দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক॥ বর্তমানে তরুণ বয়সের ভোক্তাদের মধ্যে কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংক বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখন খুব সহজেই মেলে এনার্জি ড্রিংক। এনার্জি ড্রিংক তথা চিনি এবং ক্যাফিন সমৃদ্ধ কথিত শক্তি বর্ধক পানীয় পান আপনার শরীরের জন্য আসলেই কি ভালো? জানতে বিস্তারিত পড়ুন….
বর্তমানে বিশ্বের ইউরোপ ও এশিয়াতে ৮০টির উপরে ব্র্যান্ডের এনার্জি ড্রিংক তৈরি হচ্ছে এবং বিশ্বের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী তরুণের ৩১ শতাংশ নিয়মিত এনার্জি ড্রিংক গ্রহণ করে বলে জানা যায়। এ ছাড়াও নানান বয়সের মানুশের মাঝে এনার্জি ড্রিংকের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এনার্জি ড্রিংকে রয়েছে চিনি ও ক্যাফিনের প্রভাবঃ এনার্জি ড্রিংকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যাফিন ও চিনি। এনার্জি ড্রিংক পানের ফলে এতে থাকা ক্যাফিন ও চিনি আপনাকে তাৎক্ষনিকভাবে অনেকটা সজীব ও উদ্যমী করে তুলবে। কিন্তু ডাক্তার মুরসালিন শেখ সাবধান করে দিয়ে বলেন প্রচুর পরিমানে ক্যাফিন ও চিনি শরীরে যাওয়ার ফলে মানুষের শরীরে নানান সমস্যা তৈরি হতে পারে যেমন স্নায়বিক দুর্বলতা , ঘুমের সমস্যা, রক্ত চাপ বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি।
ক্রীড়া পুষ্টিবিজ্ঞানী দীপশিখা আগারওয়াল বলেন, এনার্জি ড্রিংক পানের ফলে একজন মানুষের সাময়িক ভাবে শক্তি বৃদ্ধি পায় তবে যখন তাঁর উপর এনার্জি ড্রিংকের প্রভাব কেটে যাবে তখন তিনি স্বাভাবিকের চাইতেও দুর্বল অনুভব করবেন। দীপশিখা আরও বলেন এনার্জি ড্রিংকে যে কুইনিন ব্যাবহার করা হয় তা মানুষের হাড়ের অনেক ক্ষতি করে। এ ছাড়া এনার্জি ড্রিংকে থাকা প্রচুর চিনি আপনাকে অনেক মুটিয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
ডাক্তার আতাহার ওয়ানি যিনি একজন দাঁত বিশেষজ্ঞ তিনি বলেন, ”আপনাকে এনার্জি ড্রিংক অবশ্যই কম পান করতে হবে, যদিও পান করেন তাহলে অবশ্যই আপনার মুখ ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিবেন কারণ এর ফলে আপনার দাতে কেভেটি অর্থাৎ ক্ষত বা গর্ত তৈরি হতে পারে” এনার্জি ড্রিংকের ফলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে গিয়ে দাঁতে রঙ নষ্ট হয়ে যায়। সফট ড্রিংকসের ঝাঁঝালো স্বাদ বাড়ানোর জন্যে এতে ফসফরিক এসিড ব্যবহার করা হয়। এ এসিড এত শক্তিশালী যে, একটা নখ এর মধ্যে ডুবিয়ে রাখলে ৪ দিন পর আর আপনি নখটাকে খুঁজে পাবেন না। তাছাড়া সফট ড্রিংকসে যে চিনি ব্যবহার করা হয়, ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে এটাও এসিড তৈরি করে।
নেশাগ্রস্থত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাঃ এনার্জি ড্রিংকে যে ক্যাফিন দেয়া হয় তা নেশার উদ্রেগ ঘটাতে পারে। আপনি যদি নিয়মিত এনার্জি ড্রিংক পান করেন তাহলে কিছু সময় যদি এটি নিয়ম করে না খান তবে আপনার নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন আপনার ঘুম না হওয়া, হাতে পায়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, শারীরিক ও মানসিক অশান্তি এবং অস্থিরতা। এ বিষয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বান্দারকর বলেন, এনার্জি ড্রিংক শিশুদেরও নেশাগ্রস্থ করে তোলে ফলে শিশুরা এতে আসক্ত হয়ে যেতে পারে যা শিশুদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পিতা মাতা কে অবশ্যই তাঁর শিশুদের সব রকমের এনার্জি ড্রিংক ও স্পোর্টস ড্রিংক থেকে দূরে রাখতে হবে।
ভিটামিন এবং এমাইনো এসিডের উৎসঃ অনেক এনার্জি ড্রিংক কোম্পানি দাবি করে এনার্জি ড্রিংকে প্রচুর ভিটামিন এবং এমাইনো এসিড রয়েছে, সে হিসেবে বডি বিল্ডারদের মাঝে এনার্জি ড্রিংকের কদর অনেক বেশী। ডাক্তার মুরসালিন শেখ বলেন এনার্জি ড্রিংকে যদি ভিটামিন ও এমাইনো এসিড থাকেও তারপরও এর অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে এর বদলে প্রাকৃতিক উপায়েও এসব ভিটামিন অনেক সহযেই পাওয়া যাবে। ক্রীড়া পুষ্টিবিজ্ঞানী দীপশিখা আগারওয়াল বলেন ফলের রস যেমন কমলার রস পান করলে খুব সহজেই শরীরে এমাইনো এসিডের অভাব পুরন করা যায়।
ক্রীড়া পুষ্টিবিজ্ঞানী দীপশিখা আগারওয়াল আরও বলেন এনার্জি ড্রিংক ও স্পোর্টস ড্রিংক নিয়ে বিড়ম্বনায় না পড়ে আপনি যখন কাজ করে অথবা খলাধুলা করে দুর্বল অনুভব করবেন তখন বেশী করে পানি পান করুন কারণ এ সময় আপনি এনার্জি ড্রিংক পান করলে এতে থাকা ক্যাফিন আপনাকে আরও বেশী ডিহাইড্রেট করে তুলবে।
কখনই এনার্জি ড্রিংকের সাথে এলকোহল মিশিয়ে পান করবেন না। কারণ এলকোহলের সাথে এনার্জি ড্রিংকের মিশ্রণের ফলে এটি আপনার শরীরের জন্য আরও বিপদ জনক হয়ে যায়। এনার্জি ড্রিংক ও এলকোহল এক সাথে মিশিয়ে পান করলে আপনার শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হবে যার ফলে আপনার শরীরে নানা রুপ জটিলতা দেখা দিতে পারে। ক্যাফিন ও এলকোহল এক সাথে মিশিয়ে পান করার ফলে আপনার বেশী বেশী মূত্রত্যাগের বেগ আসবে ফলে আপনার শরীর পানিশূন্য হয়ে যাবে।
আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসের ৫০ বছর বয়স্ক একদল নারী-পুরুষ যারা প্রতিদিন ১ ক্যান বা এর বেশি করে সফট ড্রিংকস পান করেছেন, তাদের ওপর ৪ বছর ধরে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের মেটাবলিক সিনড্রোম বেড়ে গেছে ৪৪%। মেটাবলিক সিনড্রোম বাড়লে ডায়াবেটিস, হৃদরোগের ঝুঁকি যেমন বাড়ে তেমনি অকালে বুড়িয়ে যায় দেহ।
এর আগে কোমল পানীয় পেপসি’তে ক্যান্সারের জন্য দায়ী যৌগ পাওয়া গেল শিরনামে দি ঢাকা টাইমস্ এ আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। প্রতিবেদনটি পড়লে আপনি কোমল পানীয় পানের ঝুঁকি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন।
সূত্রঃ ইন্ডিয়া টাইমস।