দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইন্টারনেট আসক্তি দূর করতে গিয়ে মৃত্যু ঘটেছে এক চীনা তরুণের! ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্ত করার জন্য ওই তরুণকে নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা দিতে গিয়ে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট আসক্তি নিয়ে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। এই আসক্তি থেকে মুক্তির পথ নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনাও। ইন্টারনেট এবং ভিডিও গেমে অনেকেই আসক্ত হয়ে পড়ছে। সেই ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য চীনে বেশ কিছু নিরাময় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। যেখানে এইসব আসক্তগ্রস্থ তরুণ-তরুণীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়ে থাকে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, নিরাময় শিবিরগুলো চলে অনেকটা সামরিক-ধাঁচের। ওই নিরাময় কেন্দ্রে ইন্টারনেটে আসক্ত ১৮ বছর বয়সী এক চীনা তরুণকে নেওয়া হয়। চিকিৎসা দেওয়ার সময় তিনি সেখানে মারা যান। এরপর এই ধরনের বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নতুন করে সমালোচনা শুরু হয়েছে চীনে।
চীনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে যে, ওই তরুণের দেহে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। চীনের পূর্বাঞ্চলীয় আনহুই প্রদেশের ওই নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক ও কর্মচারীদের পুলিশ আটক করেছে।
ওই তরুণের মা লিউ জানিয়েছেন, তার ছেলে ইন্টারনেটের প্রতি খুবই আসক্ত হয়ে পড়ে। তিনি বা তার স্বামী ছেলেকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেও কোনো কাজ হয়নি। তখন তারা ছেলেকে এই মাসের ৩ তারিখে ফুইয়াং শহরের ইন্টারনেট আসক্তি চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যান। এর দুদিন পরে তারা ফোন পান যে, তাদের সন্তানকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানেই তাদের সন্তানের মৃত্যু ঘটেছে।
ওই প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিলো, মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরিক চিকিৎসার মাধ্যমে তারা শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট আসক্তি দূর করার চিকিৎসা করে থাকেন।
অবশ্য ওই তরুণের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। তবে চিকিৎসকরা মা-বাবাকে জানান যে, ওই তরুণের দেহে ২০টিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন তারা পেয়েছেন।
ওই তরুণের মা লিউকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় গণমাধ্যম আনহুই সাংবাও-এর এক খবরে বলা হয়, ‘আমার ছেলের শরীরের মাথা হতে পা পর্যন্ত ক্ষতচিহ্ন দেখেছি…যখন আমি ছেলেকে ওই নিরাময় কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলাম তখনও সে ভালো ছিল।’ তার প্রশ্ন হলো ‘সে কীভাবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা যেতে পারে?’
উল্লেখ্য, চীনে এই ধরনের অনেকগুলো ইন্টারনেট আসক্তি নিরাময় কেন্দ্র সম্প্রতি গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটি স্থানীয় হাসপাতালের সঙ্গেও যুক্ত। এগুলো চীনে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই সন্তানদের ইন্টারনেট আসক্তি কমাতে এসব নিরাময় কেন্দ্রে পাঠিয়ে থাকেন। তবে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘রোগীদের’ মারধর, বৈদ্যুতিক শকসহ নানা ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
নানা অভিযোগের কারণে চীন সরকার সম্প্রতি এমন নিরাময় কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। এই বছরের প্রথম দিকে এ সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া করেছে চীন সরকার। খসড়া আইনে কীভাবে, কোনো পদ্ধতিতে ইন্টারনেট আসক্তি হতে মুক্তির জন্য চিকিৎসা করা যাবে তার বিস্তারিত বলা রয়েছে।