দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জাপানীরা বাঙ্গালিদের ভালোবাসে যা আমরা অনেকেই জানি। তবে কী আমরা এর আসল কারণ জানি? আপনিকি জানেন জাতি গঠনের ক্ষেত্রে জাপানিরা বাঙালিদের কাছে সব সময় চির কৃতজ্ঞ থাকবে।
জাপানের সাথে চাইনিজদের সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বিশ্ব ইতিহাসের একটি আলোচিত যুদ্ধ বলে আমরা জানি। এই যুদ্ধের মর্মান্তিকতা তুলে ধরা হয় হলিউডের The flowers of war নামে একটি মর্মস্পর্শী মুভি দিয়ে যেখানে হত্যা, ধর্ষণ, খুন, আহাজারি, অভাব ইত্যাদি সকল বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছিল এক অভিনব চিত্রে। ১৯৩৭ সালে বর্তমান নানজিৎ এ চাইনিজদের পরাস্থ করে জাপানীরা। পরবর্তীতেও জাপানিজদের এই সংঘর্ষে মরেছে ও মেরেছে লাখো লাখো। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে পরাস্থ হয়ে এই রক্তিম নেশা পরিত্যগ করে মনযোগী হয় নিজেদের জাতি গঠনে।
যার ফলে অচিরেই ফিরে যায় জাপানের ভাগ্য। বর্তমানে জাপানিজরা পরিণত হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম একটি সভ্য জাতিতে। আর তাদের এই জাতি গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালনে রয়েছেন কুষ্টিয়ার একজন সন্মানিত বাঙ্গালি। এই সাহসী বাঙ্গালির কারণে যেন অল্পতেই বেচে গিয়েছিল জাপানিজরা। এই মহান বাঙালির নাম বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল। ইন্টারন্যাশনাল যুদ্ধাপরাধ টাইব্যুনালে মিত্রপক্ষের চাপ সত্বেও ‘টোকিও ট্রায়াল’ ফেজে এই বাঙালি বিচারকের দৃঢ অবস্থানের কারণেই জাপান অনেক কম ক্ষতিপূরণের উপরে বেঁচে গিয়েছিলো যা জাপানিজদের কাছে এখনো মহামূল্যের স্মৃতি । যে স্মৃতি আজো তারা মনে করেন বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে আর সন্মানিত হয় কোটি কোটি বাঙ্গালি। যদি ক্ষতিপূরণ চাহিদা মোতাবেক ধার্য করা হত যা বিচারকরা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তা হলে এখন পর্যন্ত জাপানকে ক্ষতিপূরণ টানতে হত। যার ফলে ঋণের বোঝা বইতে বইতে জাপানের আর জাতি গঠন সম্ভব হত না।
যতদিন জাপান থাকবে বাঙ্গালিরা খাবারের অভাবে ও অর্থের কষ্টে মরবেনা বলে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন তৎকালীন সম্রাট হিরহিত। যার সকল সার্থকতা আমরা এখনো দেখতে পাই। জাপান এখনো আমাদের নিঃস্বার্থ বন্ধু হয়ে আছে।
সেই বীর সাহসী বাঙ্গালি রাধাবিনোদ পালের কথা এখনো মনে করে জাপানের মানুষ। কুষ্টিয়ার জন্ম নেয়া রাধাবিনোদ পালের নাম এখনো জাপানের পাঠ্য পুস্তকে লিপিবদ্ধ রয়েছে যা আমাদের জন্য পরম পাওয়া ও গৌরবময় একটি সন্মান। শুধু এই নয় সেই মহান বাঙ্গালি বিচারকের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশ কিছু মেমোরিয়াল ও মনুমেন্ট যা এখনো সংরক্ষিত করা আছে জাপানের বিভিন্ন যায়গায়।
কুষ্টিয়ার রাধাবিনোদ পাল তার কর্ম জীবনে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়াও আরো বেশ কিছু বড় বড় দায়িত্বে রত ছিলেন। তার সকল কর্ম জীবনে তিনি ছিলেন ন্যায় পরায়ণ, দিয়েছেন সাহসের পরিচয় পদে পদে। ছাত্র জীবনে রাধাবিনোদ পাল কুষ্টিয়ায় নিজ গ্রামের স্কুল ও রাজশাহী কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং পরবর্তী কালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। তিনি তার কর্ম জীবনের শুরুতেই প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে। তারপর কিছু দিন ময়মনসিংহ কোর্টে আইন ব্যবসায় নিজেকে রত করেন রাধাবিনোদ পাল। রাধাবিনোদ পাল সেরা বাঙ্গালিদের মধ্যে অন্যতম একজন ব্যক্তি যাকে নিয়ে নেটফ্লিক্সের টোকিও ট্রায়াল নামের সিরিয়াল যেখানে রাধাবিনোদের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ইরফান খান নিজে। অথচ আমরা এই মহানায়ক বীর বাঙ্গালিকে কেউই মনে রাখিনি। আসুন ইতিহাস জানি যে ইতিহাসে বাঙ্গালিরা হেসেছে গৌরবের হাঁসি।