দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আসলে সৃষ্টিকর্তা কখন কাকে ধনী করেন আর কাকে গরিব করে দেন তা বোঝা মুশকিল। যেমন এক সময়ের কোটিপতি বর্তমানে পরিণত হয়েছেন একজন ভাঙারি দোকানের শ্রমিক হিসেবে!
যেনো অনেকটা রূপকথার গল্পের মতোই। আমির থেকে ফকির হয়ে যাওয়া সেই গল্প। একদিন যার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা ছিলো। তবে এখন ভাঙ্গারির দোকানে কাজ করে তাকে কোনো মতে সংসার চালাতে হয়।
এই গল্প আরব আমিরাতে এক প্রবাসী পাকিস্তানির। খালিজ টাইমসে উঠে এসেছে ওই পাকিস্তানি নাগরিক আসগর হোসেইন এবং তার পরিবারের এই করুণ কাহিনী।
শারজাহতে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা ছিল আসগরের। ২০০৮ সালে এক ভারতীয় প্রতারকের খপ্পরে পড়ে পথে বসে যায় সুখী এই পরিবারটি। আসগরের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করে তার স্বাক্ষর জাল করে পুরো কোম্পানিই গায়েব করে দেন ওই ভারতীয় নাগরিক। শেষ পর্যন্ত ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে গিয়ে পথে বসেন আসগর।
আসগরের চার ছেলে মেয়ে, যাদের বয়স ১৫ হতে ২৩ বছর। গত ৫ বছর ধরে শিক্ষা হতেও বঞ্চিত তারা। খরচ চালাতে না পারায় স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে তার ছেলে মেয়েদের। দেশটিতে বসবাসের বৈধতা হারানোর কারণে নতুন করে কোনো স্কুলও তাদের ভর্তি করছে না।
বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট হতে এখন ছোট্ট একটি রুমে গাদাগাদি করে কোনো রকমে থাকতে হচ্ছে ৬ জনের এই পরিবারটিকে। নেই কোনো প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, ঘরের মেঝেতেই কোনো মতে ঘুমাতে হয় তাদেরকে।
সম্প্রতি খালিজ টাইমসকে নিজের দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে বিষদ তুলে ধরেন আসগর। তার স্ত্রী ফারাহ গুল বলেন, ‘আমার বাচ্চারা গত ৫ বছর ধরে স্কুলেও যেতে পারছে না। অন্য বাচ্চারা স্কুলে যায়, তারা শুধু তা দেখে। শুধু বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর জন্য দরজায় দরজায় সাহায্য চাইতে হয়েছে। তবে সবাই ফিরিয়ে দিয়েছে।’
পরিবার নিয়ে সেখানে এক পর্যায়ে অবৈধ হয়ে পড়েন আসগর। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে আমার মা মারা যাওয়ার পর আমি এখানে অবৈধ হয়ে পড়ি। শেষবারের মতো আমি আমার মাকেও দেখতে যেতে পারিনি। আমার স্ত্রীর বাবা-মাও মারা গেছেন, সেও তাদেরকে দেখতে যেতে পারেনি।’
আসগর হোসেইন বর্তমানে একটি ভাঙারির দোকানের শ্রমিক। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের ও বেসরকারি সহায়তাই পারে এই অসহায় পরিবারকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে- এমনটিই মনে করেন আসগর হোসেইন।