দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা বিভিন্ন সমস্যা বা দারিদ্রতাকে দোষ দিয়ে নিজের ব্যর্থতাকে প্রকাশ করেন। তাদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য আজ একটি গল্প লিখেছি। অবশ্য এটি একটি ইংরেজি ছোট গল্পের বাংলা অনুবাদ। তবে এই গল্পের মধ্যে আমাদের অনেক শিক্ষা লুকিয়ে আছে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
উইলমা রুদলফ, আমেরিকার তেনেসিস প্রদেশের গরীব ঘরে জন্ম নেওয়া এক প্যারালাইটিক নারী। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি স্কারলেট ফিভারসহ ডাবল নিউমেনিয়ায় আক্রান্ত হন। দরিদ্র পিতা-মাতা তাকে অর্থের অভাবে ঠিক মত চিকিৎসা করাতে পারেননি। যার ফলে পরবর্তীতে তাকে পোলিওতে আক্রান্ত করে প্যারালাইজড করে দেয়। প্যারালাইজড সমস্যার কারণে ডাক্তারের পরামর্শে উইলমাকে সর্বদা পায়ে ব্রেস পড়তে হতো। কারণ ডাক্তার বলেছিলেন,
“উইলমা কখনই তার পায়ের পাতা মাটিতে রাখতে সক্ষম হবে না।”
কিন্তু উইলমার মা ডাক্তারের এ কথায় সহজে দমে গেলেন না। তিনি কখনই উইলমাকে তার সমস্যার জন্য নিরুৎসাহিত করতেন না। তাই তিনি ডাক্তারের কথাকে অগ্রাহ্য করে উইলমাকে উৎসাহিত করার জন্য বলেছিলেন,
“মা, স্রষ্টা তোমাকে যতটুকু সামর্থ দিয়েছে সেটাকে কাজে লাগাও। অধ্যাবসায় আর নিজের প্রতি বিশ্বাস নিয়ে তুমি সামনে এগিয়ে যাও। অবশ্যই তুমি যা চাও তা করে দেখাতে পারবে।”
মায়ের এই অনুপ্রেরণামুলক কথা শুনে উইলমার মনে আশার সঞ্চার ঘটে। তখনই সে তার মাকে বলে উঠলো,
“মা আমি দৌড় প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর দ্রুততম মানবী হতে চাই।”
মায়ের অনুপ্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে উইলমা তার স্বপ্ন পূরনের প্রথম পদক্ষেপ নেন। মাত্র ৯ বছর বয়সেই ডাক্তারের সকল উপদেশ উপেক্ষা করে পা থেকে ব্রেসটা সরিয়ে ফেলেন। তারপর দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসেবে তের বছর বয়সে প্রথম দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় তিনি সবার শেষে গন্তব্যে পৌছান। ব্যর্থতায় তিনি দমে যান নি। বরং এভাবে করে তিনি ২য়, ৩য়, চতুর্থ দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতে থাকেন যতক্ষন না তিনি দৌড় প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর দ্রুততম মানবী হতে পারছেন।
১৫ বছর বয়সে উইলমা তেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কোচ এড টেম্পলের সাথে দেখা করেন। কোচ টেম্পলকে উইলমা তার মনের ভিতরের লালিত স্বপ্নের কথা খুলে বলেন। উইলমার কথা শুনে কোচ টেম্পল সন্তুষ্ট হয়ে তখন অভয় দিয়ে উইলমাকে বলেছিলেন,
“উইলমা, শুধুমাত্র তোমার এই স্প্রিটটার জন্য তোমাকে কেউ থামাতে পারবে না। এবং তোমাকে সাহায্য করার জন্য আমি সর্বদা তোমার পাশে আছি”।
অবশেষে সেই কাঙ্খিত দিনটি আসলো যখন উইলমা দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য অলিম্পিকে অংশগ্রহন করার সুযোগ পেলেন। সেটি ছিল ১৯৬০ সালের অলিম্পিক। সেই প্রতিযোগিতায় উইলমার কম্পিটিটর হিসেবে ছিল জুটা হেইন নামের এমন একজন নারী যিনি কখনই কোন প্রতিযোগিতায় পরাজিত হন নি। উইলমাকে তার সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে জেনেও তিনি নিজের প্রতি আস্থা হারান নি। প্রতিযোগিতার প্রথম ইভেন্টটা ছিল ১০০ মিটার দৌড়। প্রথম বাজিমাত এখান থেকেই শুরু করলেন। বিস্ময়করভাবে প্রথম ইভেন্টেই উইলমা জুটা হেইনকে হারিয়ে দিয়ে পুরস্কার হিসেবে ১ম গোল্ড মেডেল অর্জন করেন।
এরপর আবারো জুটা হেইনকে হারিয়ে পরবর্তী ২০০ এবং ৩০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় আরো দুটো গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। তার এই অর্জন ইতিহাসে পরিনত হয়ে যায়। কারণ তিনি ছিলেন সেই প্যারালাইটিক নারী, যিনি ১৯৬০ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া অলিম্পিকে পৃথিবীর দ্রুততম নারী হিসেবে খেতাব অর্জন করেন।
এই গল্পের শিক্ষা হিসেবে আমরা বলতে পারি, ইচ্ছা শক্তির উপর বিশ্বাস রাখুন তাহলে কোন সমস্যা বা দারিদ্রতা আপনাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। সব বাঁধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে আপনি অবশ্যই সফল হতে পারবেন। সফল ব্যক্তিরা সমস্যার অনুপস্থিতিতে নয়, বরং সমস্যার উপস্থিতিতেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে যায়।