দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু আমাদের দেশের সবচেয়ে আলোচিত রোগের একটি। এই রোগে আক্রান্ত রোগী একদিকে যেমন শারীরিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে অপরদিকে এর প্রভাব মানব শরীরে বিদ্যমান থাকে দীর্ঘদিন। আজ জেনে নিন ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায়।
ডেঙ্গু জ্বর একটি এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত রোগ। সাধারণত মে মাস থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর মাস, বিশেষ করে গরম ও বর্ষার সময় ডেঙ্গু জ্বরে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে ডেঙ্গু প্রাণঘাতি কোনো রোগ নয়। সঠিক নিয়মে চিকিৎসা ও নিয়ম মেনে চললে এই রোগ থেকে আমরা খুব দ্রুত পরিত্রাণ পেতে পারি।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ যেন দিনে দিনে বাড়ছেই। কোনভাবেই নিস্তার মিলছে না ডেঙ্গু কিংবা এই রোগবাহী মশা থেকে। ডেঙ্গু জ্বর দুই প্রকারের হয়। এর মধ্যে ক্লিনিক্যাল ডেঙ্গু মোটামুটি সহনশীল হলেও হেমোরেজিক ডেঙ্গু বা হেমোরেজিক ফিভার সবচেয়ে মারাত্মক। অধিকাংশ সময় এর কোনো প্রতিষেধক পাওয়া যায় না। লক্ষণ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়। অন্য ভাইরাল ফিভারের মতো এটিও নিজ থেকেই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর ভয়াবহ হতে পারে। আমাদের প্রথমেই সঠিক ভাবে জ্বর এর পরিমান ও প্রকার সম্পর্কে অবগত হতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর এর হাত থেকে আমাদের বাঁচার জন্য কিছু নিয়ম ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যার দ্বারা আমরা খুব সহজেই ডেঙ্গুর হাত থেকে নিজেদের ও পরিবারের সকলকে রক্ষা করতে পারবো।
তাহলে আসুন জেনে নেই ডেঙ্গু ও ডেঙ্গু মশা থেকে বাঁচার কিছু উপায়ঃ
জমাট বাধা পানি নিষ্কাশন
জমে থাকা পানিতে মশা খুব সহজে বংশবিস্তার করতে পারে। বৃষ্টির দিনে জলাবদ্ধতা বাড়ে, ফলে মশার বংশবিস্তারের স্থানও বাড়ে। তাই মশার হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে আমাদের সকলের জমে থাকা পানি পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
মশা দমন
আমরা নানান ঘরোয়া কৌশলে মশা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি। মৃদু কর্পূর, সরিষার তেলের সঙ্গে মেশানো ক্যারোম সিড বা আজওয়াই ইত্যাদি মশা তাড়াতে কাজে আসে। নিমের ও ল্যাভেন্ডার তেল, ইউক্যালিপ্টাস অয়েল ইত্যাদি দিয়েও আমরা আমাদের বাসাবাড়ির মশা নিধন করতে পারি।
শরীর ঢেকে রাখা
হাত আর পা মশার জন্য কামর দেয়ার সবচাইতে সহজ লক্ষ্য। তাই ঘরে বাইরে যেখানেই থাকুন, চেষ্টা করতে হবে যথাসম্ভব কাপড়ে নিজেকে আবৃত থাকা। পর্যাপ্ত পরিমান কাপর দিয়ে আমাদের শরীর ঢেকে রাখতে হবে।
দরজা-জানালা বন্ধ রাখা
আমাদের বাসাবাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হবে যাতে মশা সহজেই আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করতে না পারে। দিনের শেষে এবং রাতেই মশার উপদ্রব বেশি হয়। তাই এই সময় ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখলে মশা ঢুকতে পারবে কম। পাশাপাশি জানালা ও দরজার ‘মসকিউটো নেট’ লাগানো যেতে পারে।দিনের বেলাও ঘরে মশা ঢুকতে পারে। তাই জানালায় নেটের পাল্লা ব্যবহার করতে হবে।
সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা
আমরা সকলেই খাবারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর ‘সাপ্লিমেন্ট’ গ্রহণ করতে পারি। আমাদের সকলকে সঠিক নিয়ম মেনে সাস্থকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশারী হলে সব ধরনের রোগ দূরে থাকবে।
সাবধানতা
একটু সাবধানতার মাধ্যমেই আমরা খুবি সহজে ডেঙ্গুর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি। সাধারণত সূর্যোদয়ের আধাঘণ্টার মধ্যে এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আধাঘণ্টা আগে এডিস মশা কামড়াতে বেশি পছন্দ করে। এই দুই সময়ে মশার কামড় থেকে নিজেদের সাবধান থাকতে হবে। মশা যাতে বংশবিস্তার করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রেখে মশার আবাসস্থল ধংশ করতে হবে। পরিত্যাক্ত পাত্রে, ডাবের খোলা, ফেলে রাখা টায়ার, ফুলের টবে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করতে হবে। দিনের বেলাতেও ঘুমাতে হলে মশারি টাঙিয়ে নেয়া উচিৎ। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে মশারির মধ্যে রাখা শ্রেয়। কারণ এসব রোগীকে কোনো স্বাভাবিক এডিস মশা কামড় দিলে সেই মশাটিও ডেঙ্গুর জীবাণু বাহক হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।