ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ বাংলাদেশ রেলওয়ে এক সময় ছিল অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখন দিন পাল্টেছে, রেলওয়ে এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান। কারণ আন্ত:নগর সার্ভিস চালু হওয়ার পর মানুষ টিকিট না কেটে ট্রেনে চড়েন না। কিন্তু তারপরও জনসাধারণের ভোগান্তির অন্ত নেই। টিকিট পাওয়া যায় না, টিকিট কালো বাজারীদের হাতে চলে যায়, সময় মতো ট্রেন আসে না ইত্যাদি নানা অভিযোগ রেলওয়ের বিরুদ্ধে।
সরকার নতুন রেলমন্ত্রী হিসেবে বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনকে নিয়োগ দানের পর সবাই ভেবেছিল এবার মনে হয় রেলওয়ের উন্নতি হবে। কিন্তু বেশ কয়েক মাস অতিবাহিত হতে চললো কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে তিনি বলেছেন, রেলওয়েকে ঢেলে সাজানো হবে, রেলওয়ের দখলকৃত জমি উদ্ধার করা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা এখনও সেই আশাতেই বসে আছি। ইতিমধ্যে খবর বেরিয়েছে রেলওয়ের ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে। যাত্রী সেবার মান না বাড়িয়ে রেলওয়ের ভাড়া বৃদ্ধি কতখানি যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা দরকার।
বিলম্বে যাত্রীরা বিড়ম্বনায়
ট্রেনের টিকিটের মূল্য বর্তমানে বাসের তুলনায় কম হওয়ায় যাত্রী সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। কিন্তু বিলম্ব যেনো নিত্য দিনের ঘটনা। সঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়লো এমন খুব একটা দেখা যায় না। বেশির ভাগ সময় ১/২ ঘণ্টা, কখনও বা ৪/৫ ঘণ্টাও বিলম্বে ছাড়ে ট্রেন। বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার জানান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লাইনের কারণে ট্রেন বিলম্ব ঘটে। ঢাকা থেকে পশ্চিমাঞ্চলের দিকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলো টঙ্গি পার হওয়ার পর জয়দেবপুর, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, উল্লাপাড়া, বড়ালব্রীজ, চাটমোহর, ঈশ্বরদী হয়ে খুলনা অথবা জয়পুরহাট যে কোন দিকেই হোক এক লাইনের কারণে স্টেশনে থামিয়ে অন্যটিকে অতিক্রম করার সুযোগ করে দিতে হয়। যে কারণে সারাদিন প্রায় প্রতিটি ট্রেনের বিলম্ব ঘটে। বিলম্ব এড়াতে হলে ডাবল লাইন করতে হবে। যেমন ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন থেকে খুলনা রুটে ঈশ্বরদী থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পর্যন্ত ডাবল লাইন থাকায় বিলম্ব ঘটে কম।
প্রায়ই ঘটছে কাউন্টারে হামলা
টিকিট না পেয়ে কাউন্টারে হামলার ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটছে। কারণ যে পরিমাণ যাত্রী একটি স্টেশন থেকে হচ্ছে সে পরিমাণ টিকিট কাউন্টার থেকে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। গত কয়েক মাস আগে ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশনে স্থানীয় এমপি স্টেশন মাস্টারকে টিকিটের জন্য মারধর করেন যা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় উঠেছে। টিকিট না পেয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে প্রায় প্রতিদিন যাত্রীরা হামলা চালাচ্ছে কাউন্টারে। সমপ্রতি ক্ষুব্ধ এক যাত্রীর হামলায় ভেঙে গেছে প্রথম শ্রেণীর টিকিট কাউন্টারের গ্লাস। এ সময় কাউন্টারের গ্লাসের টুকরোর আঘাতে জুয়েল নামে টিকিট নিতে আসা এক ব্যক্তি আহত হন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগের দিন টিকিট না পেয়ে কাউন্টারে বুকিং ক্লার্কের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে এক ছাত্র। জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহানগর গোধূলি ট্রেনের টিকিটের জন্য প্রথম শ্রেণীর কাউন্টারে আসেন যাত্রী জুয়েল। এ সময় তাকে জানানো হয় টিকিট নেই। ক্ষুব্ধ এই যাত্রী কাউন্টারের কর্তব্যরত বুকিং ক্লার্ক এনায়েত হোসেন ও শামীমের কাছে টিকিট না থাকার কারণ জানতে চান। তারা জুয়েলকে জানান টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তু জুয়েল একথা মানতে নারাজ। বুকিং ক্লার্কদের টিকিট দিতে বারবার অনুরোধ করেন। এক পর্যায়ে দুই ক্লার্ক কড়া ভাষায় টিকিট ফুরিয়ে যাওয়ার কথা জানালে ক্ষোভে ফেটে পড়েন যাত্রীরা। এ সময় জুয়েল টিকিট নিতে আসা অন্য যাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে প্রথম শ্রেণীর কাউন্টারে হামলা চালান। এতে কাউন্টারের গ্লাস ভেঙে যায়। গ্লাসের টুকরোর আঘাতে জুয়েলের শরীরের বিভিন্ন স্থান কেটে যায়। পরে অন্য যাত্রীরা আহত জুয়েলকে নিয়ে যান ম্যানেজার শামসুল আলমের কক্ষে। সেখানে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এভাবে একের পর এক ট্রেনের যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। আবার শোনা যাচ্ছে টিকিটের মূল্য বাড়ানো হবে। যাত্রী সেবা নিশ্চিত না করে ট্রেনের টিকিটের দাম বাড়ালে তাতে হিতে বিপরিত হওয়ার সম্ভাবনায় বেশি। কারণ রেলওয়েকে আরও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে যাত্রী সেবার মান অবশ্যই বাড়াতে হবে।