দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমে নিজেকে স্বামী পরিচয় দিয়ে প্রসূতিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন একজন যুবক। কিন্তু শিশুর জন্মের পর একে একে তিন জন এসে বাবা দাবি করলেন! তাহলে কে বাবা ওই শিশুটির?
নিজেকে স্বামী পরিচয় দিয়ে প্রসূতিকে হাসপাতালে ভর্তি করার কারণে শিশুর জন্মের পর স্বভাবতই হাসপাতালের কর্মীরা ও চিকিৎসকরা সবাই ওই যুবককেই বাবা হিসাবে মনে করেছিলেন। তবে একদিন যেতে না যেতেই আরেকজন এসে সদ্যোজাত শিশুর পিতৃত্ব দাবি করেন।
এই বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যখন বিপাকে তখন আরও এক যুবক এসে দাবি করে বসলেন, তিনিই নাকি ওই শিশুর বাবা! তিন দিনে আসা তিন বাবাকে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা অবশেষে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন।
সম্প্রতি এমনই এক অদ্ভুত ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতায়। ঘটনার সূত্রপাত হয় গত শনিবার। দীপঙ্কর পাল নামে এক যুবক স্বপ্না মিত্র নামে ওই সন্তানসম্ভবাকে নিজের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ভর্তি করেন গাঙ্গুলিবাগানের একটি খ্যাতিমান বেসরকারি হাসপাতালে। সন্তানসম্ভবা ওই মহিলা পরের দিন অর্থাৎ রবিবার একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। মহিলার সঙ্গে একজন প্রৌঢ়াও ছিলেন যিনি নিজেকে স্বপ্নার মা বলে পরিচয় দেন।
পুলিশ সূত্রের খবর হলো, সন্তানের জন্ম পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। তবে রবিবার বিকেলে হঠাৎই অন্য এক যুবক হাসপাতালে এসে ওই সদ্যোজাতকে দেখতে চান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনিও নিজেকে ওই শিশুর বাবা হিসেবে পরিচয় দেন। শুনে হকচকিয়ে যান হাসপাতালের কর্মরত কর্মীরা। তারা ওই যুবককে ঢুকতে না দিয়ে শেষ পর্যন্ত পুলিশে খবর দেন। পাশাপাশি গণ্ডগোলের আশঙ্কা দেখে মহিলার কেবিনের সামনে হাসপাতালের দু’জন নিরাপত্তারক্ষীকে মোতায়েন করা হয়।
পুলিশ এসে দুই যুবকের পরিচয় জানতে চান। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পরে আসা যুবক নিজের নাম হর্ষ ক্ষেত্রী বলে পরিচয় দিয়েছে পুলিশকে। তিনি জানিয়েছেন যে, তার বাড়ি নিউটাউনে। প্রথম ব্যক্তি, অর্থাৎ দীপঙ্কর পুলিশের সামনে নিজের বিয়ের কাগজপত্রও দেখিয়েছেন।
অপরদিকে দ্বিতীয় ব্যক্তিও পুলিশকে জানিয়েছেন যে, তিনিও নাকি বিয়ের সার্টিফিকেট দেখাতে পারবেন। তবে ওই মহিলার ভূমিকা এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রহস্য সৃষ্টি করেছে।
হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়েছে, অস্ত্রোপচার করে ওই মহিলার শিশুর জন্ম হয়। মহিলাকে শিশুর বাবা সম্পর্কে প্রশ্ন করলেও তার বয়ান নিয়েও যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। রোগীর শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে পুলিশ এখনও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। মহিলার মা বলে পরিচয় দেওয়া বৃদ্ধাও গোটা রহস্যের কোনও আলোকপাত করতে পারেননি।
ইতিমধ্যেই আবারও রহস্য বাড়িয়ে দিয়েছেন তৃতীয় এক যুবক। হাসপাতাল সূত্রে খবর হলো, সোমবার বিকেলে প্রদীপ রায় নামে আরেক ব্যক্তি হাসপাতালে আসেন। তিনিও নিজেকে ওই শিশু কন্যার বাবা বলে দাবি করেন। সব মিলিয়ে বেশ যন্ত্রণার মধ্যেই রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তিন জন দাবিদারকে দেখে আর্থিকভাবে যথেষ্ট সঙ্গতি সম্পন্ন ব্যক্তি বলেই মনে হয়েছে। ওই শিশুকন্যার দাবি নিয়ে তিন-তিন জন হাসপাতালে হাজির হওয়ার পিছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
ডিসি (সাউথ সাবার্বান) সুদীপ সরকার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, হর্ষ ক্ষেত্রী নামে এক ব্যক্তি দীপঙ্কর পাল এবং প্রদীপ রায় নামে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার বক্তব্য হলো, ওই দু’জন ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে তার সন্তানের পিতৃত্বের দাবি করেছে। তবে তদন্তকারীরা মনে করছেন, গোটা রহস্যের চাবিকাঠি রয়েছে শিশুর মায়ের কাছেই। তাকে জেরা না করা পর্যন্ত বিষয়টি পরিষ্কার হবে না যে আসলে শিশুর প্রকৃত বাবা কে।