দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যেখানকার বায়ুমণ্ডল এতোটাই পাতলা যে তা প্রায় নেই বললেই চলে, সেই মুলুকে এবার বাতাসের চেয়ে ভারি একটা হেলিকপ্টার উড়বে এবং ঘুরবে। আবার তার মাথার উপর দু’জোড়া পাখা ঘুরবে বনবন করে।
যেখানে সেখানে নয়, ওই হেলিকপ্টার উড়বে এবার সৌরমণ্ডলের আরও একটি গ্রহে মঙ্গলগ্রহে। পৃথিবীর পিঠে যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি, তার ১ লাখ ফুট উপরে বায়ুমণ্ডল যতোটা পাতলা হয়ে গেছে, লাল গ্রহ মঙ্গলে তেমনই বায়ুমণ্ডলে মাত্র ১৫ ফুট উপর দিয়ে উড়ে যাবে সেই হেলিকপ্টারটি। মনে করিয়ে দেবে আমাদের গ্রহে প্রথম উড়ানের জন্মদাতা দুই রাইট ভাইয়ের কথাও।
এটি কোনো কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়, নয় কোনো মহাকাব্যের কাহিনী। আগামী বছরেই ‘লাল গ্রহে’ ওই হেলিকপ্টার পাঠাতে চলেছে নাসা। যার মাথায় বনবন করে ঘুরবে দু’জোড়া রোটর ব্লেড বা পাখা। লম্বায় যেগুলো চার ফুটের মতো। মিনিটে প্রায় আড়াই হাজার বার পাক দিতে পারে ওই হেলিকপ্টারের পাখাগুলো। পৃথিবীতে হেলিকপ্টারের মাথায় থাকা রোটর ব্লেড বা পাখাগুলো যে গতিবেগে ঘোরে, তার অন্তত ১০ গুণ বেশি গতিবেগে। এই হেলিকপ্টারের মাথায় থাকবে সৌর প্যানেল। সূর্যালোক টেনে নিয়ে যা হেলিকপ্টারের মধ্যে থাকা ব্যাটারিগুলোকে সচল রাখতে সাহায্য করবে। সেই ব্যাটারিই বনবন করে ঘোরাবে রোটর (ব্লেড) গুলোকে।
মহাকাশ অভিযানের এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের যিনি মধ্যমণি তিনি ভার্জিনিয়ায় নাসার সেই ‘রেভোলিউশনারি ভার্টিকাল লিফ্ট টেকনোলজি (আরভিএলটি)’-র ম্যানেজার সুজান জানিয়েছেন যে, আপাতত একটি হেলিকপ্টার পাঠানো হচ্ছে মঙ্গলগ্রহে। নাসার এই অভিযানের নাম ‘মার্স-২০২০’ অভিযান। সেটি মোট ৫ বার ওড়ানো হবে লাল গ্রহে। প্রতিবারই উড়বে দেড় মিনিটের জন্য। সেই হেলিকপ্টারেই থাকবে অত্যন্ত শক্তিশালী ক্যামেরা।
সুজানের কথায়, ‘মঙ্গলের মাটিতে নামা কোনো ল্যান্ডার বা তার মাটি চষে বেড়ানো কোনো রোভারের পক্ষে যা কখনওই সম্ভব নয়, দেড় মিনিট উড়েই সেই কাজটা করবে ওই হেলিকপ্টারটি। মঙ্গলের পিঠে বিভিন্ন এলাকার চেহারা, অতীতের ইতিহাস তারা কীভাবে কতোটা বলে দিতে পারছে, সেটি বোঝার চেষ্টা করবে ওই হেলিকপ্টার।’
ভার্জিনিয়ায় নাসার অ্যারোনটিক্স রিসার্চ মিশন ডাইরেক্টরেটের তরফে জিম ব্যাঙ্কে জানিয়েছেন, ‘মঙ্গলের পিঠের ১৫ ফুট উপরে যেখানে এই হেলিকপ্টারটি ওড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের, সেখানকার বায়ুমণ্ডলের স্তর খুবই পাতলা। ভূপৃষ্ঠ হতে ১ লাখ ফুট উচ্চতায় বায়ুমণ্ডল যতোটা পাতলা হয়, মঙ্গলে পাঠানো হেলিকপ্টারও উড়বে তেমনই পাতলা বায়ুমণ্ডলের স্তরেই। কাজটি মোটেই সহজ নয়।’
জিম ব্যাঙ্কে জানিয়েছেন, অতো পাতলা বায়ুমণ্ডলে ভাসিয়ে রাখতে হবে বাতাসের চেয়ে ভারি হেলিকপ্টারটিকে। তাই হেলিকপ্টারটি চেহারায় হবে একটি বলের মতোই। যার ওজন হবে মেরেকেটে মোট ৪ পাউন্ড। সেই হেলিকপ্টারে থাকা ক্যামেরাটি চেহারায় হবে একটা ছোট মোবাইল ফোনের মতোই। ৯০ সেকেন্ডের বেশি হেলিকপ্টারটিকে ভাসিয়ে রাখা যাবে না মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলে।
সুজান বলেছেন, ‘২০১৩ সালে আমরা একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে ওই হেলিকপ্টারটি বানাতে শুরু করি। যা মঙ্গল-মুলুকে ঢুকে পড়লেই স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠবে। তাকে গ্রাউন্ড স্টেশনের কন্ট্রোল রুম থেকে কম্যান্ড পাঠিয়ে চালাতে হবে না। আপনাআপনিই চলবে- উড়বে- ঘুরবে। আবার মঙ্গলের মাটিতে নামা ল্যান্ডারে তা নেমে আসবে নির্দিষ্ট সময়ের পরও।’
আপাতত একটি হেলিকপ্টার পাঠানো হচ্ছে এই লাল গ্রহে। তার প্রযুক্তিগত পারদর্শিতা বুঝে নেওয়ার জন্য। সফল হলে পরবর্তীতে মঙ্গলে বিভিন্ন অভিযানে এমন আরও অনেক হেলিকপ্টার পাঠানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন সুজান।