এম. এইচ. সোহেল ॥ দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর যেনো ফেরার কোনো পথ নেই। এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে সেটি ঠিক, কিন্তু চালকদের মনোভাব পরিবর্তন করতে এছাড়া বোধহয় কোনো পথ নেই।
গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছে। তাদের রাজপথে নামা ছাড়া কোনো পথ নেই। কারণ রাজধানীসহ সারাদেশে পরিবহন খাতে যে অব্যবস্থাপনা দাঁড়িয়েছে তাতে মনে হচ্ছে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ফেরার কোনো পথ নেই। সবাই জানে এই বিক্ষোভ প্রতিবাদের কারণে রাজধানীবাসীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যেসব শিক্ষার্থীরা পথে নেমেছে তাদের পরিবারবর্গও দুর্ভোগে পড়েছেন তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই এক কথা, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় চালকরা আক্রমণ করে যেভাবে দুজন শিক্ষার্থীর জীবন কেড়ে নিলো তা সত্যিই নজীরবিহীন ঘটনা।
সাম্প্রতিক সময়ে পরিবহন খাতে যে অরাজকতা দেখা দিয়েছে তা দূর হওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় দেশ চলতে পারে না। সরকারও বিষয়টি অনুধাবন করেছে। আর তাই শিক্ষার্থীদের দাবি মানাসহ সড়ক পরিবহন খাতের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস করতে চলেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, শুধু আইন করে কী কোনো সমস্যার সমাধান হবে? দরকার আইনের সঠিক প্রয়োগ। তা না হলে আইন করে কোনো লাভ হবে না। আজ গাড়ি চালকদের বেপরোয়ার কারণে প্রতিদিন অকালে ঝরে পড়ছে বহু জীবন। এভাবে চলতে পারে না। এর একটা সমাধান দরকার। আজ রাস্তায় শিক্ষার্থীরা গাড়ি থামিয়ে লাইসেন্স ও কাগজপত্রও দেখেছে। এটি কী তাদের কাজ? যে কাজ আইনপ্রয়োগকারীর সেই কাজ যদি সাধারণ মানুষকে করতে হয় তাহলে দেশে আইনের শাসন বলে কিছু থাকে না।
বর্তমানে সরকারেরও এই বিষয়টি হয়তো মাথায় এসেছে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী এই বিষয়ে তাঁদের পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। এখন শুধু দরকার আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা। সড়ক পরিবহন খাতে যে অরাজকতা চলছে তা নিরসনে সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসে গেছে। যাতে করে আর যেনো কোনো লিমনকে প্রাণ দিতে না হয়, আর যেনো কোনো মিমসহ কোনো শিক্ষার্থীকে অকালে প্রাণ দিতে না হয়।
আজ যাতে কোনো মায়ের কোল খালি না হয়, পরিবহন চালকরা যাতে আর কোনো দিন প্রতিযোগিতায় নামতে না পারে, ফিটনেসবিহীন কোনো গাড়ি যেনো রাস্তায় দেখা না যায়, লাইসেন্স ছাড়া কোনো চালক যেনো আর স্টিয়ারিং এ না বসে সেদিকটা দেখতে হবে।
উপরের বিষয়গুলো যদি নিশ্চিত করা না যায় তাহলে এখন যেমন শুধু শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে, একদিন হয়তো দেশের সকল নাগরিক রাস্তায় নেমে আসবেন। কারণ হলো সবকিছুর একটা শেষ আছে। দেশের পরিবহন চালকরা যেভাবে তাদের নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন তাতে ভবিষ্যতে অনেক বড় মূল দিতে হবে তাদেরকে।