স্টাফ রিপোর্টার ॥ যত্রতত্র এবং নিয়ম বহির্ভূত ইটভাটা প্রতিষ্ঠার কারণে দিনকে দিন জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। যে কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাবের আশংকা করা হচ্ছে।
পরিবেশ ও কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে, পরিবেশ আইনে কৃষি জমিতে ইটভাটার ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও দেদারসে গড়ে উঠছে ইটভাটা। লোকালয়ের বাইরে ইটভাটা করার বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। আর যত্রতত্র ইটভাটা গড়ে উঠছে। যে কারণে দেশে দ্রুত কমে যাচ্ছে কৃষি জমির পরিমাণ। শুধুমাত্র রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাভার ও নারায়নগঞ্জে গড়ে উঠেছে শত শত ইটভাটা। এসব ইটভাটায় সরকার নির্ধারিত চিমনিও ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। গাছকাটা এবং কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও অনেক ইটভাটা মালিক অধিক মুনাফার জন্য সে আইন মানছেন না। যে কারণে পরিবেশের উপরও ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
এক বেসরকারি গবেষণার পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত ২০ বছর ধরে গড়ে ৩৮ হাজার হেক্টর কৃষি জমি কমে গেছে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, লোকসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে একদিকে কৃষি জমিতে বসত বাড়ি নির্মিত হচ্ছে। অপর দিকে ঘর-বাড়ি তৈরিতে ইটের চাহিদা মেটাতে যত্রতত্র প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ইটভাটা। এ কারণে কৃষি জমির পরিমাণ দিনকে দিন কমে যাচ্ছে। জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। একটি উর্বরা মাটির বৈশিষ্ট্য জমিতে ৫% জৈব সার থাকা এবং জৈব সারই জমির উর্বরার মূল অংশ। যদিও আমাদের দেশের জমির গড় উর্বরার পরিমাণ ০.৫%।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এসব জমির উর্বরা শক্তি ফিরে পেতে সেখানে ব্যাপক পরিমাণ সবুজ সার, কম্পোট সার ও কেমিক্যাল সার ব্যবহার করতে হবে। এবং এজন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। এমনও দেখা গেছে ৮/১০ বছরেও জমির উর্বরা শক্তি ফিরে আসেনি। কারণ ইটভাটা করার পর ভাটা মালিকরা জমির মূল জৈব অংশ কেটে নিচ্ছে। তারা জমির দেড় দুই ফিট বা দুই/তিন কোদাল পরিমাণ মাটি কেটে নিচ্ছেন। যে কারণে জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে।
প্রাপ্ত এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ১০ হাজার ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটা প্রচুর পরিমাণে ইট তৈরি করছে। এইসব ইট দেশের ইমারত তৈরি ও রাস্তাঘাট এবং কারভার্ট তৈরিতে যদিও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে তারপরও নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণে পরিবেশ ও দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। চীনে ইটভাটা মালিকরা সেদেশের ব্যাপক চাহিদা মেটাচ্ছে। সেখানে বড় বড় ইমারত তৈরি ও রাস্তাঘাটসহ ব্যাপক উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ড চালানো সম্ভব হচ্ছে। কারণ সেখানে ইটভাটা মালিকরা কোন কৃষি জমি ব্যবহার করেন না। নদীর তলদেশ থেকে মাটি উত্তোলন করে তা থেকে ইট তৈরি করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কৃষি জমিকে ইটভাটার উপযুক্ত মনে করা হয়। ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া হচ্ছে মাটি। আবার গাছ কাটা নিষিদ্ধ হলেও অনেক ভাটা মালিক সেই গাছ পুড়িয়ে ইট তৈরি করছেন। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কয়লা বা গ্যাস ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। বর্তমানে দেশে গ্যাসের ঘাটতি থাকায় একমাত্র কয়লা ভিত্তিক ইটভাটা প্রতিষ্ঠার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু আইনের শাসন অধিকাংশ মালিক মানছেন না। যে কারণে দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।