দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চলমান উত্তেজনার মুখে এবার ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত সোমবার নতুন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নির্বাহী আদেশে সাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। এই তালিকায় খোমেনিসহ আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে বলেও জানিয়েছে বিবিসি।
ইরানের এই সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার উপর নিষেধাজ্ঞার প্রথম কারণ হিসেবে গত সপ্তাহে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করাকেও উল্লেখ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, আটজন সিনিয়র কমান্ডার যারা দেশটির আমলাতন্ত্র এবং ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডকে শক্তিশালী করার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ জোগান দেন, আয়াতুল্লাহ খোমেনি হলেন তারমধ্যে অন্যতম।
কি কারণে ইরানের এই সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দাবি হলো, এতেকরে প্রায় ৯৫ বিলিয়ন ডলার খোয়াতে হবে ইরান সরকারকে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান সরকার শত্রুতামূলক আচরণ করছে। মূলত এর জন্য দায়ী দেশটির ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ও তার দফতর এবং খোমেনির ঘনিষ্ঠরা অর্থনৈতিক উৎস এবং সমর্থন হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
তবে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা নতুন কিছু নয়। ২০১৫ সালে পরমাণু সমঝোতা চু্ক্তি হতে বেরিয়ে আসে আমেরিকা। তখন হতেই দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের মধ্যে বৈরিতায় রূপ নেয়। যে কারণে ওয়াশিংটনের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে ইরান।
পেন্টাগন ২০১৮ সালে তেহরানের উপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল রাখে। এমনকি দেশটি থেকে তেল আমদানি করা দেশসমূহকেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত মাসে ওমান সাগরে তেল ট্যাংকারে হামলার জন্য ইরানকেই দায়ী করে পেন্টাগন, যদিও সেটি অস্বীকার করে তেহরান।
সবশেষ গত বৃহস্পতিবার একটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান। তাদের দাবি হলো, ড্রোনটি ইরানের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছিল, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে আসছিলেন সেটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমাতেই ছিল।
এর প্রতিক্রিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানকে কঠোর হুঁশিয়ারিও দেন। এমনকি যুদ্ধেরও অনুমতি দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে রাশিয়ার হুমকিতে অবশ্য পিছু হটেন। এমন অবস্থায় কোনো উপায় না দেখে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার উপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো ওয়াশিংটন।
এ সপ্তাহে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্বমন্ত্রী স্টিভ মিনুশিন এমনুচিন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তকে ঘৃণ্য কূটনীতি হিসেবে আখ্যায়িত করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধের দিকেই ঠেলে দিচ্ছেন। এর পরিণতি খুব ভয়াবহ হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা। একদিকে শান্তিপূর্ণ আলোচনার কথা বলছেন, অপরদিকে যুদ্ধেরও উস্কানি দিচ্ছেন। যে কারণে এই অঞ্চলের মানুষের নিরাপদ জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই এমন নীতিহীন কর্মকাণ্ড হতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।