দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনি হয়ত হিমালয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখার জন্য যাত্রা শুরু করেছেন। চারিদিকের সুন্দর দৃশ্য আপনাকে পুলকিত করছে। মনের মধ্যে কোথাও কোন ভয়ভীতি নেই। হঠাৎ এমন একটি লেকের কাছে পৌছালেন যা অসংখ্য কঙ্কালে ভর্তি। তখন আপনার কেমন লাগবে একটু কল্পনা করুন তো।
এমনি একটি লেক রয়েছে ভারতের উত্তরখন্ডের চামোলী জেলার ত্রিশূল পাহাড়ের কোলে যার নাম রূপকুন্ড। অনেকের কাছে এটি পরিচিত স্কেলেটন লেক বা কঙ্কালের লেক নামে। ১৯৪২ সালে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ মাইল উঁচু হিমালয় পর্বত শৃঙ্গের ভারতের অংশের রূপকুন্ডে ব্রিটিশ গার্ডরা বরফে জমে যাওয়া একটি লেকের সন্ধান পান। একেতে ঠান্ডা পরিবেশ তার উপর এই লেকে দেখা মেলে অসংখ্য কঙ্কাল। এই দৃশ্য দেখে ব্রিটিশ গার্ডরা ভয়ে আঁতকে উঠেন।
লেকের চারপাশে শত শত কঙ্কাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। গ্রীষ্ম আসার সাথে সাথে দেখা গেল আরো ভয়াবহ দৃশ্য। গ্রীষ্মের গরমে বরফ গলতে শুরু করায় ভেসে উঠতে থাকে বরফের নিচে চাপা পড়ে থাকা আরো মানুষের কঙ্কাল। আর সেগুলো এসে জমা হতে লাগলো হ্রদের তীরে। কী অদ্ভুত পরিবেশ।
কঙ্কালগুলোর সাথেই পাওয়া যায় আংটি, কাঠের তৈরি বিভিন্ন জিনিস, চামড়ার জুতা, লোহার তৈরি বর্শার মাথা বা ফলক ও বাঁশের পাত। গবেষকদের ধারণা, কঙ্কালগুলো ছিল একদল তীর্থযাত্রীর যারা উপত্যকার উপরে উঠছিলেন। তাদের সহযোগিতা করছিলেন একদল একই গোত্রের স্থানীয় কুলি বা মালপত্রবহনকারী। এই ধারণার পেছনে কারণও রয়েছে। তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা যায় কিছু সংখ্যক কঙ্কালের ডিএনএ এর মধ্যে অনেক মিল রয়েছে আর বাকিরা সব ভিন্ন ভিন্ন।
তাদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে এক লোমহর্ষক তথ্য। সবার মাথাতেই ভারি কোনো কিছুর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেল। কোনো অস্ত্রের আঘাতে এতগুলো মানুষ মারা যাননি। তাদের আঘাতের চিহ্নগুলো ছিল গোলাকৃতির। কঙ্কালগুলোর মাথা ও কাঁধ পরীক্ষা করে আরো জানা গেল আঘাতটা এসেছে মাথার উপর দিক থেকে। ফলে গবেষকরা একটি সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেন।
তারা ধারণা করেন, শত শত তীর্থযাত্রী এক ভয়াবহ শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে মারা গিয়েছিলেন। শিলাবৃষ্টি সাধারণত প্রাণঘাতী হয় না। কিন্তু সেদিনের শিলাগুলোর আকার হয়তো অনেক বড় ছিল।আশপাশে কোন ছাউনি না থাকায় তারা এই মহা বিপদ থেকে রক্ষা পায়নি কেউ। ফলে তারা করুণ মৃত্যুর মুখোমুখি হন। প্রায় ১২০০ বছর আগের সেই ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আজো রূপকুন্ডের কঙ্কাল হ্রদের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে শত শত কঙ্কাল। যা দেখতে প্রতিনিয়ত অনেক পর্যটক সেখানে ভীর জমায়।