দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মাংসপেশিতে টান যা বিজ্ঞানীদের ও বিশেষজ্ঞদের ভাষায় বলা হয় মাসল পুল বা মাসল সোরনেস। আমাদের মাংসপেশিতে টান যে কোনো সময়ে ও যেকোনো অবস্থাতেই হতে পারে।
মাংসপেশিতে টান পড়া একটি সাধারণ সমস্যা এটি শরীরের বিভিন্ন অংশ মচকানোর মতোই একটি স্বাভাবিক ঘটনা যা যেকোনো সময় আমাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। নানাবিধ কারণে মাসল্পুল বা মাংসপেশিতে টান পড়ে থাকে। মাসল পুলের ফলে আমাদের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে মাংসপেশিতে টান পড়লে সেখানে টিস্যু ছেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এতে শারীরিক চাপের পাশাপাশি অতিরিক্ত ব্যথা অনুভব হতে পারে। এটি মূলত আমাদের শরীরে ল্যাকটিক এসিডের নিঃসরণ ঘটে যার ফলে অতিরিক্ত জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয় এবং আমাদের স্বাভাবিক কাজ করা সম্ভব হয় না। মাংসপেশিতে টান এর ফলে আমাদের মাংস বেশি স্বাভাবিক নড়াচড়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।
কারণঃ
আমাদের শরীরের নানাবিধ কারণে মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে। আমরা যদি প্রয়োজনের তুলনায় শারীরিক অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে থাকি তাহলে আমাদের মাসল্পুলের মত ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে। আমরা যদি দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকি এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ গ্রহণ করি সে ক্ষেত্রে শারীরিক নানা রকম ঝুঁকির মধ্যে মাসল সোরনেস অন্যতম একটি ঝুঁকি। যদি আমরা আমাদের শরীরে একটি অংশকে অনেকক্ষণ ধরে ব্যবহার করি বা উক্ত পেশিতে অনেকক্ষণ ধরে চাপ প্রয়োগ করি সেক্ষেত্রে ঐ অংশে মাসল্পুল হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
শরীরের একটি অংশকে অনেকক্ষণ ব্যবহারের পাশাপাশি পেশিতে অতিরিক্ত ভারি কাজে ব্যবহার করা হয় এর ফলে আমাদের শরীরে মাসল্পুল সংঘটিত হতে পারে। ভারী কোনো কাজ বা শারীরিক কসরত এর ক্ষেত্রে যদি ওয়ার্মআপ না করা হয় বা শরীরকে গরম না করা হয় সেক্ষেত্রে মাসল্পুল বা মাসল সোরনেস এর আশংকা বৃদ্ধি পায়। শারীরিক নানা জটিলতার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস একই ভাবে মাসল্পুল এর ক্ষেত্রে অনিয়মিত খাদ্যাভাস একটি অন্যতম কারণ। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য উপাদান প্রয়োগ করতে হবে অন্যথায় মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে।
করণীয়ঃ
মাসল্পুল বা মাসল সোরনেস খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটি সমস্যা যা সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে সব ধরণের শারীরিক কাজ বন্ধ রাখতে হবে। যদি আপনি ব্যায়াম করা অবস্থায় মাসল পুল্ এর শিকার হন তাহলে শারীরিক কসরত কেও উক্ত অবস্থা পরিসমাপ্তি দিতে হবে এবং আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে কখনো কোন ধরনের ওজন নেয়া যাবে না। পরবর্তীতে আঘাত প্রাপ্ত স্থানে চাপ প্রয়োগ না করে বরফ লাগাতে হবে। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে ২ থেকে ৩ ঘন্টা পর বরফ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে বরফ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা যাবে না এতে যন্ত্রণা পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। আঘাত প্রাপ্ত স্থানে যাতে অতিরিক্ত পরিমাণে নড়াচড়া না করা হয় সে ক্ষেত্রে সঠিক নজরদারি রাখতে হবে। নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা যেতে পারে। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানকে যতটা সম্ভব নরম স্থানে রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে বালিশ একটি উৎকৃষ্ট স্থান। পরবর্তীত আঘাতপ্রাপ্ত স্থানের অবস্থান পর্যবেক্ষন গরম পানি দেয়া বা গরম ছ্যাকা দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা অনেকে ভুলবশত মাংসপেশিতে টান পড়লে মালিশ করে থাকি যা একটি সম্পুর্ন ভুল চিকিৎসা, কোন অবস্থাতেই আঘাত প্রাপ্ত স্থানে মালিশ করা যাবে না।
মাংসপেশিতে টান পড়লে সঙ্গে সঙ্গে উপরোক্ত প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। পরবর্তীতে যদি মাংসপেশিতে অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। অনেক সময় মাসল্পুল এর ফলে জর উঠতে পারে বা আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে ফুলে যেতে পারে এর ফলে শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি মাথা ঘুরতে পারে। এসকল লক্ষণ দেখার সাথে সাথে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়া মাসল্পুল থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত ব্যায়াম করার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি গ্রহণ করতে হবে। কায়িক শ্রম বৃদ্ধি করতে হবে এবং নিয়মিত শারীরিক কসরত চালিয়ে যেতে হবে।