এম. এইচ. সোহেল ॥ সাভারে ভবন ধসের ঘটনায় বহু মানুষ আহত-নিহত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৩৯৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। জীবিত উদ্ধার হয়েছে ২৪৪৪ জন। গতকাল ৫ম দিনেও জীবিত উদ্ধার করা হয়। কিন্তু গতকালের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি ছিল সাহানা। তাকে উদ্ধারের জন্য সারাদিন প্রাণান্ত চেষ্টা করা হয় কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে আর উদ্ধার করা যায়নি। যে মহিলা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছে বেঁচে ফেরার কিন্তু তা আর হলো না।
গতকাল ভোরে সাহানাসহ একই স্থানে আরও তিন জনের সন্ধ্যান পান উদ্ধার কর্মীরা। বিভিন্ন ভাবে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। সাহানার সাথে আরও যে তিন জন ছিলেন তারা একেবারেই অচেতন অবস্থায়। তবে সাহানা বেশ সুস্থ্য ছিলেন। তাকে উদ্ধারকর্মীরা পানি-খাবার অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে সারাদিন বাঁচিয়ে রখেছে। কিন্তু সাহানা এমন একটি বিমের কর্ণারে আটকে ছিলেন না সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তারপরও উদ্ধারকর্মীরা হাল ছাড়েননি। সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করে সারাদিন টানা চেষ্টা চালান তাকে উদ্ধার করার জন্য। শেষ মুহূর্তে তাকে বের করার সময় সাহানার অর্ধেক অংশ বের হয়ে আসলেও শরীরের বাকি অংশ আর বের করা না গেলে। উদ্ধারকর্মীরা চেষ্টা করেন একটি রড কেটে তাকে বের করতে। কিন্তু বিধিবাম- সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না’ এই কথাটি হয়তো আবারও প্রমাণ হলো। হয়তো সৃষ্টিকর্তা চাননি আর তাই সেই মুহূর্তে লেগে যায় আগুন। উদ্ধারকর্মীরা আহত হন। কোন মনে ভেতর থেকে বেঁচে ফেরেন তারা। ৪ জন উদ্ধারকর্মীকে সাভার সিএমএইচ-এ ভর্তি করা হয়। একজনের ৬০ শতাংশ ঝলসে গেছে সে আগুনে। এই অবস্থায় আগুন ও প্রচণ্ড ধোয়ার কারণে সাহানাকে আর উদ্ধার করা যায়নি। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও সাহানা যে আর বেঁচে নেই- এটা পুরোপুরি না হলেও ধারনা করা হচ্ছে।
সাহানার বাড়ি কুষ্টিয়াতে। তার ১০ বছর বয়সের একটি ছেলে আছে। তিনি বিধবা। সাহানার বেঁচে আসার এই চেষ্টায় যারা শরীক হয়েছিলেন সেই উদ্ধারকর্মীরা সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মৃত্যু মানুষের জন্য অবধারিত- এ সত্যটি সবাই শিকার করনে এবং সাভারের এই ঘটনা বহু মানুষ মারা গেছেন। কিন্তু সাহানার এই ঘটনা সবাইকে কাঁদিয়েছে। পুরো জাতি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সেই লোমহর্ষক কাহিনী অবলোকন করেছে। হয়তো সবাই চোখের পানিও ফেলেছেন। কতজন নফল নামাজ পড়েছেন। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কি ইচ্ছা তাতো কেও জানেন না। তিনি যা চান তাই হয়- কারণ তিনিই সর্বশক্তিমান। হয়তো সাহানাকে আর জীবিত উদ্ধার করা যাবে না কিন্তু সাহানার বেঁচে ফেরার আর্তনাদ এই দুনিয়াতে বেঁচে থাকা মানুষদের সারাজীবন মনে করাবে।