ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী দলের এক নেতার গুম হওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী যে হরতাল-ধর্মঘট শুরু হয়েছে সে ব্যাপারে গভীর পর্যবেক্ষণ করেছে এডিবি বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও দেশগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যে কারণে তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে সংঘাত এড়াতে খুব শিগগির দুতিয়ালির মাধ্যমে সংলাপে বসার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। তারা মনে করে বিরোধী দল পরবর্তী নির্বাচনের জন্য যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি দাবি করছে তাতে আগামীতে এই ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও সংঘাতের দিকে যেতে পারে। এর ফলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে উন্নয়ন কর্র্মকাণ্ডও ব্যাহত হবে। তবে আসছে বাজেটে সহায়তা দেয়ার জন্য এডিবি প্রস্তুত। এর আগে তারা এপ্রিল মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠকের ফলাফলের হালনাগাদ জানতে চায়। বিশেষ করে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত খাতভিত্তিক সহায়তার প্রস্তুতির ব্যাপারে আজ ৯ মে শেরেবাংলা নগরের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে ২০টিরও বেশি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক হতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ সফর করে গেলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। একই সময় সফর করে গেলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। এরা দু’জনই রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এই আহ্বানে কে কতটুকু সাড়া দেবেন তা সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছে উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও দাতা সংস্থা। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে তারা ভালোভাবেই অবগত আছেন। তারা ভালো করেই জানেন, বাংলাদেশের রাজনীতি যেমন জনগণের জন্য হয় আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের কারণেও এদেশের রাজনীতি ভিন্ন খাতে প্রভাহিত হয়ে থাকে। তাই উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও দাতা সংস্থা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে বসা নিয়েও সন্দিহান।
এদিকে আজকের বৈঠকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নের বিভিন্ন প্রকল্প ও বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন নিয়ে পর্যালোচনা হবে। তবে তার আগে এডিবি’র তৈরি করা প্রতিবেদনটি সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাওয়া হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, সড়ক খাতে বাজেট ব্যবস্থাপনা, বাজেট সহায়তা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রকল্প, জ্বালানি খাত, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব, সামাজিক নিরাপত্তা, সুশাসনসহ আরও বেশ কিছু বিষয়।
বলা হচ্ছে, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এডিবি সহায়তা দিয়ে আসছে। এরপরও তারা দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী ও একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চায়। বর্তমানে দুর্নীতি নিয়ে এডিবি ইতিপূর্বে সরকারের কাছে বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। কিন্তু সেভাবে আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় এডিবি বেশ কিছুটা হতাশ। তারা মনে করে, দুর্নীতি কমানোর জন্য প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানো, স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত কেনাকাটার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনা। যে কারণে এডিবি সুশাসন প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও কিছু প্রকল্পে সহায়তা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এডিবি মনে করে, সরকারের সামনে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিদ্যুৎ, গ্যাস, সড়ক, রেলওয়ে, বন্দর। এর পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি, কারিগরি সহায়তা, দ্রুত নগরায়ন, নগরের অপর্যাপ্ত সেবা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এছাড়াও তারা আর্থিক, কৃষি, প্রাকৃতিক গ্যাস, বেসরকারি খাত উন্নয়ন, শিক্ষা, নগর উন্নয়নকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আর্থিক খাতে তারা অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, ক্ষুদ্র ঋণ, ব্যবসায় অর্থায়ন, সংস্কারের মাধ্যমে শেয়ারবাজার উন্নতির পরামর্শ দিয়েছেন। তবে তারা বিভিন্ন খাতে সহায়তার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছেন। যে পরিকল্পনার মাধ্যমে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সহায়তা দিয়ে যাবে।
জানা গেছে, এডিবি আসছে বাজেটে বাজেট সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এডিবি মনে করে, বাজেট এখন চাপের মুখে রয়েছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম, সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশি দামে সরকারকে এসব পণ্য কিনতে হচ্ছে। একই সঙ্গে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বিশাল পরিমাণ অর্থ। এছাড়াও সরকারের নিয়মিত ব্যয় নির্বাহ করতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক মনে হয় না। এছাড়াও বৈদেশিক সাহায্য কমে যাওয়ায় সরকারকে বাজেট ও বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য বজায় রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে কারণে এডিবি সরকারকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে অর্থায়ন করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কৃষি, প্রাকৃতিক সম্পদ, শিক্ষা, জ্বালানি, পরিবহন, নগর উন্নয়নের জন্য এডিবি মোট যে ঋণ সহায়তা দেবে তারই একটি অগ্রাধিকারমূলক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে আজকের বৈঠকে। অবশ্য এর আগে অর্থাৎ ১৯ এপ্রিল এডিবি বাংলাদেশের কর্মসূচির সহায়তা নিয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠক করে। সে বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আজ বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে যাই ঘটুক না কেনো, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজেটে বৈদেশিক সাহায্য জরুরি। যদিও বর্তমান সরকার প্রথম থেকে এডিবি বা বিশ্বব্যাংক নির্ভর বাজেট থেকে বেশ দূরে সরে ছিল। তথাপিও বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে এবারের বাজেটে বৈদেশিক সাহায্য নিশ্চিত হওয়া একান্ত দরকার বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।