দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাতক্ষীরা শহরের বাঁকাল এলাকায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ছোট্ট হোটেল ‘গরিবে নেওয়াজ’। অভাব ও বিপদে থাকা মানুষদের বিনামূল্যে খেতে দেন এই হোটেলের মালিক আব্দুর রশিদ সরদার!
হোটেলের মালিক আব্দুর রশিদ সরদার সব সময় চেষ্টা করেন সাধ্যের সবটুকু দিয়ে বিপদে পড়া মানুষটির আপ্যায়ন করার জন্য। যদি কেও বলেন টাকা নাই তাহলে তাকে টাকা ছাড়াই খাওয়ান রশিদ।
হোটেলের সামনে ‘গরিবে নেওয়াজ’ নামে ছোট্ট একটি সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘তেল মাথায় দেন, গামছা নেন, গোসল করেন, ভাত খান, পয়সা থাকলেও খাবেন, না থাকলেও খাবেন!’
আব্দুর রশিদ সরদার সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের চরবালিথা গ্রামের বাসিন্দা। স্ত্রী ফজিলা খাতুন ও ছেলে সাগরকে নিয়ে বর্তমানে তার বসতি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ছোট্ট এই হোটেলটির মধ্যেই।
হোটেলের নামকরণ এবং পয়সা থাকলেও খাবেন, না থাকলেও খাবেন এমন সাইনবোর্ডে এমন লেখার বিষয়ে হোটেল মালিক আব্দুর রশিদের সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয় সহযোগী একটি সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিনিধির সঙ্গে।
এই বিষয়ে হোটেল মালিক আব্দুর রশিদ সরদার বলেছেন, কে কখন কোথায় বিপদে পড়েন তার কথা তো কারও জানা নেই। বিপদগ্রস্ত মানুষ যদি আমাকে এসে তার বিপদের কথা বলে তবে তাকে আমি দেখবো। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী আমি তাকে খাওয়াবো। এমন কেও থাকলে আমি তাকে বলি, পয়সা দেয়া লাগবে না, বিনামূল্যেই খেয়ে যান।
রশিদ আরও বলেন, অনেকেই আসেন রোগীর সঙ্গে, হয়তো খুব গরিব মানুষ। অনেক সময়ই তাদের ফ্রি খেতে দিতে হয়। অসহায় মানুষ কি করবো বলুন? যেটুকু পারি দেই। আমার মৃত্যুর আগে যদি একটু দোয়া দেয়, তাই গরিবের জন্য আমি এসব করি। এই মেডিকেল কলেজের অনেক ছাত্ররাও আমার এখান থেকে খেয়ে যায়।
অনেক সময় অনেকেই টাকা দিতে পারে না। পরে তারা দিয়ে দেয়। এই মেডিকেল কলেজ এলাকার প্রথম দোকানদার আমি, ৬ বছর আগে দোকান দিয়েছি। তখন ভ্যানের ওপর ছিল এই ছোট্ট দোকান। ওভাবেই খাবার বিক্রি করতাম। হোটেলটা করেছি ৩ বছর আগে। স্ত্রী ও ছেলেটা আমার এই হোটেলের সহযোগী।
দুঃখ প্রকাশ করে হোটেল মালিক আব্দুর রশিদ বলেন, কিছুদিন পূর্বে শ্যামনগর উপজেলা হতে একটা রোগী ভর্তি হয়েছিল। তারা খুবই গরিব মানুষ। আমাকে জানানোর পর তাকে আমি দেখেছি। তার সঙ্গে থাকা স্বজনদের খেতে দিয়েছি। তবে সে আর সুস্থ হয়নি, পরে মারা গেছে। তার মৃত্যুতে আমি খুব দুঃখ পেয়েছি।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র মেকানিক মিজানুর রহমান আব্দুর রশিদ সম্পর্কে বলেন, চাচা দূর হতে আসা মানুষদের অনেক উপকার করেন। সাধারণত কেও হোটেলে ফ্রিতে খেতে আসে না। তবে তার কাছে এসে বিপদের কথা জানালে তিনি তখন তাকে বিনামূল্যে খাওয়ান।