গাইবান্ধা থেকে প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশে এমন অনেক নামী-দামি স্কুলই রয়েছে যেখানে এসি রয়েছে, রয়েছে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা। কিন্তু যখন আমরা শুনি গাছের নীচে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করছে বা চায়ের দোকানে ক্লাস করছে! তখন কেমন লাগবে? এমনি এক স্কুলের কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার একটি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে কালাসোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় এখন ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস করছে চায়ের দোকানে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। গত বছর ওই বিদ্যালয়টি যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় নতুন করে ঘর তোলা সম্ভব হয়নি। অনেক ছাত্র-ছাত্রী পার্শ্ববর্তী অন্যান্য স্কুলে চলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে একটি চায়ের দোকানের পাশেই বেঞ্চ বসিয়ে শিক্ষকরা পাঠদান করছেন।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন এমন অবস্থা চলতে থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে আসা এক রকম ছেড়েই দিয়েছে। বিদ্যালয়ের বেহাল দশার ফলে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে মাত্র ৫ জন করে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন, তিনিসহ মাত্র ২ জন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। গত বছরের জুন মাসে বিদ্যালয় ভবনটি যমুনার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তারপর আজ এখানে কাল ওখানে এভাবেই স্কুলের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সরকারি এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা না পাওয়ায় নতুন ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে আপাতত স্কুল পরিচালনা কমিটির একজন সদস্যের ছাপড়া ঘরে স্কুলের একাংশের কাজ চালানো হচ্ছে। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটির অপর সদস্য অজুফা বেগমের একটি চায়ের দোকানে চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চ বসিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। এমন বেহাল অবস্থার কারণে স্কুলটির ৫টি শ্রেণীতে ছাত্রছাত্রী কমতে কমতে বর্তমানে ৯১ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে শ্রেণী বিভাজন ছাড়াই ক্লাসের কাজ চালাতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কাগজ ও খাতাপত্র বাড়িতে নিয়ে রাখতে হচ্ছে।
জানা গেছে, এই বিদ্যালয়ে কোন শৌচাগার নেই, পানীয় জলের কোন ব্যবস্থাও নেই। এসব সেরে নিতে হয় স্কুলসংলগ্ন কোন বাড়িতে কিংবা খোলা মাঠে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পর বর্তমানে নতুন ভবন তৈরির জায়গার খোঁজ করা হচ্ছে। জায়গা পাওয়া গেলে অল্প দিনের মধ্যেই কাঁচা স্থাপনা নির্মাণ করে হলেও পুরোপুরি পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হবে। ফুলছড়ি উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ওই স্কুলের সমস্যাগুলো উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় আলোচনা করা হয়েছে। বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী-উল সহিদ বলেন, বিষয়টি আমার নজরে রয়েছে। সামনে বরাদ্দ এলেই বিদ্যালয়ের জায়গা পাওয়াসাপেক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই এলাকায় নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কার্যক্রম চালানোর জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর সাহায্যে অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে হলেও পাঠদান শুরু করানো যাবে।