দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সিনেমায় অতিকায় দানবদের দিয়ে সম্ভব হলেও হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে ৬’শ মিটার লম্বা সেতু আস্ত সরিয়ে ফেলছে মানুষ এটা বিশ্বাস করাটা অনেকের জন্যেই কষ্টকর হতে পারে। আমেরিকার শেলউড ব্রিজ নামের ১৯৭১ ফিট বা ৬’শ মিটার লম্বা এবং ৭৫ ফিট বা ২৩ মিটার চওড়া ব্রিজটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে কোনোরকমের মহাজাগতিক দানবের সাহায্য ছাড়াই। এটা স্থাপত্য শিল্পের নজিরবিহীন কারিগরিই বটে!
১৯২৫ সালে আমেরিকার ওরেগন রাজ্যের পোর্টল্যান্ডের দুটি অংশের মধ্যে যোগাযোগ সুবিধাজনক করতে উইল্যামেট নদীর ওপর দিয়ে তৈরি করা হয় শেলউড ব্রিজটি। নদীর কারণে আলাদা হয়ে যাওয়া শেলউড এবং ওয়েস্টমোরল্যান্ড অঞ্চল দুটিকে যুক্ত করে এই ব্রিজ। তৈরির পর থেকেই ওরেগণ রাজ্যের সবচেয়ে ব্যবহৃত সেতুগুলোর একটি হয়ে ওঠে দু-লেন বিশিষ্ট এই সেতুটি। কিন্তু সবকিছুর মতো সেতুরও তো একটা ক্ষয় আছে। ১৯৬০ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে সেতুটির অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাও কাজ চালিয়ে নেয়া যাচ্ছিলো। কিন্তু কতদিন আর জোড়াতালি দিয়ে চালানো যায়! ১৯৮০ সালের দিকে এর মাঝামাঝি সময়ে ফাটল দেখা দেয়। ধীরে ধীরে কমতে থাকে বহন ক্ষমতা, আশির দশকে ৩২ টন বা তার বেশি ওজনকে ব্রিজের অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়, যা ২০০৪ সালে মাত্র ১০ টনে এসে দাঁড়ায়।
শেলউড ব্রিজের খারাপ দশা দেখে ২০১২ সাল নাগাদ এর সংস্কার কাজ শুরু করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় সেতুটির দায়িত্বে থাকা ওরেগণ রাজ্যের মাল্টোনোমাহ কাউন্টি। কিন্তু ২০১১ সালের অক্টোবরেই পরিবহন বিভাগের এক জরিপ বলে, এই মুহুর্ত থেকেই শেলউডের মেরামত কাজ শুরু না করলে আর চলছে না, যে কোনো মুহুর্তে একটা দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।
এরপরই শুরু হয় প্রায় আশি বছর বয়েসী শেলউড ব্রিজকে মেরামতের জন্যে একে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া। ২০১২ সালের জানুয়ারীর ১৯ তারিখ। প্রকৌশলীরা সেতুটির দুই পারের সংযোগস্থল খুলে নিয়ে একে অন্যত্র স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেন। প্রথমে সেতুটিকে ঠেলে মেরামতের জন্যে নির্ধারিত স্থানে নিতে একটি পথ তৈরি করা হয়। সেতুর মতো একটি অতিকায় স্থাপত্যের চলাচল যাতে সহজ হয় তাই সে পথটি পিচ্ছিল করা হয় টেফলন প্যাড আর বিপুল পরিমাণ তরল সাবান ব্যবহার করে। ১৫০ টন ওজন উত্তোলনে সক্ষম এমন ৪০ টি হাইড্রোলিক জ্যাক ব্যবহার করা হয়। হাইড্রোলিক জ্যাকগুলো ব্রিজটিকে তুলে ধরে একটি ঢালু স্টিলের কাঠামোর উপর বসিয়ে দেয়। স্কি করার জন্যে যেরকম ঢালু কাঠামো তৈরি করা হয়, স্টিলের কাঠামোটির আকার ছিলো অনেকটা তেমন। আর কাঠামোটি যেখানে শেষ হয়েছিলো, শেলউডের জন্য তৈরি পিচ্ছিল পথও সেখান থেকে শুরু। ফলে ধীরে ধীরে ঢালু কাঠামো বেয়ে ব্রীজটি নিচে নামতে শুরু করে এবং কাঠামোটি থেকে নামতে যে গতিশক্তি বা গতি জড়তা তার মধ্যে সঞ্চারিত হয়, তাই তাকে ওই নির্ধারিত পিচ্ছিল পথের ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে যায়। তবে কেবল গতি জড়তাই নয়, চলাচলের প্রতিটি মুহুর্তে আরও অতিরিক্ত কিছু হাইড্রোলিক জ্যাক ব্রিজটিকে পেছন থেকে ঠেলে যাচ্ছিলো। মজার ব্যাপার হলো পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় মাত্র ১৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে।
এখন পর্যন্ত শেলউডের মেরামত কাজ চলছে। ২০১৫ সাল নাগাদ নতুন রূপে একে পুনঃস্থাপন করা হবে বলে প্রকৌশলীরা আশা প্রকাশ করেছেন।
তথ্যসূত্র: দি টেক জার্নাল