ চলতে গিয়ে কোন দিকে যাবেন কিংবা আপনার সামনে দিয়ে চলে যাওয়া একটি গাড়ির গতিবেগ কেমন হতে পারে এই সকল বিষয়ে আমাদের ধারণা মস্তিস্কের ভেতর একটি যুক্তিসংগত চেতনা সৃষ্টি করে বলেই আমরা রাস্তায় চলাফেরা করতে পারি।
কিন্তু নিউরোবিজ্ঞানীরা বলেন, এই ধরনের অনুভুতির অনেকটাই প্রক্রিয়াজাত চেতনা সৃষ্টি হওয়া শুরু হয় চোখের রেটিনায়। গবেষকরা বলছেন, আমাদের চোখের রেটিনায় রয়েছে এমন অনেক কোষ যারা চোখের সামনের বিভিন্ন গতিশীল বস্তুর দিক এবং বেগকে নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মস্তিষ্কের সাথে চোখের রেটিনার কোষের তার ব্যবস্থা এটিই প্রদর্শন করছে যে রেটিনা কোষগুলো মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই কথাগুলো বলেন ড. সেবাস্তিয়ান সেয়াং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুয়েটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির একজন কম্পিউটিশনাল নিউরো বিজ্ঞানী। কিভাবে এই রেটিনা কোষগুলো একে অপরের সাথে জড়িত এই প্রশ্নের জবাবে ড. সেবাস্তিয়ান বলেন, গবেষকরা এই গবেষণাটিকে বিশ্লেষণ করার জন্য একটি শক্তিশালী ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করেন। যেখানে দেখা যায় যে, চোখে প্রায় ২২০০ রেটিনা কোষ রয়েছে। এছাড়া গবেষকরা অনলাইনে ‘সিটিজেন সাইন্স’ নামে একটি গেমের আয়োজন করে যেখানে এর গেমারদের রেটিনার কোষগুলোর সাথে ব্রেইনের সম্পর্ক কিভাবে স্থাপিত হয় তা খুজে বের করতে হবে। এর মাধ্যমে গবেষকরা ব্রেইনের একটি ম্যাপ তৈরি করতে চেয়েছিলেন।
এই গেমের গেমাররা রেটিনার সাথে মস্তিস্কের একটি সম্পর্কের চিত্র খুঁজে বের করতে সমর্থ হন। তারা দেখাতে সক্ষম হন যে রেটিনার সাথে মস্তিস্কের গভীর অংশের একটি উচ্চ ক্ষমতার বৈদ্যুতিক তার ব্যবস্থার মতো একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। পরবর্তীতে গবেষকরা এই ব্যবস্থার সাহায্যে মস্তিস্কের ম্যাপিং এর একটি ডায়াগ্রাম ফুটিয়ে তুলতে সমর্থ হন। পুনরায় গড়ে তোলা এই ম্যাপের সাহায্যে দেখা যায় যে, চোখের কোন এক প্রকার বাইপোলার সেল সংযোগ স্থাপন করে মস্তিস্কের অ্যামাক্রিন কোষের সাথে। চোখের গ্যাংগলিয়ন কোষের ফটোরিসেপ্টর থেকে উদ্দিপ্ত তথ্য বাইপোলার সেলের মাধ্যমে মস্তিস্কের অ্যামাক্রিন কোষে প্রেরিত হয়। এর মাধ্যমে আমরা বাস্তব পৃথিবীর দেখে থাকা প্রায় ৭০ শতাংশ তথ্য মস্তিস্কে প্রেরণ করে থাকি। বৈদ্যুতিক বাতির ফিলামেন্টের মতোই একেকটি কোষ অপর কোষের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
চোখের বাইপোলার কোষের সাথে মস্তিস্কের অ্যামেক্রিন কোষের এই সম্পর্কের ফলে আমরা চোখের মাধ্যমে কোন একটি গতিশীল বিষয়ের সময়ের তারতম্য হিসেব করতে পারি। যা অনেকটা তাৎক্ষণিক তথ্য প্রেরণের মতোই কাজ করে থাকে। চোখের মাধ্যমে গতিশীল বস্তুর দূরত্ব এবং গতির তারতম্য আমাদের মস্তিস্কে সময়ের একটি আনুমানিক ধারণা দিয়ে থাকে। যার ফলে আমরা রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে গাড়ির দূরত্ব এবং গতির হিসেবটি ধরতে পারি। কিংবা ক্রিকেট খেলার সময় ক্যাচ ধরার ক্ষেত্রে হাতের অবস্থানটি নির্ধারণ করতে পারি। চোখের মাধ্যমে পাওয়া সংকেতটি রেটিনার দুটি ভিন্ন স্থানে সামান্য সময়ের পার্থক্যে আঘাত করে। স্থান দুটির নাম রড ও কোন। ফলে কোন ব্যক্তি যখন তার চোখের সামনে একটি গতিশীল বস্তু দেখতে পায় তখন একই সময়ে মস্তিস্কের অ্যামেক্রিন কোষেও তার অনুভূতি প্রেরিত হয়। এই আবিস্কারের মাধ্যমে গবেষকরা বুঝতে পেরেছেন ব্রেইন কিভাবে গতি নির্ধারণ করে কেননা এই ক্ষেত্রটি সত্যিকার অর্থে ব্রেইনে নয় চোখে সংঘটিত হয়। মূলত চোখের এই নির্ধারণটি মস্তিস্কের মধ্যে উদ্দীপ্ত হয়ে থাকে।
তথ্যসূত্রঃ টাইমসঅবইন্ডিয়া