দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন টেক জায়ান্ট ফেসবুক ভার্চুয়াল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের অর্থ লেনদেনের সুযোগ দিতেই এই ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করা হচ্ছে।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারতের রেমিট্যান্স বাজার ধরাই ফেসবুকের প্রধান লক্ষ্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফেসবুকের মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপ ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ভারতের প্রায় ২০ কোটি মানুষ এই অ্যাপটি ব্যবহার করে। রেমিট্যান্সের গন্তব্য হিসেবেও বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারত।
বিশ্বব্যাংকের এক তথ্যমতে, গত বছর ভারতে প্রায় ৬ হাজার ৯০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে। তাছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিবেচনায় ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ভারতে বর্তমানে প্রায় ৪৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেস্টার রিসার্চের এক তথ্যমতে, ২০২২ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ৭৩ কোটিতে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে কারণে ফেসবুকের জন্য ভারত দারুণ এক সম্ভাবনাময় বাজার বলে মনে করা হচ্ছে।
আর্থিক সেবা খাতে স্থান করে নিতে ফেসবুকের ক্রিপ্টোকারেন্সি উন্নয়ন অনেকটা অনুমিত ছিল। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি হোয়াটসঅ্যাপ পরিচালনার জন্য পেপেলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডেভিড মার্কাসকে নিয়োগ দেয়। সেইসঙ্গে তিনি ফেসবুকের ব্লকচেইন সার্ভিসের প্রধান হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানটি পরে এ খাতে আরও কর্মী নিয়োগ করে। লিংকডইনের হিসাবমতে, এ পর্যন্ত এই খাতে প্রায় ৪০ জনকে নিয়োগ দিয়েছে ফেসবুক।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ফেসবুক মূলত একটি স্থিতিশীল ভার্চুয়াল মুদ্রা তৈরির চেষ্টা করছে। মানের অস্থিরতা ঠেকাতে মার্কিন ডলারের ওপর ভিত্তি করে এই ডিজিটাল মুদ্রার বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করা হবে। তবে তারা স্বীকার করেছেন যে, ফেসবুক এই ধরনের মুদ্রা প্রচলন হতে এখনও অনেক দূরে রয়েছে। কারণ হলো তারা এখনও মাত্র কৌশল নির্ধারণ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এসব কৌশলের মধ্যে সম্ভাব্য মুদ্রার মান স্থিতিশীল রাখার জন্য সম্পদ কিংবা প্রচলিত মুদ্রার জামানত রাখার পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এক বিবৃতিতে ফেসবুকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ফেসবুক বিশ্বের অন্য কোম্পানিগুলোর মতোই ব্লকচেইন প্রযুক্তির বহুমুখী ব্যবহার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের ছোট্ট এই দলটি ভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশনের সন্ধান চালাচ্ছে। এর বাইরে এটা নিয়ে আমাদের তেমন কিছুই বলার নেই।
গত বছর হতেই বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল কিংবা ভার্চুয়াল মুদ্রার তৈরির উদ্যোগ গ্রহণের কথা শোনা যাচ্ছে। ভার্চুয়াল মুদ্রার ওয়েবসাইট স্টেবল ডট রিপোর্টের এক তথ্যমতে, অনলাইনে সহজে লেনদেনের জন্য বিটকয়েনের চেয়েও স্থিতিশীল একটি ডিজিটাল মুদ্রা প্রচলনের লক্ষ্যে গত বছর অন্তত ১২০টি কোম্পানি কাজ করেছে। তবে কোনো উদ্যোগই এখনও ফলপ্রসূ হয়নি।
এর কারণ হলো ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহারে সবার আগে সামনে উঠে আসে নিরাপত্তার বিষয়টি। কারণ ডিজিটাল মুদ্রার বিপরীতে দৃশ্যমান কোনো জামানত না থাকার কারণে বিনিয়োগকারীরা এটি ব্যবহারে মোটেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। যে কারণে কেও সহজে এই মুদ্রা কিনতে চান না। সম্প্রতি বেসিস নামে একটি ডিজিটাল মুদ্রা ৮ মাস চলার পর বন্ধ হয়ে গেছে। নিউজার্সিভিত্তিক ডিজিটাল মুদ্রা কোম্পানি হবোকেন জানিয়েছে, জামানত দিতে না পারার কারণই এই মুদ্রা বন্ধ হওয়ার প্রধান কারণ।
এই সময়ের বহুল প্রচলিত আরেকটি ডিজিটাল মুদ্রা ‘টিদার’কেও একই ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। যদিও নিমার্তারা প্রতিটি টিদার টোকেনের মূল্য ১ মার্কিন ডলার বলে এসেছেন। তবে তারা এই ব্যাপারে নিরীক্ষায় রাজি না হওয়ার কারণে মুদ্রাটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অবশ্য ফেসবুকের বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। তাদের বার্ষিক আয় প্রায় ৪ হাজার কোটি ডলার। আবার এর ব্যবহারকারীর সংখ্যাও প্রায় ২৫০ কোটি। তাই ক্রিপ্টোকারেন্সির বিপরীতে জামানত দেওয়া প্রতিষ্ঠানটির জন্য কোনো সমস্যা হবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।