দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীই ৯৮ শতাংশই নাকি নিষ্ক্রিয়! এমন খবর সত্যিই বিস্ময়কর। কারণ বর্তমান সময় যেভাবে ফেসবুক ব্যবহার বেড়েছে, তাতে এই খবরটি পড়ে যে কারও সন্দেহ হতে পারে।
তবে এক তথ্যে বলা হয়েছে, আমাদের দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৯০ লাখ। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশই নাকি নিষ্ক্রিয়। মাত্র ২ শতাংশ সক্রিয় রয়েছে ফেসবুকে। স্ট্যাটাস দেওয়া, নিউজ শেয়ার, লাইক, মন্তব্য এবং বিতর্ক করাসহ বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে তারাই জমিয়ে রেখেছেন সামাজিক যোগাযোগের এই ভার্চুয়াল স্পেসটিতে! তবে সক্রিয়দের বেশিরভাগের আগ্রহ বিভিন্ন অনলাইন এবং দৈনিকের খবরের প্রতি। দেশের মোট ব্যবহার হওয়া (৪৩৬ গিগা) ব্যান্ডউইথের প্রায় ৮৮ গিগা ব্যবহার হয়ে থাকে ফেসুবকের পেছনে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি), ইন্টারনেট সেবাদাতা সংগঠন সূত্রে এই চিত্র উঠে এসেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীই ইন্টারনেট সেবার সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা হলো ৭ কোটি ৩৩ লাখেরও বেশি। এরমধ্যে বেশিরভাগই শুধু ফেসবুক ব্যবহারের জন্যই ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকেন বলে ওই তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
সামাজিক গণমাধ্যম বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উই আর সোশ্যাল’ ও ‘হুট সুইট’-এর এক জরিপেও দেখা যায় যে, ফেসবুক ব্যবহারের দিক হতে বিশ্বের শীর্ষ শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান নাকি দ্বিতীয়। ঢাকাতে ২ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ সক্রিয়ভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছেন।
গত এপ্রিলে প্রকাশিত এই সংখ্যা বর্তমানে ২ কোটি ৯০ লাখের মতো হতে পারে। অপরদিকে ইন্টারনেট ওয়ার্ল্ডস স্ট্যাটস জানাচ্ছে যে, ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ১০ লাখ। সে সময় বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৭২ লাখ ৪৫ হাজার। বিটিআরসির তথ্যমতে, বাংলাদেশের বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭ কোটি ৩৩ লাখ।
তবে বাংলাদেশের মানুষ ফেসবুকে আসলে কী কী করে, সে বিষয়ে কোনও রকম গবেষণা হয়েছে কিনা, বা এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কোনও তথ্যই পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান সহযোগি সংবাদ মাধ্যমকে ব্যক্তিগত ধারণায় বলেছেন, দেশের মোট ফেসবুক ব্যবহারকারীর মাত্র ২ শতাংশই সক্রিয়। মুক্ত সফটওয়্যার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজের কারণে তিনি বিষয়টি খুব নিবিড়ভাবেই দেখছেন।
তিনি জানান যে, ‘ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ সক্রিয়ভাবে ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন। এদের সংখ্যা সব মিলিয়ে সাড়ে ৫ লাখের মতো হতে পারে। এরা ফেসবুকে মন্তব্য করেন, কোনও বিষয় নিয়ে বিতর্ক করে থাকেন, আবার শেয়ার করেন। এদেরমধ্যে রয়েছেন সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, মার্কেটিয়াররাও।
সংবাদ মাধ্যমকে মুনির হাসান আরও বলেছেন, ২৫ শতাংশ ব্যবহারকারীই ফেসবুকে মোটামুটি সক্রিয়। তারা সপ্তাহে গড়ে একবার করে হলেও ফেসবুকে ঢোকেন। বিশেষ কোনও উৎসব কিংবা জন্মদিনে তারা সক্রিয় হয়ে থাকেন। জন্মদিনকে ঘিরে কিছু লাইক, কমেন্ট পেয়েই তারা খুশি থাকেন। অপরদিকে ৩০ শতাংশ ব্যবহারকারী ফেসবুকে একেবারেই কিছুই করেন না। তাদের মধ্যে অনেকেই ফেসবুকে আইডি খুলতে হয় সম্মান রক্ষার জন্য, তাই খুলেছেন। তাদের অনেকেই ভুলে যান যে তার একটি ফেসবুক আইডি রয়েছে, আবার অনেকেই ফেসবুকের পাসওয়ার্ড পর্যন্ত ভুলে গিয়ে আর খুলতেই পারে না!
অপরদিকে ৪০ হতে ৪৩ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহারকারী একেবারেই থাকেন নীরব। তাদের সম্পর্কে বিডিওএসএন-এর সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তারা ফেসবুকে ঢোকেন তবে কিছুই করেন না, দেখেই ক্ষান্ত থাকেন। কোনও কিছুতে লাইক বা কমেন্ট করেন না। মাঝে মধ্যে কোনও লিংক হয়তো ওপেন করে দেখেন, এই যা। তারা লগইন করেন, যে কারণে তার ছাপ দেখা যায়।’ তিনি আরও জানান, ‘যে কারণে বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ট্রেন্ডটা ঠিক বোঝা মুশকিল।’