ঈশ্বরদী প্রতিনিধি ॥ গত কয়েক দিনে শ্রমিকদের আন্দোলন এবং সেই আন্দোলন থেকে এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় শ্রমিকরা। ২৫ মার্চ ঈশ্বরদী ইপিজেড এলাকা রনক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশসহ অন্তত ২শ’ আহত হয়। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পুলিশ বেধড়ক লাঠিপেটা করে।
ঈশ্বরদী ইপিজেডে ২৫ মার্চের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এখন সেখানে পরিবেশ ছিল থমথমে। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে ১শ’ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে ৭৯ জন। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে পুলিশ ও শ্রমিক মিলিয়ে এখনও প্রায় ৬০ জন হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি রয়েছেন।
উল্লেখ্য, মেগাটেক্স ও রোশিতার শ্রমিকরা মঞ্জুরি বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু সমাধানের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল। এ ব্যাপারে পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরিফ বলেন; ঈশ্বরদী ইপিজেড আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সফল উদ্যোগ, এর বিরুদ্ধে একটি মহল চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। ঈশ্বরদী থানার ওসি আকবর আলী বলেন, ১৪/১৫ জন পুলিশ আহত হয়েছে এবং তারা এখনও চিকিৎসাধীন আছে। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্য কাহিনী
ঈশ্বরদী ইপিজেডে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে নানা অব্যবস্থা। ঢাকা টাইমস্ এর স্টাফ রিপোর্টার ঈশ্বরদী ইপিজেডে ২৫ মার্চের ঘটনার পর সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। সেখানে গিয়ে দেখা যায় থমথমে পরিস্থিতি। রায়ট পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে। তবে ঘটনা সম্পর্কে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়। সরকারি দলের এক নেতা বলেন, ঈশ্বরদী ইপিজেড আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফসল। এটিকে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর নিস্তেজ করে ফেলে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি আবার সক্রিয় ভূমিকা রাখতে শুরু করায় একটি মহল ঈর্শান্মিত হয়ে শ্রমিকদের খেপিয়ে তুলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। আওয়ামীলীগের ওই নেতা আরও বলেন, বর্তমান সরকারের যেসব উন্নয়নমূলক কর্মসূচি রয়েছে সেগুলো বাধাগ্রস্থ করতে একটি মহল তৎপর। ঈশ্বরদী ইপিজেডের ঘটনাও একই যোগসূত্রে গাথা বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, ঈশ্বরদী ইপিজেডে বিদেশী ইনভেস্ট বেড়েছে। জায়গা বরাদ্দ শেষ হওয়ার পর আবার নতুন প্লট দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এমতাবস্থায় কতিপয় শ্রমিকের খামখেয়ালিপনার কারণে ঈশ্বরদী ইপিজেড বন্ধ হলে বা উৎপাদন ব্যাহত হলে এর দায়ভার তাদেরকেই নিতে হবে। কারণ দেশের অর্থনীতিতে ঈশ্বরদী ইপিজেড একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। ঈশ্বরদী তথা অত্র অঞ্চলের অনেক বেকার সমস্যার সমাধান হয়েছে।
অপর দিকে সরকার বিরোধী মহল বলেছে, শ্রমিকদের প্রকৃত বেতন ভাতাদি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে না। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা শ্রমিকদের বেতন থেকে টাকা কর্তন করে রাখে বলে গত ফেব্রুয়ারিতেও শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করা হয়।
উল্লেখ্য, ঈশ্বরদী ইপিজেড উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালের ১৩ জানুয়ারি। তখন মোট প্লট বরাদ্দ করা হয় ১৫৮টি। ১ ডলার পার স্কয়ার মিটার হিসেবে ১ প্লটে ২ হাজার ইউএস ডলার রেটে এখানে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।