স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আবার বাংলাদেশ দেখালো তারা জিততে জানে। টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি ম্লান হয়ে গেছে। তার সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছে পাঁচ উইকেটে। টেন্ডুলকারের ১১৪ রান আর ভারতের পাঁচ উইকেটে করা ২৮৯ রান বাংলাদেশ পাড়ি দিয়েছে ৪৯.২ ওভারে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে ২৯৩ রান করে। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে বলা যায় টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির জন্যই। টেন্ডুলকার ১৩৭ বলে ১১৪ রান করেন। সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করতে গিয়ে টেন্ডুলকার ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটে রান সংগ্রহে গতি মন্থর করে দিলে বাংলাদেশের জন্য ম্যাচ জয় সম্ভব হয়। এ রকম উইকেটে ৩০০ রানই নিরাপদ নয়। সেখানে ভারতের ২৮৯ রান বাংলাদেশ নির্বিঘ্নে পাড়ি দিয়ে তা-ই প্রমাণ করেছে। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি তৃতীয় জয় হলেও এশিয়া কাপে প্রথম জয়। বাংলাদেশের আগের দুটি জয় ছিল ২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ১৫ রানে এবং ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পোর্ট অব স্পেনে পাঁচ উইকেটে। সব মিলিয়ে ২৬০তম ম্যাচে বাংলাদেশের এটি ছিল ৭১তম জয়। এ জয়ের ফলে এশিয়া কাপ ক্রিকেটে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হল। ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে বাংলাদেশও শামিল হয়েছে। এক প্রকার বাদ পড়ে যাওয়া শ্রীলংকারও ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা আবার জেগে উঠেছে। তবে তার জন্য আগামীকাল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ফলাফলের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ভারত হেরে গেলে আর বাংলাদেশ শ্রীলংকার বিপক্ষে জয়ী হলে বাংলাদেশ ফাইনালে খেলবে। শ্রীলংকা জিতলে তখন পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ নির্ধারণ করার জন্য বাকি তিনটি দলকে নিয়েই বাইলজ সামনে নিয়ে বসতে হবে।
বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের অনুপ্রেরণা ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচের ভালো খেলা। ফ্লাট উইকেটে ২৮৯ রানের টার্গেট। সর্বোপরি ভারতের বোলিং আক্রমণ। এসব মিলিয়ে এ রান অতিক্রম করার চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ নিতেই পারে। চ্যালেঞ্জ তারা ঠিকই নিয়েছে। জয় পেয়েছে পাঁচ উইকেটে। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে ম্যাচ জিতেছে। তার চেয়ে আরও সহজ অবস্থা থেকেও বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জিততে পারেনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে একপর্যায়ে বাংলাদেশের পাঁচ উইকেটে ৪০ বলে ৩৯ রানের প্রয়োজন ছিল। সে অবস্থায় ম্যাচ হেরেছিল ২১ রানে। এবার ভারতের বিপক্ষে শেষ পাঁচ ওভারে ছয় উইকেট হাতে নিয়ে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৪৬ রানের। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের কথা ভাবলে শংকিত হওয়ারই কথা। তার আগে আবার তৃতীয় আম্পায়ার রুচিরা পালিয়াগুরু সাকিবকে বিতর্কিত আউট দিলে জয় নিয়ে সন্দেহের ধানা আরও বেশি করে জেগে ওঠে।। অশ্বীনের বলে ধোনি স্ট্যাম্পিংয়ের আবেদন জানালে টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার আউট না হওয়ার পরও রুচিরা পালিয়াগুরু সাকিবকে আউট দিলে পুরো স্টেডিয়াম নিঃস্তব্ধ হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে রুচিরা পালিয়াগুরুকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য লেখা শুরু হয়। কিন্তু কোন কিছুই বাংলাদেশ দলের জয়কে রুখতে পারেনি। সাকিব আউট হওয়ার সময় বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ছয় উইকেটে ৪৯ বলে ৬৬ রানের। ঘুরেফিরে সেই পাকিস্তানের ম্যাচর স্মৃতিই সামনে চলে আসে। বুক কেঁপে ওঠে। তরুণ নাসিরের সঙ্গে অধিনায়ক মুশফিকুর যোগ দেয়ার পর সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে থাকে দ্রুত। ভয়ংকর বাঘের মতো গর্জে ওঠেন মুশফিকুর। ইরফান পাঠানের এক ওভারে ১৭ ও প্রাভিন কুমারের এক ওভারে ১৪ রান নিলে জয় বাংলাদেশের হাতের নাগালে চলে আসে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে মাত্র ২ রানের। স্টেডিয়ামের মাইকে তখন বাজতে শুরু করে স্বাধীনতার গান। সে গান বাজতে বাজতেই সহ-অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে বাউন্ডারির মাধ্যমে জয়সূচক রান আসার সঙ্গে সঙ্গে মিরপুর স্টেডিয়াম নেচে ওঠে। মুশফিকুর মাত্র ২৫ বলে তিনটি করে চার ও ছয় মেরে ৪৬ রানে অপরাজিত থাকেন। তার আগে বাংলাদেশকে এভাবে লড়াইয়ে নিয়ে আসেন তামিম ইকবাল (৭০) পরপর দ্বিতীয় এবং ক্যারিয়ারের এগারতম অর্ধশত রান করে, জহিরুল ইসলাম অমির প্রথম অর্ধশত রান (৫৩)। ১৫ রানে নাজিমউদ্দিন আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তামিম ও জহিরুল ১১৩ রান যোগ করে দলকে লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনেন। ২৮ রানের ব্যবধানে দুজনই বিদায় নেয়ার পর চতুর্থ উইকেট জুটিতে নাসির (৫৪, একদিনের ম্যাচে তৃতীয় অর্ধশত রান।) ও সাকিবের (৩১ বলে ৪৯ রান) ব্যাটে বাংলাদেশ জয়ের কাব্য রচনার পথ তৈরি হয়। জুটিতে ৬৮ রান আসার পর রুচিরা পালিয়াগুরুর সেই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জয়ের পথে ব্যারিকেড তৈরি করে। পরে নাসির ও মুশফিকুরের ব্যাটে এক একটি রান সব বাধা পেরিয়ে জয়ের বন্দরে তরী ভিড়ায় টাইগাররা।
রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতার অভিনন্দন
এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করায় বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী খেলোয়াড়দের পাশাপাশি বাংলাদেশ দলের কোচ, ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাসহ সব ক্রিকেটপ্রেমীকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ভারত
রান বল ৪ ৬
গম্ভীর ব শফিউল ১১ ১৬ ১ ০
শচীন ক মুশফিক ব মাশরাফি ১১৪ ১৪৭ ১২ ১
কোহলি ব রাজ্জাক ৬৬ ৮২ ৫ ০
রায়না ক তামিম ব মাশরাফি ৫১ ৩৮ ৫ ২
ধোনি নটআউট ২১ ১১ ২ ০
রোহিত শর্মা রানআউট ৪ ৬ ০ ০
রবীন্দ্র জাদেজা নটআউট ৪ ২ ০ ০
অতিরিক্ত ১৮
মোট (৫ উইকেটে, ৫০ ওভারে) ২৮৯
উইকেট পতন : ১/২৫, ২/১৭৩, ৩/২৫৯, ৪/২৫৯, ৫/২৬৭।
বোলিং : মাশরাফি ১০-১-৪৪-২, শফিউল ৫-০-২৪-১, শাহাদাত ১০-০-৮১-০, সাকিব ১০-০-৬৩-০, রাজ্জাক ১০-০-৪১-১, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-২৪-০, নাসির ১-০-৬-০।
বাংলাদেশ
রান বল ৪ ৬
তামিম ক জাদেজা ব কুমার ৭০ ৯৯ ৬ ০
নাজিম ক শর্মা ব কুমার ৫ ১৫ ০ ০
জহুরুল ক শর্মা ব জাদেজা ৫৩ ৬৮ ৪ ১
নাসির ক রায়না ব কুমার ৫৪ ৫৮ ৫ ০
সাকিব স্টা. ধোনি ব অশ্বিন ৪৯ ৩১ ৫ ২
মুশফিকুর নটআউট ৪৬ ২৫ ৩ ৩
মাহমুদউল্লাহ নটআউট ৪ ২ ১ ০
অতিরিক্ত ১২
মোট (৫ উইকেটে, ৪৯.২ ওভারে) ২৯৩
উইকেট পতন : ১/১৫, ২/১২৮, ৩/১৫৬, ৪/২২৪, ৫/২৮৮।
বোলিং : প্রাভিন কুমার ১০-০-৫৬-৩, ইরফান পাঠান ৯-০-৬১-০, দিন্দা ৫.২-১-৩৮-০, রায়না ৭-১-৩০-০, রোহিত শর্মা ২-০-১৩-০, অশ্বিন ১০-০-৫৬-১, জাদেজা ৬-০-৩১-১।
ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)