দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঝড়-বৃষ্টির দিন এলে প্রায় শোনা যায় নৌযান দুর্ঘটনার কথা। মাদারীপুরের মেয়ে আমিরা খানম আয়শা নৌযানে দুর্ঘটনা এড়াতে ওভারলোডিং ইন্ডিকেটর উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
মাদারীপুরের মেয়ে আমিরা খানম আয়শা এই উদ্ভাবনটি চলতি বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে। সেইসঙ্গে উজ্জ্বল করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামও।
আয়শা শরীয়তপুর জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ৩য় বর্ষে শিক্ষারত।
আয়শা মাদারীপুর পৌরসভার ১ নম্বর শকুনি মহল্লার হামিদ শিকদার সড়কের আহসান হাবিব এবং মিনারা খানমের বড় মেয়ে। আয়শা ২০০৯ সালে মাদারীপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ হতে এসএসসি (ইলেকট্রনিক্স) পাস করে। ২০১৪ সালে শরিয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে ডিপ্লোমা শেষ করে আয়শা ২০১৬ সালে জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ) বিভাগে ভর্তি হয়।
১২-১৩ মে শরীয়তপুর জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় আমিরা খানম আয়শা তার সহপাঠী আমির হামজাকে সঙ্গে নিয়ে নৌযানে ওভারলোডিং ইন্ডিকেটর উদ্ভাবন করে সেটি মেলায় প্রদর্শন করে। মেলায় প্রদর্শিত এটি অন্যান্য উদ্ভাবনকে ছাপিয়ে প্রথম স্থানও অধিকার করে। আয়শার এই উদ্ভাবনে অনুপ্রেরণা, মেধা ও শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সোহেল রানা ও প্রভাষক মো. জহিরুল ইসলাম।
আয়শার উদ্ধাবিত নৌযানে দুর্ঘটনা এড়াতে ওভারলোডিং ইন্ডিকেটরের কাজ হলো- এটি কোনো লঞ্চ বা স্টিমারে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করলে লাইট এবং শব্দ সংকেত (এলার্ম) এর মাধ্যমে যাত্রীদের জানাবে যে, এই নৌযানটি অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে। সেইসঙ্গে নির্দিষ্ট একটি মোবাইল নাম্বারে কলও চলে যাবে। যতোক্ষণ পর্যন্ত যাত্রী বা অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে নির্দিষ্ট ওজনে না নিয়ে আসা হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত ইন্ডিকেটর সার্কিট হতে এই সংকেত দিতেই থাকবে। ঠিক একই সময় নৌযানে স্থাপিত ইন্ডিকেটর হতে কন্ট্রোল রুমে সেট করা নাম্বারে কলও চলে যাবে।
এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত হতে এই কলের মাধ্যমে লঞ্চ বা নৌযানের ওভারলোডিং-এর বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে জানা যাবে। এতে ব্যবহৃত মোবাইল সিস্টেমটি এই কলটির কাজ করতেই থাকবে। এই সিস্টেম ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট ওজনের পর লঞ্চটি অতিরিক্ত ওজন/যাত্রী বহন করলেই এই সার্কিটটি এলার্ম ও লাইট জ্বালিয়ে অনবরতো ইন্ডিকেট করতে থাকবে। এর পরেও যদি অতিরিক্ত যাত্রী বহন বা ওজনের কারণে লঞ্চ কিংবা নৌযানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ডুবে যায়; তখনও ওই সার্কিট হতে কল যেতেই থাকবে। যতোক্ষণ পর্যন্ত নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে সার্কিটও ততোক্ষণ পর্যন্ত সংকেত পাঠাতেই থাকবে। শুধু তাই নয়, নাম্বার লোকেট করে ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে ডুবে যাওয়ার আগের লোকেশনও জানা যাবে। যে কারণে উদ্ধার কাজ ত্বরান্বিত হবে ও যাত্রীদের মৃত্যুঝুঁকিও কম আসবে। যে কারণে পিনাক-৬ এর মতো হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমবে।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, এই সার্কিটে কিছু ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেট ব্যবহার করা হয়েছে। যার সঙ্গে মোবাইল সিস্টেম ব্যবহার করার কারণে এটি অনেকটা সহজলভ্যও। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। দেশের নৌযাত্রা নিরাপদ রাখার বিষয়টি মাথায় রেখেই এই ইন্ডিকেটর তৈরি করা হয়েছে বলে আয়শা দাবি করেছে।
সহযোগী একটি সংবাদ মাধ্যমকে আয়শা বলেছেন, তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, ইচ্ছাশক্তি, কল্পনা এবং মেধার বিকাশ ঘটিয়ে তা বাস্তবায়নে এই সার্কিটে সংযুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আগামীতে আরও আপডেট করে নতুন কিছু সংযুক্ত করার ইচ্ছাও রয়েছে তার। যাতে করে নৌপথে দুর্ঘটনা পুরোপুরি এড়াতে না পারলেও অনেকটা কমে আসবে ও জীবনের ঝুঁকিও বহুলাংশে হ্রাস পাবে। উদ্ভাবিত ইন্ডিকেটর সার্কিটটি নৌযানের দুর্ঘটনা রোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে বলেও তার বিশ্বাস।
ভবিষ্যতে নৌযানে অতিরিক্ত ওভারলোড হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে এমন ধরনের নতুন কিছু উদ্ভাবনের চিন্তাও করছে আমিরা খানম আয়শা। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে লঞ্চ বা কোনো নৌযান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ডুবে যায়; তাহলে জরুরিভিত্তিতে ওই নৌযানের দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে। এই ধরনের নতুন কিছু উদ্ভাবনের চিন্তা মাথায় রেখে গবেষণার কাজে এগিয়ে চলেছেন এই তরুণ উদ্ভাবক।